[প্রদীপের সঙ্গে আলাপ=প্রলাপ]
(পর্ব- ০৫৭)*
মঞ্চ-মায়াবী, জাদুশিল্পী পি.সি.সরকার জুনিয়র
(Dr.Prodip Chandra Sorcar, M.Sc.,Ph.D.)
কলকাতা, ৩০ মার্চ ২০২১। " এই আমি-টাই সেই আমি। "এবার কোনোও কিছু লেখার আগেই আমি আপনাদেরকে(১)একটা নিশ্চিন্তির খবর, এবং তার সঙ্গে, আর একটা (২)খুব সাবধানী বাণী ঘোষণা করতে চলেছি। কারণ, সেটা জানিয়ে রাখার খুব প্রয়োজনীয়তা আছে বলে পুলিশের তরফ থেকে আমায় বার বার নির্দেশ দিয়েছেন। সত্যি, কথা দুটো, খু-ব-ই দরকারী। বিশেষ করে, আমার মতো এমন কাছাখোলা লোকের পক্ষে তো বটেই, তার সঙ্গে আপনাদের মতো এমন, "চিটে-গুড়ে পইরলে পিঁ-প-ড়ে, পিপড়ে,লইরতে চইরতে পারেনা ", এক্কেবারে "কাঁঠাইলের আঠায় মাখা", প্রাণের সখা, 'মনের কাছে আসা' বন্ধুদের কাছে তো,যেন এক অলঙ্ঘনীয় ধর্মীয় নির্দেশ । সে আপনি যে ধর্মের মানুষই হোন না কেন। মানতেই হবে । সাবধানে শুনুন। আপনারা হয়তো জানেন, আমি সর্বত্র, সব কিছুতে আমার নিজের অস্তিত্বকেই খুঁজে পাই বলে দাবী করি, এবং মানুষকে, সবাইকে আমার হৃদয়ের আরোও কাছে টেনে একাত্ম হবার চেষ্টা করি। সেজন্য, কিছু মানুষ , তারা 'আমি' সেজে, নতুন একটা, সাইট, পেজ বা অ্যাকাউণ্ট খুলে অপবাদ করার বা অপরাধ-মূলক কাজ করবার চেষ্টা করছে। প্রচণ্ড গুবলেট কেস পাকাতে চাইছে। কিছু
বুঝলেন ?
আমিও প্রথম প্রথম কিছু বুঝিনি।
সেজন্যই, মোদ্দা কথাটা বলছি,..ফেস-বুকে, আমার এই অ্যাকাউণ্ট-টা ছাড়া, আর কোনোও অ্যাকাউণ্ট-ই আমার নেই । সেই আমিটা, আমিই নই !
ঘাবড়ে গেছেন, আমি নিজেই আবার নকল-টকল কেউ একজন নইতো !? এ নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। বলেই ফেলেন, আমি নাকি ‘নকল’ আমি।
বাবা,মার নামে, বৌ-এর নামে, আমাদের তিন কণ্যে, সম্রাট সিংহ, বাদশা-হাতি, মুন্না নামের ঘোড়া, সুন্দরী নামের উট, জাপানের বনসাই, টবে পোঁতা কালো বাঁশ গাছ, অ্যাকুয়ারিয়মের আরওয়ানা মাছটা ,পুকুরের কোই-সাকানা মাছ পরিবার , এক পুকুর গাপ্পি,…সব্বার দিব্যি কেটে বলছি, এই আমি টাই সেই আমি।
আরোও সহজে জোলো করে বলছি:-
(১) নিশ্চিন্তে থাকুন, আমি হচ্ছি আমিই। আমি ভবানীপুরের ওই বিখ্যাত ” আসলি লক্ষ্মী বাবুকা, আসলি সোণা চাঁদি কা আসলি দুকান ” এর মতোই আসলি পি.সি.সরকার জুনিয়র। বা, গড়িয়াহাট মোড়ের ‘আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়’-এর মতো, “আমাদের কোনো ব্রাঞ্চ নাই”-এর মতো আমারও কোনোও ব্রাঞ্চ বা ‘ক্লোন’ নাই, বলি।
