Press "Enter" to skip to content

বাঙালি মেয়ে মাত্রেই ডাইনিবিদ্যায় পারদর্শী, বলছে হিন্দিভাষীরা………

Spread the love

*বাঙালি মেয়ে মাত্রই ডাইনি, ভাবে অবাঙালিরা*

বাবলু ভট্টাচার্য : অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার ঘটনায় সমাজের আদালত দায়ী করছে সুশান্তের বাঙালি বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীকে৷ বাঙালি মেয়ে মাত্রেই ডাইনিবিদ্যায় পারদর্শী, বলছে হিন্দিভাষীরা৷ রীতিমত চমকে দেওয়ার মতো টুইট একের পর এক৷ বেশিরভাগ মন্তব্যই আসছে মহিলাদের থেকে৷ তারা প্রত্যেকেই অবাঙালি। প্রত্যেকেই মনে করেন, ডাকিনীবিদ্যা, মারণ-উচাটন, জাদুটোনায় দক্ষ বাঙালি নারীদের হাতে পড়লে এই দশাই হয়৷ যেমন বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর পাল্লায় পড়ে হয়েছিল বেচারি সুশান্ত সিং রাজপুতের৷ সুশান্তের ফ্ল্যাটে রিয়া যে ঝাড়ফুঁক করতেন, এমন ‘‌স্বচক্ষে’‌ দেখা প্রতিবেশীর সন্ধানও পাওয়া গেছে, যাঁরা এই গুজবে আরও ইন্ধন জোগাচ্ছেন৷ উঠে আসছে ভারতের অবাঙালি সমাজের তীব্র বাঙালি বিদ্বেষের ছবি৷ বাংলার এবং ভারতের একমাত্র স্বঘোষিত ‘‌উইচ’ ইপ্সিতা রায় চক্রবর্তী বাঙালি মেয়েদের এই ডাইনি বলে দেগে দেওয়া সম্পর্কে বললেন— ‘‌‘‌তন্ত্র জিনিসটা তো এক কালে ভালই ছিল৷ মানে ইট ওয়জ আ সায়েন্স, ইট ওয়জ আ ফিলোজফি৷ তার পরে তো এখন ডিজেনারেট করতে করতে শুধু বেঙ্গলে নয়, সব জায়গায়ই, যেখানে তন্ত্রর নাম হয়, কি তান্ত্রিকের নাম হয়, ইট ইজ আ ব্যাড থিং৷ কেন না ওইটাকে অ্যাবিউজ করে৷ নানাভাবে অ্যাবিউজ করে, তন্ত্রর নাম দিয়ে৷ কিন্তু বাঙালি মেয়েদের যেটা ছিল, তাদের (‌তন্ত্রসাধনার)‌ অংশ, ক’জনের নাম (‌লোকে জানে)‌!‌ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই ইন আ ভেরি গুড ওয়ে ছিল৷ যেমনি শ্রী‌ রামকৃষ্ণের সঙ্গে ছিল৷ কিন্তু এটাও ঠিক, মেয়েদের অনেকভাবে ইউজও করত তান্ত্রিকরা৷ তখনও, এখনও৷ যেটাকে বলে ‘‌ভৈরবী’৷ সেটা তো ইউজিং অফ দ্য উওম্যান৷ তাই জন্যে আমার মনে হয়, শুধু এই ক্ষেত্রে না, সব ক্ষেত্রেই আমাদের দেশে মেয়েদের সব সময়ই ইউজ করা হয়েছে৷ আজকেও মেয়েরা বিয়ইং ব্যাটার্ড, দে আর বিয়িং অ্যাবিউজড৷ শুধু তন্ত্রে কেন, অনেক বিষয়ে৷ বাড়িতে, ঘরে, বাইরে, সব জায়গায়৷’’ কিন্তু এ তো গেল সামগ্রিক সমস্যার একটা দিক৷ কিন্তু এর অন্যতর একটা দিক আছে, যেটা আরও বিপজ্জনক যে কোনও বাঙালির পক্ষে৷ বাকি ভারতে বাঙালিদের খাটো করে দেখার একটা চেষ্টা৷ বাঙালি মেয়েরা ডাকিনী–বিদ্যায় সিদ্ধহস্ত, সুশান্ত সিং রাজপুতের বাঙালি বান্ধবী সম্বন্ধে এই মন্তব্য আসলে অবাঙালি হিন্দিভাষী সমাজের বাংলা এবং বাঙালিদের প্রতি চূড়ান্ত বিতৃষ্ণারই প্রকাশ৷ ঠিক যেভাবে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহৎ প্রতিভা, সত্যজিৎ রায়, কিংবা অমর্ত্য সেনের বিশ্বজোড়া সাফল্য, স্বীকৃতিকে, বাঙালির বিদ্যাচর্চা, বা সংস্কৃতিমনস্কতা যেভাবে উপহাসের উপলক্ষ্য হয়ে ওঠে, এটাও তার আরেকটা দিক৷ সমাজকর্মী পল্লবী ব্যানার্জি মনে করেন, হিন্দি বলয়ের এই বাঙালি বিদ্বেষ এবং বিরোধিতার পুরো প্রেক্ষিতটা আসলে রাজনৈতিক৷ যেহেতু বাঙালিরা নিজেদের জাতিসত্তার স্বীকৃতির দাবিতে আজ আগের থেকে অনেকটাই সরব, এবং ভারতের কেন্দ্র সরকারে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক, বাঙালি এক দীর্ঘ সময় ধরে তাদের বিরোধী দলকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে এসেছে, হিন্দি বলয়ের বাঙালি বিরোধিতার মূল কারণ সেটাই৷ এর পাশাপাশি আরও এক প্রচলিত বিশ্বাসের কথা বললেন পল্লবী, যে বাঙালিদের মাতৃতান্ত্রিক সমাজ অবাঙালিদের না–পসন্দ৷ পল্লবীর কথায়— ‘‌‘‌আমি এটা বহু অবাঙালিকে, অবাঙালি বলতে আমি উত্তর ভারতের অবাঙালির কথাই বলছি, তাদের বলতে শুনেছি, যে বাঙালিরা মেয়েদের খুব মাথায় তুলে রেখেছে! এবং এটা একটা খারাপ কাজ হিসেবেই ওরা বলে থাকে৷ যে ‘‌সর পে চড়হা রাখ্‌খা হ্যায়৷‌’এই কথাটাই বলে৷ এবং ওরা যেহেতু জানে, যে মেয়েরা মাথায় তোলার জিনিস নয়, পায়ের নিচে পিষে রাখার জিনিস, সে জন্যে কোনও মহিলা (‌যখন)‌ জড়িত কোনও ঘটনায়, এই বাঙালি বিদ্বেষটা চট করে সামনে চলে আসে!‌’’
*বিদেশি পত্রিকা অবলম্বনে

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.