————‘তোমরা মিশেছ মোর প্রাণেমনে’———–
ভাস্কর ভট্টাচার্য : ১৫, আগস্ট, ২০২০। বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে সিভিল সার্ভেন্ট হবে। সেদিন সিভিল সার্ভেন্ট হলে আমরা ঋষি অরবিন্দকে পেতাম না হয়তো। পেতাম না স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিযুগের সেই বিপ্লবীকে। তিনি ইংরেজ শাসনের গোড়া ধরে নাড়িয়ে দিয়েছিলন। বাবার স্বপ্ন সেদিন পূর্ণ হয়নি বটে দেশ এমন এক সংগ্রামী স্বাধীনতা যোদ্ধা পেয়েছিল, বাংলার ইতিহাসে স্মরণীয় নাম। অরবিন্দ বিপ্লবী থেকে ঋষি অরবিন্দ হয়ে যান। জেলখানা তাঁকে ঋষি বানিয়েছিল। জেলে বসেই লিখেছিলেন তাঁর অমূল্য রচনা। তাঁর জীবন চর্চা করলেই পড়া যাবে এক প্রতিভা সম্পন্ন বাঙালির নাম। আপাদমস্তক বিলেতি পিতা চেয়েছিলেন পুত্রকেও সেইভাবে গড়ে তুলবেন। গ্রিক লাতিন ভাষায় অনায়াস দক্ষতা অর্জন করেছিলেন অরবিন্দ। কিন্তু যে কিশোরের মাথায় স্বাধীনতার ভূত, তাকে কে আটকাবে। সে এক বিস্তৃত অধ্যায় এবং। আজ সেই বিপ্লবী-ঋষির জন্মদিন। সেদিন কি তিনি অনুভব করেছিলেন তাঁর জন্মদিনের দিনটিই ভারতের স্বাধীনতা দিবস রূপে চিহ্নিত হবে?
এক নিঃশব্দে স্বাধীনতা দিবস অতিক্রান্ত কালে হঠাৎ মনে পড়ল তাঁর কথা। তাঁর সহযোদ্ধাদের কথা। মনে পড়ে যাচ্ছে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের কথা। শয়ে শয়ে আত্মত্যাগী স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী পুরুষদের কথা।
মনে পড়ে যাচ্ছে সেই গবেষণালব্ধ বইটির কথা। ‘ ‘বাংলা কারাসাহিত্য’ । এই বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন অধ্যাপক আদিত্য চৌধুরীর কথা। তখন আমি সদ্য কলেজ পেরনো বাউন্ডুলে যুবক। আদিত্যবাবু বললেন, আমি একটা পিএইচডি করব, তুমি একটু সহযোগিতা করবে? এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। এই সুযোগে কিছু বই পড়ে নেওয়া যাবে। ‘ ডেটেনিউ’, বিপ্লবীজীবনের স্মৃতি’ প্রভৃতি অসংখ্য বই।
তোলপাড় করে ফেলেছিলাম কলকাতা ও তার আশপাশের লাইব্রেরি। তখন ঘরে বসে এত সহজে বই পাওয়া যেত না। তার ওপর সব বইই তখন দুষ্প্রাপ্য।পাওয়াও ছিল পরিশ্রমসাধ্য। অবশেষে আদিত্যবাবুর সেই গবেষণালব্ধ বই বেরিয়ে ছিল।তখন বিপ্লবীদের জীবন, কাহিনি,অত্যাচারের নিষ্ঠুরতার কাহিনি পড়তে পড়তে মাথায় এসেছিল, বিদ্বান প্রতিভাবান বিপ্লবীদের নিয়েই আলাদা গবেষণা গ্রন্থ হতে পারে।
অরবিন্দ, রাসবিহারী,মাস্টারদা, বাঘাযতীন, উল্লাসকর প্রভৃতি বিপ্লবীদের ইনটেলেকচুয়ালিটি নিয়ে কেন কেউ গবেষণা করেন না। শুধু তাঁরা নিজের জীবন বাজি রেখে দেশকে উৎসর্গ করে যাননি, তাঁদের অসম্ভব বিদ্যা, বুদ্ধি,তীক্ষ্ণতা,মেধাকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন স্বেচ্ছায়। আজ বার বার সেইসব ত্যাগী, প্রতিভাবানদের কথা মনে পড়ছে।
এই মুহূর্তে হাতের কাছে রয়েছে ছোট্ট অথচ এক মূল্যবান দলিল। সেই বইয়ের ছবিই দিলাম। অরবিন্দের জন্মদিনের কথা লিখতে লিখতে কোথায় চলে এলাম। অপরাধ মার্জনীয়।
এ লেখাটাও লিখতাম না। শুনলাম আমার নিকট আত্মীয় কোভিড আক্রান্ত। নিজের মনকে অন্যদিকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা। কী জানি !

Be First to Comment