সন্দেহ কাটাতে, আপনাদেরই হয়ে, বাথরুমে গিয়ে উলঙ্গ হয়ে আমি দেখেছি, আমার গায়ের কোথাও আমার নাম, কোথায় তৈরি, কবে তৈরি, সেই ফ্যাক্টরির নাম, সিরিয়াল নাম্বার, তারপর ভদ্র ভাষায়, ‘বেস্ট বিফোর’ অতো তারিখ, মানে “এক্সপায়ারি ডেট”…কিস্স্যু লেখা নেই। আমার বৌ-ও আতিপাতি করে খূঁজেও পান নি। ….আমি ঠিক যেন একখানা কড়কড়ে এক টাকার নোট ! ” I promise to pay the bearer…”, ইত্যাদি বলে শুধু মূল্যটা নয়, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সেই চেনা কথাগুলোর কিছুই লেখা নেই, কারুর সই-ও করা নেই। কিন্তু তবুও মানুষ মূল্য দেয়। আমার অবস্থাও ঠিক তাই।
নিজেকে আমি, ‘আমি’ বলে প্রমাণই করতে পারবো না। ভাগ্যিস্ আধার কার্ডে আমার ছবিটা ছিলো। ওকে আমি দেখে প্রথমে চিনতেই পারিনি। কেঁদে ফেলেছিলাম ! পুলিশ অফিসারটা আমায় চিনতেন। বললেন, “কেমন আছেন স্যার?” তখন বুঝলাম আমার অজান্তে, শরীরটা নিশ্চয়ই খারাপ হয়ে হয়ে ওই ছবিটার মতো হয়ে গেছে।” দীর্ঘশ্বাস ফেলি। হায়রে আমি! তুই কোথায় গেলি?আয় আয়, আমার সঙ্গে আয়। মেনে নে, মেনে নে।
মনে নেই ? তোর কথাই তো আমার ‘আত্মপরিচয়’ কবিতাটার শেষ অংশে লিখেছিলাম:-
“যে যাই বলুক, মেনে নিয়েছি, এই আমিটাই আমি,
তিলে তিলে গড়েছি আমায়, এমনখানা করে,
হয়তো যেমন চেয়েছিলাম, তেমন মোটেই নয়!
সব কিছু কি, সব জীবনে, মনের মতো হয় ?”
সুতরাং বুঝলি তো। মন খারাপ করতে নেই। মানিয়ে নে। মেনে নে। তবে, ওই নকল ফেসবুকের আমি-টাকে কিন্তু ক্ষমা করিস না। শুভ-অশুভর লক্ষণ আমার বাবা এবং মা কেমন যেন আগের থেকেই আঁচ করতে পারতেন। দেখে মনে হয়, ভাগ্য- লক্ষ্মী কেমন যেন হাত ধরেই তাঁদের নির্বিঘ্নে দুর্গম পথ পার করিয়ে দিলেন। বাবা -মার বিয়েতে, ঠিক শুভ দৃষ্টির সময় কোত্থেকে একটা সাদা লক্ষ্মী পেঁচা বিয়ের আসরে, দাদামশাই-এর বাড়ির ছাদে উড়ে এসে ডাকতে শুরু করে। আমরা কুসংস্কার বদ্ধ পরিবার নই। কিন্তু তবুও লোক-বিশ্বাসকে সম্মান জানিয়ে আমার দাদা-মশাই বলে ওঠেন, এ বাড়ির লক্ষ্মীও এসেছেন বিয়ে দেখতে। বাসন্তীর সঙ্গে তিনিও চললেন ও-বাড়িতে। কি অদ্ভুত কাণ্ড! তাঁর পরের ইতিহাস গায়ে কাঁটা দেয়। সরকার বাড়ির ধাপে ধাপে উন্নতি; এবং দেশ- বিভাগের ফলে ডাক্তার প্রমথ নাথ মজুমদারের মনের জোর ভেঙ্গে শুরু হয় , অবক্ষয়। এই মনের জোর বাড়ানো -কমানোর সঙ্গে "শুভ চিহ্ণ"-গুলোর কি কোনও যোগাযোগ আছে ? হ্যাঁ কিংম্বা না, কোনোটাই আমি এখানে বলছি না। এ নিয়ে আয়ত্বাভূক্ত বিজ্ঞান বা সাইকোলজির বাইরে "আগামী দিনের বিজ্ঞান (?) প্যারাসাইকোলজির রিসার্চ করছি। জবাব মিলবে আগামীতে, হয়তো 'আমি'কে ডিঙ্গিয়ে 'তোমাদের' জমানায়। তবে উত্তর একটা মিলবেই। কেন যেন মনে হয় উত্তরটা আমরা জানি কিন্তু ছাই চাপা রয়েছে।মুনি ঋষীরা জানতেন। বাবা কোনোও জায়গায় যাবার আগে শুদ্ধ উচ্চারণ করে বলতেন:-
