জন্মদিনে স্মরণঃ ফে দে রি কো ফে লি নি
বাবলু ভট্টাচার্য : বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী চলচ্চিত্র স্রষ্টার নাম ফেদেরিকো ফেলিনি। খেয়ালি এই নির্মাতা চলচ্চিত্রের প্রথাগত পরিবেশনা, গঠনগত সংযম ও ধ্রুপদী সৌন্দর্যের স্টাইল থেকে বেরিয়ে এসে নব্য ও স্বকীয় একটি ধারায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তাই তো চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে বিচরণ করেও নির্মাণ করেছেন মাত্র ছাব্বিশটি চলচ্চিত্র। চিত্রনাট্য রচনা ও চলচ্চিত্র নির্মাণ উভয় ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সমানভাবে সফল। সংখ্যার চেয়ে গুণগত মানের প্রতি তিনি ছিলেন অধিক শ্রদ্ধাশীল।
চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের মতে, ফেলিনির চলচ্চিত্রগুলো তারই চেতনার বহিঃপ্রকাশ— যিনি তার পুরো জীবনটাই ক্যামেরার ফ্রেমে বেঁধে ফেলেছেন। ফেলিনি মনে করতেন— ‘আমাদের স্বপ্নগুলোই আমাদের প্রকৃত জীবনকে প্রকাশ করে। আমার বাঁধনহারা কল্পনা আর আবিষ্টতা শুধু আমার জীবনেরই প্রধান অংশ নয়, বরং আমার চলচ্চিত্রেরও মূল উপাদান।’
কৈশোরেই সৃজনশীল কাজে নিজের দক্ষতা দেখাতে শুরু করেন। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় স্থানীয় থিয়েটারে তারকাদের ক্যারিকেচার করতেন। ১৯৩৯ সালে আইন পড়তে ইতালির রাজধানী রোমে পাড়ি জমালেও একটি স্যাটায়ার ম্যাগাজিনে কাজ করা শুরু করেন। ঠিক এই সময়ে তার লেখালেখি শুরু হয়। লেখেন রেডিওর জন্য পাণ্ডুলিপি। এ সময় তার সঙ্গে দেখা হয় অভিনেত্রী জুলিয়েতা মাজিনার সঙ্গে। তারপরেই ঘর বাঁধেন একসঙ্গে, সালটা ছিল ১৯৪৩।
ফেলিনির চলচ্চিত্রে কাজ শুরু চিত্রনাট্যকার হিসেবে। ইতালির বিখ্যাত পরিচালক রব্যার্তো রোসেলিনির লেখক দলে যুক্ত হয়ে যান। ১৯৪৫ সালে রোসেলিনির ছবি ‘রোমা চিত্তা আপেরতা’র জন্য প্রথমবারের মতো ফেলিনি অস্কারের জন্য মনোনয়ন পান। বিখ্যাত এ জুটি ইতালিকে উপহার দেন বিখ্যাত সব ছবি।
এরপরে নিজেই পরিচালনায় চলে আসেন ফেলিনি। ১৯৫১ সালে ফেলিনি প্রথম পরিচালনা করেন ‘দ্য হোয়াইট শেক’ ছবিটি। কিন্তু তাকে সফলতা এনে দেয় ১৯৫৩ সালের ছবি ‘ই ভিত্তেলনি’। ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গোল্ডেন লায়ন’ পুরস্কার জেতে। এক বছর পরেই ফেলিনি ঘরে তোলেন অস্কার পুরস্কার। ‘লা স্ত্রাদা’ ছবির জন্য বিদেশি ভাষা শাখায় অস্কার জেতেন ফেলিনি।
একে একে তৈরি করেন ‘লে নত্তি দি কাবিরিয়া’, ‘লা দোলচে ভিতা’, ‘ফেলিনি সাতিরিকন’, ‘ফেলিনি রোমা’, ‘আমারকরদ’ -এর মতো বিখ্যাত সব ছবি।
পেয়েছেন পাঁচবার অস্কার পুরস্কার। পাম দ’র সহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা জিতেছেন ফেলিনি। ১৯৯৩ সালে পান আজীবন অস্কার সম্মাননা। জাপান আর্ট অ্যাসোসিয়েশন তাকে ‘প্রিমিয়াম ইম্পিরিয়াল’ সম্মাননা দেয়, যা নোবেল প্রাইজের মতো সম্মানীয় বলে ধরে নেওয়া হয়।
১৯৯৩ সালে ৭৩ বছর বয়সে রোমে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ফেলিনি।
ফেদেরিকো ফেলিনি ১৯২০ সালের আজকের দিনে (২০ জানুয়ারি) ইতালির রিমিনি শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment