Press "Enter" to skip to content

ব্রুস লি’র ফ্লাইং কিক, হাতের মুভমেন্ট ছিল চোখের পলক ফেলার চেয়েও দ্রুত, যা শুধু তার ভক্তদেরই নয়, আপামর জনসাধারণকেও মুগ্ধ করতো……।

Spread the love

বাবলু ভট্টাচার্য : অসামান্য প্রতিভাধর এক ব্যক্তি ছিলেন তিনি। সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে তার কোটি কোটি ভক্ত। তাদের কাছে তিনি ‘কুংফুর এক ও অদ্বিতীয় সম্রাট’। মার্শাল আর্টকে তিনি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিংশ শতাব্দীর প্রভাবশালী ব্যক্তিটির নাম ব্রুস লি।

ব্রুস লি’র ফ্লাইং কিক, হাতের মুভমেন্ট ছিল চোখের পলক ফেলার চেয়েও দ্রুত, যা শুধু তার ভক্তদেরই নয়, আপামর জনসাধারণকেও মুগ্ধ করতো। অসাধারণ ছিল তার ফিটনেস। সতেজতা এবং তারুণ্যের প্রতীক ছিলেন তিনি।

মার্শাল আর্ট আর অভিনয় ছাড়াও নানা বিষয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল তার। অবসরে আঁকতেন ছবি। কবিতা লেখার প্রতিও ছিল ঝোঁক। তার একটি কবিতা সংকলনও বের হয়েছিল। সারা জীবন এক মনে নিজের কাজটি করে গেছেন। তাকে পর্দায় দেখা ছিল ভক্তদের কাছে চরম আনন্দময় এক মুহূর্ত।

সত্তর দশকের শুরুর দিকে অভিনয়ের জগতে তার পথচলার সূচনা ঘটে। কিন্তু মাত্র দু’বছরের মধ্যে অসাধারণ কলাকৌশল আর অভিনয় দক্ষতায় বিশ্বের স্বনামধন্য তারকাদের সারিতে নিজের নামটি অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন ব্রুস লি। শুধু কি তাই? তিনিই এশিয়ার প্রথম অ্যাকশন হিরো, যিনি পারিশ্রমিক পেতেন মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

অনেকেই ব্রুস লিকে চীনা মনে করলেও তিনি কিংবা তার পরিবার কখনই চীনের অধিবাসী ছিলেন না। লি জন্মেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে, ১৯৪০ সালের ২৭ নভেম্বর। পিতা লি হুই চোয়েন ছিলেন একজন জনপ্রিয় পেশাদার নাট্যশিল্পী। হংকংয়ের অধিবাসী হুই চোয়েন বসবাসের উদ্দেশ্যে সপরিবারে আমেরিকায় পা রাখেন। কিন্তু ব্রুসের যখন মাত্র এক বছর বয়স, তখন পরিবারের সকলে আবার চলে আসেন হংকং-এ।

ছোটবেলা থেকেই ব্রুস লি মারামারিতে ছিলেন ওস্তাদ। সমবয়সী বন্ধুদের নিয়ে মারামারি করার জন্য গড়ে তোলেন একটি দল। কিন্তু হালকা পাতলা ব্রুস লি মারাামারিতে সবসময় পেরে উঠতেন না। আর তাই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য তিনি শেখা শুরু করেন মার্শাল আর্ট।

কুংফুর পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই তার অভিনয়ের নেশা জন্মায়। বাবার সাথে স্টুডিওতে যেতেন। স্টুডিওতে শিল্পীদের অভিনয় দেখে তার অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। মাত্র ছ’বছর বয়সেই ব্রুস লি ‘দ্য বিগিনিং অফ অ্যা বয়’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান।

হংকং-এর সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার স্কুলে পড়াশোনার সময় ব্রুস লি কুংফুর পাশাপাশি উইং-চানও শিখতে শুরু করেন। এটি চাইনিজদের আত্মরক্ষার অতি উন্নত এক কৌশল। এর জন্য দরকার খুব কঠিন অনুশীলন। ধীরে ধীরে লি এ শিল্পেও পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