"ধেনুর্বৎস্যপ্রযুক্তা,বৃষ,গজ,তুরগা,দক্ষিণাবর্তবহ্ণিঃ,দিব্যস্ত্রী, পূর্ণকুম্ভ, দ্বিজ, নৃপ, গণিকা,পুষ্পমালা, পতাকা,সদ্যমাংসং ঘৃতং বা, দধি, মধু, রজতং, কাঞ্চনং,শুক্লধাণ্যং, ইতি দৃষ্ট্বা,শ্রুত্বা, পঠিত্বা, ফলমেহলভতে মানবঃ গণ্তুগামা।।" বাবার পাশে দাঁড়িয়ে, শুনে শুনে আমারও মুখস্থ হয়ে গেছে। বাস্তব জগৎ থেকে উত্তোরিত হয়ে, 'অতি-বাস্তব,' মায়ার অলীক জগতে যাত্রার পূর্ব-মুহুর্তে আমি আমার বাবার শেখানো এই শ্লোক শ্রদ্ধার সঙ্গে পাঠ করেই-তো এই জীবনটা কাটালাম। এরসঙ্গে বিজ্ঞানের কতটুকু যোগ বা ঝগড়া, দরকার নেই। কিন্তু বাবা শান্তি পেতেন, আমিও পাই। এগুলো শুনে, পড়ে ,দেখে বা নিদেন পক্ষে 'মনে মনে ভেবে' কদম বাড়ালে অদ্ভুত একটা মানসিক তৃপ্তি, স্থিতি বা প্রশান্তি সৃষ্টি হয়। অনুভব করতে পারা যায়, যে কাজটা করতে চলেছি সেটা ফলপ্রশু হবে নাকি হবে না। সবই বিশ্বাসের ব্যাপার। মনের জোরের ব্যাপার। মনটাই তো আসল। বাস্তব-অবাস্তব সবই কল্পনা । মানসিক ব্যাপার। বাবা এই শ্লোকটা প্রকাশ্যেই পাঠ করতেন। আমাকে জোর করে শেখান নি। কিন্তু জানতেন যে আমি জানি। কাউকে শেখাতে বলেনও নি, গোপন রাখতেও বলেন নি। এ-রকম, অনেক, অনেক কথা বলার আছে।আমি জানাবো। এটা তর্ক বিতর্কের আসর নয়। না লাগলে, নেবেন না। আমি অ্যাত্তো ওজন বয়ে বয়ে কী করবো ? সেজন্য, ফেসবুকের চৌরাস্তার মোড়ে বাক্স ভর্তি ওগুলো রেখে যাবো।
“তবে কি আর, কিছুই নিবিনে তোরা ?
আয়না, আরো কাছে।
দ্যাখনা এসে মজার বাক্স-খানায়,
তোদের জন্য কত্তো কিছু আছে!
তোরাও নিবিনে, যেতেও দিবিনে,
তাই কি কখনো হয়?!
“এরপর কী লিখে ছিলাম, ভুলে গেছি।
খাতাটাই নেই…ভ্যানিশ!!! বডডো অভিমানী ছিলো। রাতে আমার পাশে, এক সাইডে শুয়ে থাকতো। শেষ দিন, মনে আছে, বলেছিলাম, “কি রে। আজকেও এসেছিস এখানে এই সাইডে শুতে!”
চুপচাপ ছিলো। ভেবে ছিলাম আজ না হয়, দু-লাইন, একটা কিছু লিখবো। সারাদিন তো ওকে পাত্তাই দিইনা। কবিতা যা লিখেছি, রাত্তিরে লিখেছি। কেউ চায়না বলে আর লিখি-টিখিনা। আজও লিখিনি। ঘুমিয়েই পড়েছিলাম।বেচারা দু-লাইন আশা করেছিলো। সকালে উঠে দেখি ও নেই !! ভ্যানিশ!!! পাইনি।আর পাইনি, রহস্য!!!!
