Press "Enter" to skip to content

ব্যাসদেব ও মহাভারত….. যা নেই ভারতে তাই আছে মহাভারতে….।

Spread the love

ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় : কলকাতা, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫।  ঋষি ব্যাসদেব হলেন বশিষ্ঠের প্রপৌত্র , শক্তির পৌত্র , পরাশর ও সত্যবতীর ছেলে ৷ শুকদেবের বাবা ৷ যমুনা নদীতে নৌকার মধ্যে পরাশর মুনি সত্যবতীর সাথে মিলিত হলে যমুনার দ্বীপে ব্যাসদেবের জন্ম হয় ৷দ্বীপে জন্মেছিলেন বলে তিনি দ্বৈপায়ন আর গায়ের রং কালো ছিল বলে পুরো নাম হয় কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ৷ আবার বদরিকাশ্রমে তপস্যা করতেন বলে আরেক নাম হলো বাদরায়ণ ৷ ব্যাসদেব বেদকে লিপিবদ্ধ ও চার ভাগে বিভক্ত করেন বলে তাঁকে বলা হয় বেদব্যাস ৷ তাঁর চার শিষ্যকে ঋক , সাম , যর্জু ও অর্থববেদ সংরক্ষণ ও প্রচারের দায়িত্ব দেন ৷ তিনি ৫৫৫ পংক্তির হিন্দুর বিখ্যাত প্রজ্ঞাসার ” ব্রহ্মসূত্র” ও লেখেন ৷ লিখে গেছেন অষ্টাদশ মহাপুরাণ ও উপপুরাণ ৷ তাঁর জন্মদিনটি আজও হিন্দুদের কাছে গুরুপূর্ণিমা বলে সমাদৃত ৷ মহাভারত লেখার জন্য তিনি ব্রহ্মার কাছে গেলে ব্রহ্মা গণেশকে নিযুক্ত করতে বলেন ৷ গণেশ শর্ত দেন এই বিশাল গ্রন্থ রচনার সময় থামা যাবে না ৷ তাতে ব্যস রাজী হয়ে বলেন যে কোন শ্লোক না বুঝে লেখা চলবে না ৷ কর্ণাটকের মুরুদেশ্বর মন্দিরে ব্যাসের মুখে শুনে গণপতির মহাভারত লিপিবদ্ধ করার মূর্তি দেখে এসেছি ৷ “মহাভারত ” পৃথিবীর বৃহত্তম ও মহত্তম মহাকাব্য ৷ কৌরব -পান্ডবদের বিবাদ ও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ধর্ম , অর্থ , কাম ও মোক্ষ বিষয়ে বিশদ আলোচনা ৷ খ্রিস্ট জন্মের তিন হাজার বছর আগে লেখা হিন্দু ধর্মের বিশ্বকোষ মহাভারত বিশ্বের বৃহত্তম নীতিমূলক মহাকাব্য ৷ যা একাধারে ধর্মগ্রন্থ , ইতিহাস , পুরাণ , অর্থ শাস্ত্র ও কাব্যের জ্ঞান ভান্ডার ! সনাতন ধর্মের সব মতের সম্বন্বয়ী এই গ্রন্থ হিন্দুর জীবন বিধানের পরিপূর্ণ নির্দেশিকা ৷ দেহতত্বের শিক্ষা ৷ সে সময়ের সমাজ -সংস্কৃতি , গার্হস্থ্য নীতি , রণ কৌশল , ভক্তি , দ্বন্দ্ব , জ্যোর্তিবিদ্যা , সম্মোহন বিদ্যা , চিকিৎসা বিজ্ঞান , নৃত্য , গীত ইত্যাদি নানা মিথ গ্রথিত হয়েছে ৷ ধর্ম , অর্থ , কাম , মোক্ষ এই চার পুরুষার্থ এবং কর্ম , জ্ঞান ও ভক্তি যোগের কথা রয়েছে ৷ ১৮ লক্ষ শব্দের ১৮ পর্ব , ১০০ উপপর্ব , এক লক্ষ শ্লোক ও গদ্যাংশের মহাভারত প্রথমে “জয় ” গ্রন্থ নামে পরিচিত ছিল ৷ যা আসলে সুপ্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাস তথা সনাতন ধর্মের অন্যতম পবিত্র গ্রন্থ ৷ এই মহাকাব্যটি গ্রীক মহাকাব্য দ্বয় ইলিয়াড ও ওডিসির সম্মিলিত আয়তনের ১০ গুণ ৷ শৈব , শাক্ত , বৈষ্ণব , সৌর , গাণপত্য , দ্বৈত – অদ্বৈত -বিশিষ্ঠাদ্বৈত সহ হিন্দু ধর্মের সব শাখাতেই রয়ে গেছে মহান ঋষি ব্যাসদেবের কর্মকৃতিত্ব ৷
