ইন্দ্রজিৎ আইচ : কলকাতা, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১।
ব্যান্ডেল আরোহী নাট্যদল ৩৪ বছরে পা দিয়েছে সম্প্রতি। সেই উপলক্ষে সম্প্রতি কলকাতার শিশির মঞ্চে মঞ্চস্থ হলো তাদের নাটক ” হলুদ রঙ এর টিশার্ট”। প্রয়াত নাট্যকার অমিতাভ চক্রবর্তী র লেখা এই নাটকের সময়সীমা মাত্র এক ঘন্টা।
নাটকের গল্পটি শুরু হয় একটা সরকারি অফিসে বড় বাবুর ঘরে। গল্পের প্রধান চরিত্রে আছেন সুদর্শন মুখোপাধ্যায়। তিনি একজন সরকারি অফিসার। খামখেয়ালি, খুব মুডি। হঠাৎ তিনি একদিন আবিষ্কার করেন হলুদ রঙ এর টি শার্টটা হারিয়ে গেছে। তার বাতানকুল ঘর, ফোন, ফ্যাক্স, ইমেল, কমার্শিয়াল ল, স্টাটিস্টিক্স এইসব নিয়ে তার সারাদিনটা কাটে। এই অফিসের অনিমেষ, চাচা, রজতশুভ্র, নন্দীবাবু, বেলা, অরিন্দম সবাই সুদর্শন বাবুকে খুব শ্রদ্ধা সন্মান করেন। কিন্তু কদিন ধরে সুদর্শন বাবুর ব্যবহার টা কিরকম যেন লাগছিলো সকলের। তার প্রতিটা কাজে অমনোযোগিতা, জয়েন্ট কমিশনারের ফোন ধরে ভুলভাল বকা, বা ফোন না ধরা, দাঁড়িয়ে নিজের উচ্চতা মাপা, তার কথা বার্তায় রবীন্দ্রসংগীত আবার পূর্ণেন্দু পত্রির কবিতার লাইন আবার অফিস কলিক বেলা কে ডেকে অপ্রাসঙ্গিক ও অপমানজনক সব কথাবার্তা বলতে থাকেন। সবাই রেগে যায় তার ওপর। সবার প্রশ্ন একটাই “সুদর্শন” বাবুর হটাৎ কি হলো….উনি এরকম কেন করছেন? তার একমাত্র নাতি আমেরিকায়, নিজের স্ত্রী নিজের মতন থাকেন, নিজের ব্যক্তিগত কথা অন্যজনকে বলতে গিয়ে তার সেই “হলুদ রঙের টি শার্ট “এর কথা জিজ্ঞেস করে। অফিসের ঘর পরিষ্কার যে করে সেই চাচা র সাথে অফিস ছুটির পরে অনুরোধের আসরের মনমাতানো দেহাতি গানের সুর, আড্ডা, ব্যক্তি জীবনের আলোচনার প্রসঙ্গ, জীবন দর্শন, সংস্কৃতিবোধ, অন্যের কাছে নিজেকে ছোটো করার চিন্তা সব মিলিয়ে সুদর্শন বাবুকে নিয়ে রহস্যময় হয়ে ওঠে অফিসের পরিবেশ। তবে কি সুদর্শন মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে নাকি প্রতিযোগিতা মুখীনতা থেকে নিজেকে দূরে রাখার কৌশল। এমনতর বেশ কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি সুদর্শন নিরুত্তর থাকে। আপাত সারোল্লের হাসির নেপথ্যে সুদর্শন ক্রমশ অচেনা অজানা দ্বীপের বাসিন্দা হয়ে ওঠে। অথচ সেই অচেনা অজানা ভয়, সমীহ একাকার হয়ে যাওয়া সুদর্শন অন্য এক জগতের মানুষ হয়ে ওঠে। বুঝতে পারেন কে তাকে ভালোবাসে, কে তার শত্রু। যাতে মাতাল তালে ঠিকের মতন দাবার শেষ চাল টা তিনিই দেন, জয়েন্ট কমিশনার ফোন করে অফিসিয়াল কিছু পেপার চেয়ে পাঠায়। এই দায়িত্বে থাকা বেলা তার ফাইনাল স্টাটিস্টিক্স এ কিছু ভুলভাল করে।
আর সুদর্শন বাবুকে গুরুত্ব না দিয়ে তাতে ফাইনাল সই করে দেয় নন্দীবাবু। জয়েন্ট কমিশনার এর কাছে পুরো ভুল রিপোর্ট চলে যায়। সুদর্শন বাবু খুব মজা পায় তাদের চালাকিতে।
উপর মহলের কাছে নন্দীবাবু আর নিজেকে জাহির করতে পারে না যে নিজেই সবটা পারেন, এইসব দেখতে দেখতে সুদর্শন বাবু জীবনটাকে নানা ভাবে উপভোগ করেন যৌবনের হলুদ রঙ এর টিশার্ট এর মতো।
এক কথায় দারুন মজাদার নাটক। যার মধ্যে নিহিত আছে মনের নানা দুঃখ- যন্ত্রনা, জীবনের নানা ভালো মন্দ। সবমিলিয়ে এক ধারার নাটক হলুদ রং এর টিশার্ট। আলো ও শব্দ এবং শব্দ প্রেক্ষাপন করেছেন শঙ্কর মাঝি, নগেন দত্ত, শুভেন্দু চ্যাটার্জী। বিশ্বনাথ নাথ এর মঞ্চ মানানসই। নির্দেশক রঞ্জন রায়। এবার আসি অভিনয়ে। সুদর্শন এর ভূমিকায় রঞ্জন রায় দারুন অভিনয় করেছেন। পাশাপাশি অনিমেষ (সুমিত কুন্ডু), চাচা (সাত্যকি ভট্টাচার্য), বেলা (সুস্মিতা ভট্টাচার্য), রজতশুভ্র (সুব্রত রায়), নন্দিবাবু (রঞ্জিত নিয়োগী) ,অরিন্দম (স্বপন চক্রবর্তী) অভিনয় নজর কাড়ে অন্যান্য চরিত্রে ভালো লাগে অর্জুন চক্রবর্তী, অঞ্জনা রায়, সুমন, স্বরূপ, পরীক্ষিত দের। সব মিলিয়ে সকলের দেখার মতন নাটক ব্যান্ডেল আরোহীর নাটক “হলুদ রং এর টি শার্ট। নির্দেশক রঞ্জন রায় এর পরিচালনায় এই নাটক টি কলকাতায় বহুদিন বাদে মঞ্চস্থ হলো।
Be First to Comment