বুঝলাম, ও আমার এক সাইডে শুয়েই সুই-সাইড করেছে।
বাবা-মার জীবনের বাস্তব-ম্যাজিকের একটা কাহিনী। যে সময়কার কথা বলছি, তখন বাবা মাটির জমি থেকে আকাশের মেঘ পর্য্যন্ত তাঁর উচ্চাশার কাল্পনিক মই- টাকে লাগিয়ে, কি যেন কিসের ওপর ভর করে একটূ একটু করে উপরে উঠছেন। আমি তখন কোথায় ! তিনি এসেই পাশ্চাত্যের যান্ত্রিক ম্যাজিক সম্পর্কে বললেন, এসব ইমোশন বিহীন, যান্ত্রিক চাতুরি, মোটেই মঞ্চ- মায়া-সৃষ্টি এবং বিস্তার করতে পারবে না। এগুলোর সাহায্যে মোহমায়া-সাহিত্য সৃষ্টি হয়না। জাগলিং বা সার্কাসের বাহাদূরী- চমক হচ্ছে এর শেষ পরিণতি। সেটা আর্ট নয়।
তখন বাবা এককভাবে আড়াই ঘণ্টা ধরে শো করতেন না। ম্যাজিক ছিলো বিচিত্রানুষ্ঠানের একটা অংশ। বিভিন্ন রসের প্রোগ্রাম মিশিয়ে আড়াই ঘণ্টা। তাতে বাবার জন্য বরাদ্দ হয়তো,চল্লিশ মিনিট। তৎকালীন প্রখ্যাত সিনেমার নায়ক অসিতবরণ বাবুর তবলা-তরঙ্গ ছিলো আর একটা আকর্ষণ। তাঁর জন্য বরাদ্দ পনের মিনিট। এভাবে আরো অনেক শিল্পীরাও আছেন, যে যাঁর মহিমায়।একবার ওই দলের অনেকে মিলে ট্রেনে
করে পাড়ি দিয়েছেন কোনো এক জায়গায়। সবার হাতে সেকেণ্ড ক্লাসের টিকিট। কিন্তু ট্রেনের সেকেন্ড
ক্লাসে এতো ভীড় যে কেউই নিজেকে সামলাতে পারছেন না। কিন্তু তুলনামূলক ভাবে পাশের থার্ড
ক্লাসটা ছিলো বেশ ফাঁকা।বাবা সবাইকে বললেন “লোক দেখানো সেকেণ্ড ক্লাসের কুলীন যাত্রীর বাবুগিরি করার চেয়ে পাশেই থার্ড-ক্লাসের বগীটায় যাওয়া ভালো। চলুন , থার্ড ক্লাসটায় অতো গুতোগুতি নেই। জায়গা আছে।”
কেউই বাবার কথা শুনলেন না। “সেকেন্ড ক্লাসের ইজ্জতদার টিকিট নিয়ে থার্ডক্লাসে, ওই ছোটলোকদের সঙ্গে যাবো না। আমরা আর্টিস্ট!..!”
বাবা বুঝিয়ে উঠতেই পারেন না যে বাদুড়-ঝোলা, সীটে না পেয়ে দাঁড়িয়ে,ঘেমে ঝুঁকে ,সখা-ধরো ধরো, পরিস্থিতিতে আরো হাস্যকর দৃশ্য দেখে কুলীন সহযাত্রীদের মুচকি হাসির খোরাক হওয়ার চেয়ে এমারজেন্সিতে জনতার সঙ্গে সীট শেয়ার করে যাওয়াটা অনেক শুভ ব্যাপার । কিন্তু কেউই শুনলেন না। বাবা এবং অসিতবরণ বাবু, মাত্র দুজনেই বাবার বড় ম্যাজিকের ট্রাঙ্ক-বাক্সটা টেনে হিচরে নামিয়ে ওই থার্ড ক্লাসে গুঁতিয়ে ঢোকান। ভেতরে সীটে তখন আর খালি নেই দেখে বাবা আর অসিত বরণ বাবু হাসতে হাসতে মজা করে ওই ট্রাঙ্ক-এর ওপর জোর-আসন হয়ে বসেন।বাক্সটা থাকার জন্য দরজাটাও বন্ধ করা যাচ্ছিলো না। দৃশ্যটা দেখে যাত্রীরা খুব মজা পান। ট্রেন চলতে শুরু করে। একটূ পরে মাজদিয়া স্টেশনে এসে দাঁড়ায়। দাঁড়াতেই হবে কারণ প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসা ঢাকা মেইলকে পাশ দিয়ে চলে যেতে দিতে হবে। তেমনটাই কথা।
কিন্তু এই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো জনগণ হঠাৎ খুব জোরে, হৈ হৈ চিৎকার করে ওঠেন। সর্বনাশ!!..সর্বনাশ ঘটতে চলেছে !!