হিমালয়ের পবিত্র গুহায় বসে মহাভারত রচনা করলেও এই ব্যাসকাশীতে তিনি তপস্যা করতেন ৷ ব্যাসদেব বেদের বিভাজন করেছিলেন তাঁর নাম হয় বেদব্যাস ৷ ব্যাস পূর্ণিমা আমাদের কাছে গুরু পূর্ণিমা ৷ প্রাচীন ভারতের শিক্ষক দিবস ৷ ১৮ পর্বের ১ লক্ষ শ্লোকের মহাভারত সম্পর্কে বলা হয় ” যা নেই ভারতে তাই আছে মহাভারতে ” ! কৌরব -পান্ডব এই দুই জ্যেঠতুতো খুড়তুতো ভাইদের বা পারিবারিক বিবাদ থেকে সারা ভারতবর্ষের প্রায় সব রাজ্যের সেনাবাহিনীর মধ্যে ঘটা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ এর মূল কাহিনী ৷ একে পৌরাণিক কাহিনী না বলে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস বলা যেতে পারে ৷ এখন তার অনেক কিছু খুঁজে পাওয়া গেছে ৷ তার আরেক নাম “শতসহস্রী সংহিতা ” ৷ যার মধ্যে লক্ষ্য করলে দেখা যায় রয়েছে “দেহতত্বের শিক্ষা “৷
মহাভারতের মধ্যেই আছে বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা শ্রীভগবানের মুখনিঃসৃত ” শ্রীমদ্ভাগবত গীতা “!
মহাভারতের মাধ্যমে ব্যাসদেব হিন্দু ধর্মের মূল কথা ধর্মাচরণ , বীরত্ব , সতীত্ব , সত্যনিষ্ঠা , উদারতা , আত্মবিসর্জন এসব গুণাবলী তুলে ধরেছেন ৷বিশ্বের অধিকাংশ ভাষায় মহাভারতের আক্ষরিক ও ভাবানুবাদ হয়েছে ৷আমার কাছে মহাভারত এভাবে ধরা দিয়েছে ৷ এসব বিষয় সহ সনাতন হিন্দু ধর্ম সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে আমার লেখা “সনাতনী কৃষ্টিকথা ” এবং ” হিন্দু ধর্ম” বই দুটি সংগ্রহ করে পড়ুন , পড়ান ও মূল্যবান অভিমত দিন ৷
দেহরূপ রাষ্ট্রের রাজা “মন” ৷ সাধকেরা তাকে অন্ধ বলেছেন , ” তাই কৌরব প্রধান ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ”!
যাঁর অন্ধ পুত্রস্নেহ শুধু নিজ বংশের নয় সমগ্র ভারতবর্ষকে বীরশূণ্য করেছে ৷
“সঞ্জয় ” নামক জ্ঞান ও বিবেকের সহায়তায় তিনি রাজ্য চালাতেন ৷
অন্যদিকে পান্ডবদের পাঁচ ভাই জ্ঞানের প্রতীক ৷
“যুধিষ্ঠির ” – ব্যোম বা আকাশ , স্থিরতার প্রতীক ৷
নীতি , ধর্ম ও কর্ম সফলভাবে অনুসরণ করলে কোনো শক্তি তাকে পরাস্ত করতে পারে না ৷
“ভীম – বায়ু , যার দ্বারা হয় শক্তির স্থানান্তর বা শব্দের প্রকাশ ৷ তাই তিনি পবন পুত্র ৷
” অর্জুন ” – অগ্নি বা তাপ ৷ ইন্দ্রের পুত্র অর্থাৎ তেজ,
শৌর্য বীর্য ও যুদ্ধে পারঙ্গম ৷ যে জ্ঞানের দ্বারা আবদ্ধ থাকে ৷ তাই বিজয়ী হয় ৷
“নকুল ” – যার গুণের সঙ্গে “জল” এর সাদৃশ্যতা
দেখা যায় ৷ জল ছাড়া দেহ অচল ৷
“সহদেব ” – মাটি ৷ তিনি মাটির মত সহনশীল ৷
আমার মনে হয়েছে ঠিক একরকম “কৌরব” রা একশো ভাই কাম , ক্রোধ , লোভ , মদ , মাৎসর্য এর
মত অজ্ঞানের প্রতীক ৷ যারা তাদের ভুল দাবী ও জেদ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় পরাজিত হয় ৷
“কর্ণ” – অসাধারন শক্তিশালী হয়েও অধার্মিক কৌরবদের সঙ্গে থাকায় নিজের জ্ঞান , অস্ত্র , শক্তি ও আর্শীবাদগুলি কাজে লাগাতে পারেনি ৷
“ভীষ্ম” – এই চরিত্র থেকে বুঝতে পারি কাউকে এমন প্রতিশ্রুতি দিতে নেই যাতে নিজেকে অন্যায়ের কাছে বিকিয়ে দিতে হয় ৷ “শকুনি “- চরিত্র থেকে আমরা শিক্ষা পাই কৌশল , জালিয়াতি ও ঠাট্টা দিয়ে সবসময় সফল হওয়া যায় না ৷ “অশ্বথ্থমা” -উচ্চবিলাস ও জ্ঞানের অপব্যবহারের প্রতীক ৷ যা সবার জন্য অমঙ্গল ডেকে এনেছে ৷ কুরুক্ষেত্রের মত সংসার ক্ষেত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভালো ও মন্দের দ্বন্দ্বকে বেদব্যাসের লেখার মধ্যে তুলে ধরেছেন ৷ যা আমাদের মাতৃভাষায় কাশীরাম দাস তুলে ধরেছেন ! বিশ্বের প্রধান সব ভাষাতেও তা অনূদিত হয়েছে ৷ জয় মহাভারত !

 

More from CultureMore posts in Culture »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.