Press "Enter" to skip to content

ব্যক্তিজীবনে নিতান্তই এক আটপৌরে মা ও গৃহবধূ আশাপূর্ণা ছিলেন পাশ্চাত্য সাহিত্য ও দর্শন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞা……।

Spread the love

স্মরণঃ আশাপূর্ণা দেবী

“মেয়েমানুষ যতই মুখ্য হোক, তাকে ঠকানো বড় শক্ত।
সে সব জেনে বুঝেও চুপ করে থাকে। পাছে তার পাখির বাসাটুকু ভেঙে যায়।”

——– আশাপূর্ণা দেবী

বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জীবন, বিশেষত সাধারণ মেয়েদের জীবনযাপন ও মনস্তত্ত্বের চিত্রই ছিল তার রচনার মূল উপজীব্য। ব্যক্তিজীবনে নিতান্তই এক আটপৌরে মা ও গৃহবধূ আশাপূর্ণা ছিলেন পাশ্চাত্য সাহিত্য ও দর্শন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞা। বাংলা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও ভাষায় তার জ্ঞান ছিল না। বঞ্চিত হয়েছিলেন প্রথাগত শিক্ষালাভেও। কিন্তু গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণশক্তি তাকে দান করে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখিকার আসন।

আশাপূর্ণা দেবী ১৯০৯ সালের ৮ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার পটলডাঙায় জন্মগ্রহণ করেন।

বাবা হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত, মা সরলাসুন্দরী দেবী। হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত ছিলেন কমার্শিয়াল আর্টিস্ট। সে যুগের জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকাগুলিতে ছবি আঁকতেন তিনি। গুপ্ত-পরিবারের আদি বাড়ি ছিল হুগলি জেলার বেগমপুরে।

তাঁর ছোটবেলা কেটেছে উত্তর কলকাতাতেই, ঠাকুরমা নিস্তারিনী দেবীর পাঁচ পুত্রের একান্নবর্তী সংসারে। পরে হরেন্দ্রনাথ তাঁর আপার সার্কুলার রোডের (বর্তমান আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রোড) নিজস্ব বাড়িতে উঠে যান। আশাপূর্ণার বয়স তখন সাড়ে পাঁচ বছর। কিন্তু শৈশবের ওই কয়েকটি বছর তাঁর মনে গভীর ছাপ রেখে যায়।

ঠাকুরমার কঠোর শাসনে প্রথাগত শিক্ষার সৌভাগ্য হয়নি আশাপূর্ণা দেবীর । তবে মা সরলাসুন্দরী ছিলেন একনিষ্ঠ সাহিত্য-পাঠিকা। বাড়িতে সে যুগের সকল প্রসিদ্ধ গ্রন্থের একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডারও ছিল। এই পরিবেশে মাত্র ছয় বছর বয়স থেকেই স্কুলপাঠ্য ও অন্যান্য বই পুরোদমে পড়াশোনা শুরু করে দেন আশাপূর্ণা দেবী।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে কালিদাস গুপ্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর ধীরে ধীরে তাঁর জীবনের ধারা বদলে যায়। স্বামীর উৎসাহে সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিষ্ঠা পেয়ে যান। তাঁর কলম দিয়ে একে একে বেরিয়ে আসে কালজয়ী সব উপন্যাস।

তার প্রথম ‘প্রতিশ্রুতি-সুবর্ণলতা-বকুলকথা’ উপন্যাসত্রয়ী বিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলির অন্যতম বলে বিবেচিত হয়। তার একাধিক কাহিনি অবলম্বনে রচিত হয়েছে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র।

দেড় হাজার ছোটোগল্প ও আড়াইশো-র বেশি উপন্যাসের রচয়িতা আশাপূর্ণা সম্মানিত হয়েছিলেন ‘জ্ঞানপীঠ’ পুরস্কারসহ দেশের একাধিক সাহিত্য পুরস্কার, অসামরিক নাগরিক সম্মান ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রিতে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে প্রদান করে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সম্মান ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’। ভারত সরকার তাকে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান ‘সাহিত্য অকাদেমী ফেলোশিপে’ ভূষিত করে।

আশাপূর্ণা দেবী ১৯৯৫ সালের আজকের দিনে (১৩ জুলাই) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.