জন্মদিনে স্মরণঃ ব্রু স লি
বাবলু ভট্টাচার্য : বয়স যখন বারো তখন রাস্তার বখাটে ছেলেদের হাতে তাকে একবার মার খেতে হয়েছিল। এই ঘটনাটিই হয়তো তার জীবনকে পালটে দেয়। এরপরই তিনি মার্শাল আর্টে ঝুঁকে পড়েন। নাম তার ব্রুস লি।
বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন বিংশ শতাব্দীর প্রভাবশালী একশ জন মানুষের একটি তালিকা করেছিল। ব্রুস লি ছিলেন তাদের একজন। তিনি শুধু একজন মার্শাল আর্ট শিল্পী কিংবা অভিনেতা নন, তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক, একজন শিক্ষক, একজন আর্টিস্ট, একজন ফিল্মমেকার। তাকে ব্যক্তিগতভাবে রোল মডেল মানতেন অগণিত মানুষ। তার স্টাইল ও কাজকর্ম অনুসরণ করতেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। অল্প বয়সের রহস্যজনক মৃত্যুতে জীবন অবসান হলেও এখনো আছেন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।
ব্রুস লি অসাধারণ নাচতে পারতেন। ১৯৫৮ সালে তিনি একটি নাচের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নও হন! তখন মাত্র হাই স্কুলে পড়তেন তিনি। অভিনয়, মার্শাল আর্টের ট্রেইনিংসহ দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের বাইরে নাচের অনুশীলনের জন্য আলাদা সময় বের করতেন তিনি।
‘বাতাসের চেয়ে বেশি গতিতে ফাইট করার ক্ষমতা
চোখের পলকে হাওয়া হয়ে গেলো’- আমরা এই বাক্যটি যেভাবে ব্যবহার করি, একইভাবে ব্রুস মার্শাল আর্ট ফাইটিংয়ের সময়ে তেমনভাবেই ফাইট করেন।
এত ক্ষীপ্র গতিতে তিনি হাত চালাতেন যে প্রতিপক্ষ আঘাত প্রতিহত করারও সময় পেত না! ১৯৬২ সালেই একটি ফাইটে তিনি মাত্র ১১ সেকেন্ডে তার প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেন। এই ১১ সেকেন্ডে তিনি ১৫ টা ঘুষি আর একটা কিক করেছিলেন বেচারাকে।
তার আসল নাম ছিল লি-জান-ফান। কিন্তু তার পরিবার তাকে ডাকতো ম সি তুং যার অর্থ ‘যে কখনো স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না’।
ব্রুস লি জন্মেছিলেন ড্রাগন বর্ষে। এটি প্রতি বারো বছর অন্তর অন্তর আসে। চীনাদের রাশিচক্রে যারা ড্রাগন বর্ষে জন্মায় তাদেরকে খুব ভাগ্যবান ও ক্ষমতার অধিকারী মনে করা হয়। যেহেতু সে ড্রাগন বর্ষে জন্মেছিলেন, একারনে ব্রুস লিকে ছোট্ট ড্রাগন বলেও ডাকা হতো।
অনেকের ধারণা ব্রুস লি ড্রাগসে আসক্ত ছিলেন। অথচ, তিনি কখনো ধূমপান করেননি, এমনকি এলকোহল জাতীয় পানীয় থেকে দূরে থাকতেন সবসময়। যদিও মার্শাল আর্ট ও সিনেমার স্ট্যান্ট করতে গিয়ে জীবনে অসংখ্যবার তিনি ইনজুরিতে পড়েছেন। যার কিছু কিছু এমনই মারাত্মক ছিল যে ক্যারিয়ার নষ্ট হওয়ারও পরিস্থিতি হয়েছিল। তাই ইনজুরিতে পড়ার কারনে তাকে প্রচুর পেইনকিলার নিতে হয়েছে।
মার্শাল আর্ট ও অভিনয়ের বাইরে ব্রুস লি আরেকটু কাজে খুব সময় দিতেন। সেটি হচ্ছে ফিলোসফি পড়া ও লেখা। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে তার পড়ার বিষয়ও ছিল দার্শনিকতা। অনেকে বিভিন্ন বিষয়ে তার কাছে মতামত জানতে চাইতো, এবং তার কথাকে গুরুত্বও দিতো খুব।
‘দ্য ওয়ারিয়র উইথইন’ নামে ব্রুস লি’র দার্শনিকতার ইতিবৃত্ত নিয়ে একটি অসাধারণ বইও আছে, যেখানে এই বিশ্বকে আরো গভীরভাবে বোঝা ও একটি সফল জীবন গড়ার জন্যে কী করা উচিৎ সে সম্পর্কে বলা হয়েছে।
ব্রুস লির নানান দিকে আগ্রহ ছিল। অবসরে তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। তাছাড়া কবিতাও লিখতেন তিনি! তার কবিতা সংকলিত হয়েছে ‘The Tao of JeetKune Do’-এই বইটিতে। মার্শাল আর্ট আর ফাইটিংয়ের দৃশ্য বেশি আঁকতে পছন্দ করতেন তিনি। তার নিজের সংগ্রহের ২০০০+ বই নিয়ে একটি লাইব্রেরিও আছে। নতুন কিছু পড়তে তার খুবই ভালো লাগতো।
ব্রুস লি যখন খুব ছোট, তখন থেকেই তিনি তার মাকে বলতেন, তিনি খুব বড় সিনেমাতারকা হবেন! বয়স যখন ছয়, তখন “বার্থ অব ম্যানকাইন্ড” নামে হংকংয়ের একটি ফিল্মে কাজ করেন। যেখানে তার চরিত্রটি ছিল পথশিশুর, যে কিনা মারামারি করে।
মাত্র ১৮ বছর বয়স হতে না হতেই ব্রুস লিকে ২০টি সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রে দেখা যায়। ছোট থেকেই বিভিন্ন সিনেমায় শিশু চরিত্রে অভিনয়ের জন্যেই হয়তো ক্যামেরায় সামনে সহজাত সাবলীল অভিনয় করতেন ব্রুস লি।
ব্রুস লি’র মৃত্যু নিয়ে এখনো গুঞ্জন চলে। কেউ বলে বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। আবার কারো ধারণা তার মৃত্যুর সাথে পরিবারের অভিশাপ জড়িত। কেউই ঠিক জানে না কেন হুট করে এমন সুস্বাস্থ্যবান একজন মানুষ চোখের পলকে মারা গেলো।
হংকংয়ের কাউলুন টং এর বাড়িতে মারা যাওয়ার আগে তিনি বলেছিলেন তার মাথা ব্যথা। এ জন্য ঔষুধ খেয়েছেন। এরপরই রহস্যজনকভাবে মাত্র ৩২ বছর বয়সেই মানুষটার মৃত্যু হয়।
ব্রুস লি ১৯৪০ সালের আজকের দিনে (২৭ নভে) যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment