শু ভ জ ন্ম দি ন বু দ্ধ দে ব ভ ট্টা চা র্য
বাবলু ভট্টাচার্য : অনেকেই বিশ্বাস করেন, সাদা চুলের ওই মানুষটা যদি একবার সুস্থ শরীরে ফিরে এসে হাত নাড়েন কর্মীদের উদ্দেশে, ভোল বদলে যাবে দলের। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কি আর পারবেন মূল স্রোতের রাজনীতিতে ফিরে আসতে?
এক দশকেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সক্রিয় রাজনীতি থেকে শত হস্ত দূরে। শেষ কিছু বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, দেশ এবং রাজ্য উভয়েই তাঁর দল অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে ক্ষমতার অলিন্দে। তবে ব্র্যান্ড বুদ্ধ আজও অটুট! আজ জন্মদিনে রাজনৈতিক আঙ্গিকে ফিরে দেখা পশ্চিমবঙ্গের সপ্তম মুখ্যমন্ত্রীকে।
প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পাশ করে সরাসরি জড়িয়ে পড়া তৎকালীন সিপিআই এর সঙ্গে খাদ্য আন্দোলন দিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। ১৯৬৬ সালে সিপিএম দলে যোগদান নিঃসন্দেহে তাঁর জীবনে একটি বড় ঘটনা।
১৯৬৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের দ্য ডেমোক্রেটিক ইউথ ফেডারেশনের সেক্রেটারি হিসেবে নির্বাচিত হওয়া তাঁর প্রথম বড় দায়িত্ব বলা যেতেই পারে।
এরপর একে একে ১৯৭১ সালে সিপিএম পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য হওয়া, তারপর ১৯৭৭ সালের বামফ্রন্টের ঐতিহাসিক জয়ের নির্বাচনে উত্তর কলকাতা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া— রাজনৈতিক উত্তরণ ছিল সাফল্যে মোড়া।
১৯৮২ সালে কংগ্রেসের পল্লবকান্তি ঘোষের কাছে হার আর ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার বছরে মণীশ গুপ্তের কাছে হার— এই দুই বছর বাদ দিলে, মাঝখানে দীর্ঘ ২৪ বছর যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
বামফ্রন্টের ক্যাবিনেটে ১৯৮৭-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী এবং ১৯৯৬-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ১৯৯৯ সালে ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে নির্বাচিত করা হয়। ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজ্য জুড়ে শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের দিকে নজর দেন তিনি। নতুন আইটি নীতি আনয়নের পাশাপাশি রাজ্যে প্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়ন ঘটান।
২০০৬ সালে তাঁর জনপ্রিয়তা ও বহুল আলোচিত ব্র্যান্ড বুদ্ধের ভরসায় বামফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়ী হয়। ২০১১ সালের নির্বাচনে দীর্ঘ ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়।
আর কি মঞ্চে উঠে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত আপাতমস্তক ভদ্রলোক আর বলতে পারবেন, ‘আমাদের লড়তেই হবে। লড়াই ছাড়া পথ নেই।’ সত্যিই এখন লড়াই করছেন বুদ্ধদেব। নিজের শরীরের সঙ্গে লড়াই। সেই লড়াইতে তিনি জিতে ফিরবেন, আশায় বুক বেঁধে লাখ লাখ মানুষ।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ১৯৪৪ সালের আজকের দিনে (১ মার্চ) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment