স্মরণঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বাবলু ভট্টাচার্য : বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণের পথিকৃৎ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। সাহিত্য সম্রাট উপাধিতে ভূষিত এই সাহিত্যিকের জন্ম ১৮৩৮ সালের ২৬ জুন, নৈহাটির কাঁঠালপাড়া গ্রামে। তাঁদের আদিনিবাস ছিল হুগলি জেলার দেশমুখো গ্রামে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাবা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন মেদিনীপুরের ডেপুটি কলেক্টর। বাবার কর্মস্থলেই তাঁর পড়ালেখার শুরু একটি ইংরেজি স্কুলে। পরে কাঁঠালপাড়ায় ফিরে হুগলি কলেজে। ১৮৫৬ সালে তিনি আইন পড়ার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং ১৮৫৭-তে সেখান থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করেন।
১৮৫৮ সালে সদ্য প্রতিষ্ঠিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বি এ পরীক্ষায় বঙ্কিমচন্দ্র দ্বিতীয় বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। আইন পড়া শেষ হওয়ার আগেই তিনি যশোরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টরের চাকরি পান। সারা জীবন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার স্বীকৃতি স্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে দুটি খেতাবে ভূষিত করে ১৮৯১ সালে ‘রায় বাহাদুর’ খেতাব এবং ১৮৯৪ সালে ‘কম্প্যানিয়ন অব দ্য মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অব দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার’ খেতাব।
বাংলা সার্থক উপন্যাসের জনক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে অবদানের জন্যও আমাদের সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয় তাকে। সেই সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মগ্রন্থ ‘গীতা’র ব্যাখ্যাদাতা হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান।
তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। ‘কমলাকান্ত’ ছিল তার ছদ্মনাম। এই নামে তাঁর একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রয়েছে যার নাম ‘কমলাকান্তের দফতর’। হুগলি কলেজ অধ্যয়নকালে বঙ্কিমচন্দ্র কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জনে গদ্য-পদ্য রচনা আরম্ভ করেন। পরবর্তীকালে তাঁর বহু রচনা এই দুই কাগজে প্রকাশিত হয়।
তাঁর রচিত উপন্যাসগুলো হচ্ছে: ‘দুর্গেশনন্দিনী’, ‘রজনী’, ‘কপালকুণ্ডলা’, ‘মৃণালিনী’, ‘বিষবৃক্ষ’, ‘ইন্দিরা’, ‘যুগলাঙ্গরীয়’, ‘চন্দ্রশেখর’, ‘রাধারানী’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, ‘রাজসিংহ’, ‘আনন্দমঠ’, ‘দেবী চৌধুরানী’, ‘সীতারাম’ এবং ‘উপকথা’।
এছাড়া প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে— ‘কমলাকান্তের দফতর’, ‘লোকরহস্য’, ‘কৃষ্ণ চরিত্র’, ‘বিজ্ঞানরহস্য’, ‘সাম্য’, ‘কৃষ্ণ’ চরিত্র ইত্যাদি।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালের আজকের দিনে (৮ এপ্রিল) মৃত্যুবরণ করেন।



Be First to Comment