Press "Enter" to skip to content

ভগিনী নিবেদিতা প্রথম ভারতে আসেন ১৮৯৮ সালের জানুয়ারি মাসে। কলকাতা জাহাজ বন্দরে সেদিন স্বামী বিবেকানন্দ নিজে এসে তাঁকে স্বাগত জানান…….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ ভগিনী নিবেদিতা

বাবলু ভট্টাচার্য : কখনও কেউ ক্লান্ত মনে একবারটি ডেকে উঠবেন— নিবেদিতা! নিবেদিতা! কারণ এই ডাকা অমোঘ। সর্বজনীন। এই ডাকের সাজের আলো পৃথিবীর প্রতিটি ঘরের কোণে পৌঁছে জানান দেবে, শিক্ষা শুধুমাত্র রুজি-রোজগারের সন্ধানই দেয় না, বোধ তৈরি করে, বেঁচে থাকতে শেখায়। এই একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের কি একবারও ভগিনী নিবেদিতার মতো কোনো প্রয়োজনীয় মানুষের কথা মনে হয় না? মনে হয় না, এই অস্থির সময়ে একবার যদি অমন মহিয়সীকে পাওয়া যেত! নিবেদিতা— শুভ্র, পবিত্র, উজ্জ্বল এক নারী। যিনি অন্য নারীমনের আসল শিকড়টি অনুভব করতে পেরেছিলেন। সেই মিস মার্গারেট নোবেল, পরবর্তীকালের ভগিনী নিবেদিতা প্রথম ভারতে আসেন ১৮৯৮ সালের জানুয়ারি মাসে। কলকাতা জাহাজ বন্দরে সেদিন স্বামী বিবেকানন্দ নিজে এসে তাঁকে স্বাগত জানান। মার্গারেটের কাছে একেবারে নতুন জায়গা ছিল কলকাতা। কাউকে চেনেন না, কাউকে জানেন না। একমাত্র স্বামীজি ছাড়া। পাশাপাশি মার্গারেট পেলেন আরেকজন স্বহৃদয় ব্যক্তির সন্ধান। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সহধর্মিণী সারদাদেবী। সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে ফেলে আসা ছোটো মা-র অভাব পূরণ হয়ে গিয়েছিল সারদাদেবীকে কাছে পেয়ে।স্বামীজি-সারদাদেবীর সান্নিধ্যে এসে মার্গারেট বারবার নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারছিলেন। বিবেকানন্দ তাঁকে দীক্ষা দিয়ে নতুন নাম দিলেন— নিবেদিতা। বিশ্ব-পরিবারের কাছে তখন থেকেই বিদেশি মার্গারেট হয়ে উঠলেন এক্কেবারে খাঁটি বাংলার সিস্টার বা ভগিনী নিবেদিতা। দায়িত্ব পড়ল মেয়েদের শিক্ষিত করা।শিক্ষা ছাড়া যে কোনো জাতি, ধর্ম, বর্ণ এগোতে পারে না, তা অনুভব করতে পেরেছিলেন স্বামীজি। সেইসঙ্গে বলেছিলেন, পুরুষদের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে মহিলারাও। স্বামীজি তাই নিজেই বলেছেন, ‘যেরকম শিক্ষা চলিতেছে, সেরকম নহে। সত্যিকারের কিছু শেখা চাই। খালি বই পড়া শিক্ষা হইলে চলিবে না। যাহাতে চরিত্র গঠিত হয়, নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াইতে পারে, এইরকম শিক্ষা চাই।’

বিবেকানন্দের কাছে আদেশ পেয়ে কলকাতার বাগবাজার এলাকায় মেয়েদের জন্য একটি বিদ্যালয় স্থাপন করলেন নিবেদিতা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে মেয়েদের সংগ্রহ করতেন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবার মহৎ উদ্দেশে। শুধুমাত্র পুঁথিগত শিক্ষা নয়, সেলাই-ঘরকন্নার কাজ থেকে গান সবকিছুই শেখাতেন। বিদ্যালয় থেকে নড়তেন না নিবেদিতা। নারীশিক্ষার এই মহৎ কাজে উৎসাহিত হয়ে সেসময় বিবেকানন্দের আরেক শিষ্যাও যুক্ত হয়েছিলেন— সিস্টার ক্রিস্টিন। নিবেদিতার নিজের হাতে গড়া সেই বিদ্যালয়টিই আজ বহু ঐতিহ্যে ভরা নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয় নামে পরিচিত।চারদিক যখন উনিশ শতকীয় মেজাজে ভরপুর, দেশের বোধ ও আদর্শ জীবন গঠনের শিক্ষা যখন ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে, এমন সময় নিবেদিতার মতো একজন মানুষকে খুব দরকার মনে হয়। তাই আজও তিনি এবং তাঁর কাজ সমানভাবে প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।

মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল বা ভগিনি নিবেদিতা ১৮৬৭ সালের আজকের দিনে (২৮ অক্টোবর) উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডানগ্যানন শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.