প্রবীর রায় : প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা। কলকাতা, ২০ আগস্ট, ২০২৪। আজ ২০ আগস্ট বাংলা সঙ্গীত জগতের স্বনামধন্য গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের প্রয়াণ দিবস। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারকে শুধু গীতিকার বলা মানে ওঁর সম্পর্কে পুরোটা বলা হয় না। উনি ছিলেন কবি। কতো কালজয়ী গান ওঁর কলম থেকে বেরিয়েছে, বাঙালি তা’ মনে রাখে নি। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ওঁর লেখা “শোনো একটি মুজিবরের কন্ঠ থেকে” ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। সুরকার ও শিল্পী ছিলেন অংশুমান রায়।
এই মানুষটার সঙ্গে আমার প্রথম আলাপের দৃশ্যটা মনে পড়ছে। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ছিলেন আমার বাবার বন্ধু। ঘটনাচক্রে দুজনেরই ডাকনাম ‘বাচ্চু’। তখন আমরা থাকতাম বালিগঞ্জ ফার্ণ প্লেসে। আর ওঁরা থাকতেন কাছেই একডালিয়া প্লেসে ।
বহুবছর বাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “রবিবার” বলে একটি বাংলা ছবিতে আমি অভিনয় করছি, পরিচালক নীতিশ মুখোপাধ্যায় বললেন, “প্রবীর, নীতা সেন আজ একটি নতুন মেয়েকে ডেকেছেন, লিড রোলের জন্য। নাম শকুন্তলা বড়ুয়া। তুই চল আমার সঙ্গে।” লেক রোডে প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী নীতা সেনের বাড়িতে গেলাম। ওখানেই এতো বছর পরে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারকে দেখলাম। সাদা পোশাক পরা। হাতে পান পরাগের টিন ! একেবারে মাটির মানুষ, অত্যন্ত সদালাপী। মানুষটা ছিলেনও ৬ ফিটের উপর লম্বা। একটু সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটতেন।
আমি ওনার কাছে গিয়ে বললাম, ” আপনাকে আমি আমার পরিচয় দেব।”
বললেন, “হ্যাঁ, বলো”।
বললাম, “আমার বাবা আপনার বন্ধু ছিলেন।”
অবাক হয়ে বললেন, “কে তোমার বাবা?’
বললাম, “আমরা ফার্ণ প্লেসে থাকতাম। আপনি তো একডালিয়া প্লেসে থাকতেন। আপনাদের দোতলায় রাস্তার উপর একটা ব্যালকনি ছিলো।”
বললেন, “হ্যাঁ ছিলো।”
আমি এবারে বললাম, আমার বাবার ডাকনাম “বাচ্চু।’
সোল্লাসে বলে উঠলেন, “আরে !! তুমি বাচ্চুর ছেলে?” তারপর কতো গল্প … গানে, গল্পে আড্ডায় সে সন্ধ্যেটা দারুণ কেটেছিল।
এখন ভাবি, কি সব গুণীজনের সান্নিধ্যে এসেছি। নিজেদের প্রতিভায় এঁরা বাংলার শিল্প জগতে এক একজন অমূল্য রত্ন।
না চাইলেও মন যখন সেকাল একালের তুলনা করে … বর্তমান সময়কে বড্ড অন্তঃসারশূন্য মনে হয় …..
Be First to Comment