Press "Enter" to skip to content

বুদ্ধদেব গুহ কে বলা চলে আরণ্যক এক ঔপন্যাসিক…….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ বু দ্ধ দে ব গু হ

বাবলু ভট্টাচার্য : “আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি/ তুমি অবসরমত বাসিও, নিশিদিন হেথায় বসে আছি/ তোমার যখন মনে পড়ে আসিও”।

কী? একটু চেনা লাগছে কি? অনেকেই বলবেন যে– ‘হ্যাঁ খুব সহজেই যাচ্ছে চেনা, এ তো রবীন্দ্রসঙ্গীত!’ কিন্তু আপনি যদি হয়ে থাকেন বাংলা উপন্যাসপ্রেমী কোনো পাঠক, তাহলে খুব সহজেই এর যোগসূত্র স্থাপন করতে পারবেন আপনার পড়া বেশ কয়েকটি উপন্যাসের সাথে, আর সেই সাথে মনের মধ্যে ভেসে উঠবে বুদ্ধদেব গুহ’র ছবি!

কেন যেন এই গানের মুগ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি বুদ্ধদেব, তার প্রায় উপন্যাসেই যেন কথাচ্ছলে চলে আসে এই কথাগুলো, তা সে হোক ‘সবিনয় নিবেদন’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’ বা ‘বাসনাকুসুম’!

বুদ্ধদেব গুহ সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুল ও স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশুনা করেন। তার স্ত্রী প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়িকা ঋতু গুহ। বুদ্ধদেব নিজেও একসময় রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন এবং তিনি পুরাতনী টপ্পা গান গাওয়াতে বেশ পারদর্শী।

পেশায় তিনি একজন সফল চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট, জীবন- যাপনের ধরনে খুবই শহুরে। কিন্তু ভেতরকার যে আদিম আরণ্যক ডাক, তা যেন তার লেখায়ই ধরা পড়ে তার জীবনচিত্রের চাইতে অনেকগুণ স্পষ্ট হয়ে।

বুদ্ধদেবকে বলা চলে আরণ্যক এক ঔপন্যাসিক। তার উপন্যাস যেন পরিপূর্ণই হয়ে ওঠে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তার গল্পের প্লটজুড়ে ভেসে উঠছে নাগরিক-ক্লেশমুক্ত এক অরণ্যময় প্রকৃতি! পালামৌর বুনো হাতি, পৌরুষ মাখানো বাঘিনী অথবা পাকদন্ডীর কুয়াশার রাস্তা, ম্যাকলাস্কিগঞ্জের সেই সকালের আগমন— এই তো বুদ্ধদেবের উপন্যাস।

চিঠির প্রতিও বুদ্ধদেবের একটা গভীর আকর্ষণ দেখা যায়। প্রায় উপন্যাসেই এ ওকে চিঠি পাঠায়, সেই চিঠি পুরো সময় জুড়ে একটা সুরেলা গান হয়ে বাজতে থাকে। বুদ্ধদেব খুব সুন্দর করে চিঠি লিখতে পারেন, তার যেকোনো উপন্যাস পড়লেই তা বোঝা যায়!

‘সবিনয় নিবেদন’ উপন্যাসটি তো পুরোটাই চিঠিপোন্যাস! ঋতি ও রাজর্ষি একজন আরেকজনকে না দেখে না শুনে চিঠির এক অদ্ভুত ব্যাকরণে বুনতে থাকে তাদের সম্পর্ককাব্য। অদেখাকেও যে চিঠি লিখে প্রিয় ব্যক্তিতে রূপ দেওয়া যায়, তার সাথে খুনসুটি করা যায়, করা যায় অভিমানী অভিযোগ, চিঠি লিখে যে কাউকে ভালোবাসাও যায়—- তার এক অনবদ্য প্রমাণ ‘সবিনয় নিবেদন’।

তার ছোট গল্প ও উপন্যাসে পাঠক পায় এক্স স্বপ্নালু বিমূর্ততা আর রোমান্টিক আবেদন। গল্পের চরিত্রগুলোর জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে পাঠক তাই খুব সহজেই যখন-তখন ডুব দিতে পারে বুদ্ধদেবের লেখায়।

ইংল্যান্ড, ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশ, কানাডা, আমেরিকা, হাওয়াই, জাপান, থাইল্যান্ড ও পূর্ব আফ্রিকাসহ বহু জায়গায় ঘুরেছেন এই মানুষটি। বারবার প্রকৃতির নেশায় বুঁদ হয়ে রয়েছেন তিনি। বিভিন্ন জায়গা, তাতে বাস করা মানুষের ভিন্ন জীবনের বিপরীতমুখী মাত্রা- সবকিছুর স্বাদই গ্রহণ করেছেন বুদ্ধদেব। তার এই সম্পর্কগুলোকে আমরা বারবার তার গল্প- উপন্যাসের নায়কের সম্পর্কগুলোর মধ্যে দেখা যায়।

বুদ্ধদেব ‘ঋজুদা’ বলে একটি চরিত্রের স্রষ্টা। এই ঋজুদা যখন -তখন রুদ্রকে সাথে নিয়ে চলে যান জঙ্গলে! বুদ্ধদেবের ভ্রমণগুলো ঋজুদা ও রুদ্রের ছলেই পাঠক গোগ্রাসে গিলতে থাকে। ঋজুদা নিয়ে একটি বই হলো ‘ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে’।

১৯৭৬ সালে আনন্দ পুরস্কার ছাড়াও বুদ্ধদেব পেয়েছেন শিরোমণি ও শরৎ পুরস্কার।

২৯ আগস্ট ২০২১ বুদ্ধদেব গুহ মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

বুদ্ধদেব গুহ ১৯৩৬ সালের আজকের দিনে (২৯ জুন) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from MusicMore posts in Music »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.