হোলি বা দোল উৎসব
“ওরে গৃহবাসী,
খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল
স্থলে-জলে বনতলে লাগলো যে দোল
দ্বার খোল দ্বার খোল। ”
বাবলু ভট্টাচার্য : বসন্ত ঋতুর অন্যতম রঙিন উৎসব এই দোল উৎসব। অঞ্চলভেদে এই উৎসব কোথাও বা হোলি নামেও পরিচিত।

বঙ্গে এই দোল উৎসবের কিছু মাহাত্ম্য আছে। নির্ধারিত দিনের আগের দিন খুব ধুমধাম করে হোলিকা দহন করা হয় যা আঞ্চলিক ভাষায়- ‘নেড়া পোড়া’ নামে খ্যাত। খড়, শুকনো পাতা, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি জ্বালিয়ে এক বিশেষ বহ্ন্যুৎসবের আয়োজন করা হয়।

উত্তর ভারতে হোলি উৎসবটি বাংলার দোলযাত্রার পরদিন পালিত হয়। হোলি নামটা এসেছে ‘হোলিকা’ থেকে। দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা। প্রচণ্ড নিষ্ঠুর ছিল দুই ভাইবোন। হিরণ্যকশিপু অপরাজেয় থাকার বর পেয়েছিল। তাই কোনও দেবতাকেই মানত না। বলত, দেবতা নয়, পুজো তাকেই করতে হবে। কিন্তু হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত।

সে তার বাবার আদেশ মানতে রাজি নয়। হিরণ্যকশিপু ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। নানা ভাবে ছেলেকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু ফল হল না। শেষে প্রহ্লাদকে ভুলিয়ে ভালিয়ে জ্বলন্ত চিতায় বসল হোলিকা। নিজে গায়ে দিল অগ্নি-নিরোধক শাল।

কিন্তু আগুন জ্বলে উঠতেই সেই শাল উড়ে গিয়ে প্রহ্লাদকে ঢেকে ফেলল। অগ্নিদগ্ধ হল হোলিকা। বিষ্ণুর আগমন ঘটল। তাঁর হাতে নিহত হল হিরণ্যকশিপু। ওই আগুন হল অশুভের বিরুদ্ধে শুভের জয়ের প্রতীক। হোলিকা দগ্ধ হওয়ার পরের দিন পালিত হয় হোলি।

বৈষ্ণবদের বিশ্বাস অনুযায়ী ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোল পূর্ণিমার দিন শ্রীকৃষ্ণ উঠতেন। সেই থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। তাছাড়াও ভারতবর্ষের এক মহানপুরুষ শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মদিন হিসাবেও দোল পূর্ণিমার এই তিথিটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই কারণে একে ‘গৌর পূর্ণিমা’ নামেও অভিহিত করা হয়।

হোলি বা দোল উৎসবের শুভেচ্ছা সবাইকে।


Be First to Comment