ডঃ পি সি সরকার (জুনিয়র) বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী ও বিশিষ্ট লেখক। কলকাতা, ১০, জানুয়ারি, ২০২১। “কফি হাউসের সেই আড্ডাটা” হয়তো আজ আর নেই। কিন্তু প্রতিটি পরমাণুতে মিশে আছে বাঙালির সৃষ্টিধর্মী সাহিত্য, বিতর্ক, বিবর্তন আর বিপ্লবের ইতিহাস। মুখে মাস্ক সেঁটে কফি খাওয়াটা হয়তো আমার গতকাল হয়ে ওঠেনি কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা,মনের অজান্তে মাস্ক খুলে নতুন জেনারেশনের স্বপ্নকে উস্কে দেবার ‘মুখবন্ধ’ টা লিখে দিয়ে আসতে পেরেছি। কোভিডের এখানে প্রবেশ নিষেধ।
বাঙালি ‘মুখোশ’ পরতে ভালোবাসে না। ফুলের তোড়া হাতে ধরিয়ে, মাস্ক বিহীন পুরো বাঙালি সমাজের হয়েই যেন ওই বাচ্চা ছেলেটা জানালো, -“এটা ভ্যানিশ করে দিন।” আমিও কোভিডের বিধি অজান্তে ভেঙ্গে ওকে জড়িয়ে ধরে আমার মাস্কটা খুলে বলি,”পারবোনা ভাই! এটা ভালোবাসার ফুল। ভ্যনিশ করা যায়না। মরলে একসাথে মরবো” । ও ঠিক বুঝে নিয়েছে।
কর্মকর্তারা আমাকে এক বিরাট মনোহর বাক্স ভর্তি নানা রকম স্বাদের ‘মুখরোচক’ চানাচূরের সমাহার, তার সাথে উপরি হিসেবে,’সন্দেশ জগতে অদ্বিতীয়’ , বাংলার আর এক লোভনীয় গর্ব “গিরিশ চন্দ্র দে ও নকুড় চন্দ্র নন্দী”র এক বাক্স নলেন গুড়ের সন্দেশ উপহার দিলেন। বলেন, “ওনাদের তরফ থেকে ভালোবেসে পাঠিয়েছেন।”। আমি সানন্দে গ্রহণ করে বলি এ-রকম ‘ভালো কাজ’ যেন ওঁরা বার বার করতে থাকেন!! তাহলেই তো বারবার ম্যাজিক দেখাবো। বাঙালি উৎসাহ পাবে ।”। সবাই হেসে ওঠেন।
বাঙালিয়ানা জমে উঠেছে। মান্নাদা বেঁচে থাকলে বলতেন, ” আড্ডাটা আর নেই । …তবে ষোল আনা বাঙালিয়ানাই আছে বেঁচে…”
ওখানে ঠিক মানানসই ভাবে হঠাৎ করে দেখা হলো, বাঙালির আর এক স্তম্ভ, পরিচয়, ‘শুকতারা’পত্রিকার সাম্প্রতিকতম,সম্পাদিকা রূপা মজুমদারের সঙ্গে। শুকতারা পত্রিকা আর আমার বয়স একদম এক। বাবা লিখতেন, আমিও লিখি। ও যেন আমাদের বাঙালিয়ানার ছোটবেলার ভিত। লোকে বলে, শুকতারা যে পড়েনি, কফি হাউসে যে আড্ডায় মজেনি, পি সি সরকারের ম্যাজিক যে দেখেনি, বই মেলায় যে যায়নি,… সে বাঙালিই নয়।
“ঢেকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙ্গে।” রূপা মজুমদার কফি হাউসে এসেও বললেন “পূজোর লেখাটা এখনই শুরু করুন।” কথা দিলাম, করবো।
রক্তদান শিবিরের অনুষ্ঠান। আসলে হৃদয় বিনিময়ের অনুষ্ঠান। রাজনীতির ‘র’ পর্য্যন্ত নেই।আয়োজন করেছেন কফি হাউসের সোস্যাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রচার বিমুখ সদস্যরা। খুব আনন্দ পেয়েছি । আবার ডাকলে আবার যাবো।
Be First to Comment