ঢাকা মেইল আসছে হুইসেল বাজিয়ে খু-ব জোরে।আর তারপরেই এই ট্রেন ছাড়বার কথা। কিন্তু এ কি !!? এই একই লাইনে ছুটে আসছে ঢাকা মেইল। প্রচণ্ড গতিতে। কেউ কিছু করবার আগেই ,কান ফাটানো আওয়াজ করে মুখোমুখি সংঘর্ষে চোখের সামনেই চূড়মার হয়ে যায় দুই ট্রেনেরই একেরপর এক বগী। ওই সেকেণ্ড-ক্লাসের কেউই বাঁচেন নি। থার্ডক্লাসের অবস্থাও তাই। সবকিছু নিমেষে নরকে হলো রূপান্তরিত, টাটকা তাজা এক ধ্বংসস্তুপ। চিৎকার চেঁচামেচি কান্নার রোল, দৌড়োদৌড়ি।
কিন্তু আমার বাবার কি হলো ? বাবা আর অসিত বরণ বাবুর ? তখন কে আর কার কথা ভাবে?
পরদিনের খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছিলো সেই দুঃসংবাদ। দুর্ভাগ্যের সংবাদ। ওই সেকেণ্ড ক্লাসে উপস্থিত সব শিল্পীর সঙ্গে মারা গেছেন উদীয়মান জাদুশিল্পী পি.সি.সরকার। মুখ নাকি থেৎলে গেছে, চেনাই যাচ্ছে না।
দূঃসংবাদ হাওয়ার আগে দৌড়ায়। খবরের কাগজ পৌছুবার আগেই খবর পৌছে দিতে এগিয়ে আসেন পাড়ার চেনা, অচেনা সব বয়সেরই মানূষ। কেউ আসেন খুঁড়িয়ে, কেউ আসেন দৌড়ে, কেউ আসেন কেঁদে, কেউ আসেন, কী হয়েছিলো?প্রশ্ন নিয়ে। এর মধ্যেই ভাগ্যবান কেউ দেখতে আসেন ম্যাজিক। হ্যাঁ, ম্যাজিকই বটে। এসে দেখেন , আমাদের ‘ মা’, বড় করে সিঁদুরের টিপ আর চওড়া করে সিথিতে সিঁদুর লাগিয়ে আপন মনে ঘরের কাজ করছেন। আর ওপাশে ছিলেন? ওপাশে বাবা নিশ্চিন্তে বসে চা খাচ্ছেন, আর খবরের কাগজে তাঁর “মৃত্যু-সংবাদ” টা পড়ছেন।
আসলে ব্যাপারটা হলো, ওই থার্ড-ক্লাসে যাওয়াটাই হলো রক্ষা-কবচ। তাঁরা দুজন বাক্সের ওপর জোড়-আসন হয়ে বসেছিলেন। দরজা ছিলো খোলা। ওই সজোরে মুখোমুখী ধাক্কার চোটে বাক্সটা যায় ছিটকে বেড়িয়ে, ওপরে বসা দুজন আরোহীকে নিয়ে। ঠিক যেন স্কেট বোর্ডে চড়ে প্ল্যাটফর্মে চ-ড়-ড়-র করে গড়িয়ে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যাওয়া আর থামা। কিচ্ছু হয়নি। অবিশ্বাস্য! তার পর বাক্স নিয়ে বাসের মাথায় বসে, অনেক পাল্টাপাল্টির এবং লম্বা সফরের পর এই একটু আগে বাড়ি ফেরা। রাতে ঘুম নেই। এখন সব কিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে। ম্যাজিক! জীবন-ই ম্যাজিক! মেনে নাও, মানিয়ে নাও হচ্ছে এর মূলমন্ত্র। 'নাচায় পুতুল যথা, দক্ষ বাজীকরে। " দক্ষ বাজীকরের হাতে ছেড়ে দাও" জীবন।
Be First to Comment