অনেক সমালোচকই বলতেন, ব্রুস লি’র মারামারিতে নাচের স্বাদ পাওয়া যায়। হবেই না বা কেন? নাচ ছিল ব্রুসের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি বিষয়। জনপ্রিয় প্রায় সব রকম নাচেই তার দক্ষতার প্রতিফলন দেখা যেত। ল্যাটিন আমেরিকার নাচ ‘চা-চা’-তে তিনি ছিলেন পারদর্শী। শুধু তা-ই নয়, এই নাচে তিনি হংকং-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন।

মাত্র ১৮ বছর বয়সেই বিশটিরও বেশি হংকং-এর চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ফেলেছিলেন ব্রুস ‍লি। দর্শকদের কাছে তিনি ‘লি সিউ লুং’ বা ‘খুদে ড্রাগন’ হিসেবে পরিচিতি পান। ধীরে ধীরে যখন তার জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে, সেই সময় এশিয়ার প্রভাবশালী প্রযোজক রান লিকে তার ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব দেন।

মার্শাল আর্ট-এ দক্ষতা বাড়ানোর সাথে সাথে কুংফুতে নিজস্ব কিছু স্টাইল আনেন লি। সেই কৌশলের তিনি নাম দেন ‘জিৎ কুনে দো’ অর্থাৎ ঘুষির সাহায্যে শত্রুকে পরাজিত করা। ব্রুসের এই নতুন কৌশল ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। হলিউডের তারকা অভিনেতা স্টিভ ম্যাককুইন এবং জেমস কোবার্ন ছিলেন তার ছাত্র।

তিনি প্রযোজক রেমন্ড চো‘র সঙ্গে জুটি গড়ে তোলেন। লিকে নিয়ে রেমন্ড ‘দ্য বিগ বস’ নামে একটি কুংফু ছবি তৈরি করেন। মুগ্ধ দর্শকরা ব্রুসের মারামারি দেখতে দেখতে এতটাই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠছিল যে লাফিয়ে কেউ কেউ সিটের উপরেই উঠে পড়েছিল!

‘দ্য বিগ বস’-এর মুক্তির পরে ব্রুস লি’র ‘দ্য চাইনিজ কানেকশান’ মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে এবং ‘রিটার্ন অফ দ্য ড্রাগন’ ১৯৭৩ সালে। এসব ছবি বক্স অফিসে এতটাই হিট হয় যে ব্রুস লি’র জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়তে থাকে। তিনি প্রথম সারির এশিয়ান ফিল্ম স্টার হয়ে উঠেন। সেই সাথে ইউরোপ এবং আমেরিকায়ও তার ভক্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে।

‘রিটার্ন অফ দ্য ড্রাগন’ চলচ্চিত্রটি অনেকেরই দেখা। এ ছবিতে আমেরিকান কারাতে চ্যাম্পিয়ান চাক নোরিস অভিনয় করেছিলেন। ছবিটিতে রোমান কলোসিয়ামে ব্রুস এবং নোরিসের একটি ফাইটিং দৃশ্যকে ক্লাসিক সিন হিসেবে অভিহিত করা হয়।

ব্রুসের চতুর্থ ছবি ‘রিটার্ন অফ দ্য ড্রাগন’ মুক্তি পায় ‘এন্টার দ্য ড্রাগন’ এর পরে। তবে এন্টার দ্য ড্রাগন ছবিটির মুক্তি দেখে যেতে পারেন নি লি।

তখন তার বয়স মাত্র বত্রিশ, প্রচুর পরিশ্রম করে হংকং এ ‘গেম অফ ডেথ’ ছবিটি করেছিলেন এবং সে সময়ই করুণ ঘটনাটি ঘটে।

১৯৭৩ সালের  (২০ জুলাই) হংকং-এর একটি অ্যাপার্টমেন্টে ব্রুস লি’র অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়।

More from EntertainmentMore posts in Entertainment »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.