Press "Enter" to skip to content

ভগবান বিষ্ণুর যুগাবতার ছিলেন রামকৃষ্ণ। নরেন্দ্রনাথ দত্ত থেকে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার পিছনে রামকৃষ্ণের অবদান অনস্বীকার্য…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ রামকৃষ্ণ পরমহংসস দেব

বাবলু ভট্টাচার্য : ধর্ম, জ্ঞান, বেদান্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। অনেক বইতেই তাকে ভগবান বিষ্ণুর যুগাবতার হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। তার সান্নিধ্য পেয়েই আধ্যাত্মিক মার্গে এগিয়ে যান স্বামী বিবেকানন্দ।

ভগবান বিষ্ণুর যুগাবতার ছিলেন রামকৃষ্ণ। রামকৃষ্ণের বাবা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। বাবা জানতে পারেন, স্বয়ং বিষ্ণু তাদের সন্তান হয়ে জন্ম নিচ্ছেন। এর পর মা চন্দ্রমণি দেবীর গর্ভে জন্ম নেন রামকৃষ্ণ।

তখনও তিনি রামকৃষ্ণ হয়ে ওঠেননি। ছোট্ট গদাধরের তখন ছয় বছর বয়স। একের পর আধ্যাত্মিক অনুভূতির সংস্পর্শ পান তিনি। গদাই নামে পরিচিত রামকৃষ্ণ গ্রামবাসীদের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। মাটির প্রতিমা নির্মাণ করে তাদের পুজো করতেন।

প্রথাগত শিক্ষায় কোনও আগ্রহ ছিল না তার। অল্প বয়সেই পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবতে জ্ঞান অর্জন করেন। একবার ধানক্ষেতের পথে হাঁটতে হাঁটতে আকাশে কালো মেঘের মধ্যে সাদা বলাকার সৌন্দর্য দেখে অচৈতন্য হয়ে যান তিনি। বার বার একই ঘটনা ঘটতে থাকে তার সঙ্গে।

১৮৫৫ সাল। কলকাতার এক ধনী জমিদার পত্নী রানি রাসমণি দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানেই পৌরহিত্য শুরু করেন রামকৃষ্ণ। নারী প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে গদাধরের সেই পুজো ঘিরে সেই সময় নানা বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। এখান থেকেই একরকম ঈশ্বর সাধনার অনন্ত পথে হাঁটতে শুরু করেন তিনি। কালীর ভক্তিতে ধীরে ধীরে বিভোর হয়ে ওঠেন রামকৃষ্ণ।

এক সময় একটি খবর চাউর হয়ে য়ায়। সবাই বলতে থাকেন, দক্ষিণেশ্বরে অতিরিক্ত সাধনার জেরে সংসার থেকে অন্য পথে এগিয়ে চলেছেন শ্রীরামকৃষ্ণ। ফলে মা ও ভাই রামেশ্বর তার বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

জয়রামবাটী গ্রামের রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে সারদা’র সঙ্গে ১৮৫৯ সালে শাস্ত্রমতে বিয়ে হয় রামকৃষ্ণের। তবে বরাবর নিজেদের মধ্যে আত্মসংযম বজায় রেখেছিলেন দু’জনে। রামকৃষ্ণের মতো সারদা দেবীও আধ্যাত্মিক পথে হাঁটতে শুরু করেন। সবার মা হয়ে ওঠেন তিনি। শোনা যায়, সারদা দেবীকে দিব্য মাতৃজ্ঞানে পুজো করতেন রামকৃষ্ণ।

তরুণ নরেনকে দিশা দেখান তিনি। নরেন্দ্রনাথ দত্ত থেকে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার পিছনে রামকৃষ্ণের অবদান অনস্বীকার্য। প্রথমের দিকে ঈশ্বরে বিশ্বাস না করলেও ধীরে ধীরে রামকৃষ্ণের স্মরণে আসতে থাকেন বিবেকানন্দ। নরেনের বাবার মৃত্যু, দারিদ্রতা, পরিবার, সমাজের নানা সমস্যা তাকে আধ্যাত্মিক পথে নিয়ে যায়। আর সেই পথের কাণ্ডারী হয়ে ওঠেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।

তার কথায়, কালী, খ্রীস্ট, আল্লা সবই এক। পরমধর্মসহিষ্ণু ছিলেন তিনি। সমগ্র জীবনে সকল ধর্ম সম্পর্কে গভীরে অধ্যয়ন করেন। তার পর রামকৃষ্ণের মধ্যে একটি উপলব্ধি হয়। ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম-সহ বিভিন্ন ধর্মমত অভ্যাস করার পর তিনি বুঝতে পারেন, সকল মতই একই ঈশ্বরের পথে মানুষকে চালিত করে। ঈশ্বর এক। গন্তব্য এক। শুধু যত মত, তত পথ। এই বাণী তার ভক্তদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেন তিনি।

বোধহয় সেই জন্যই সকল জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে আসতে শুরু করেন। ব্রাহ্ম, খ্রিস্টান, মুসলমান থেকে শুরু করে সকলে ঠাকুর রামকৃষ্ণের সান্নিধ্য লাভ করেন।

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৮৮৬ সালের ১৬ আগস্ট কাশীপুরে বাগান বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ১৮৩৬ সালের আজকের দিনে (১৮ ফেব্রুয়ারি) হুগলি জেলার কামারপুকুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »
More from InternationalMore posts in International »
More from SocialMore posts in Social »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.