মৃদুলা ঘোষ : কলকাতা, ২৮ জুলাই, ২০২০।
অনেক দিন আগে র কথা হলেও, আমরা সকলেই চিনি সেই দীর্ঘ জীবি বাঞ্ছারাম কে যে জমিদার ও গিন্নিমা’র বাগান কে মনের আনন্দে দেখভাল করতেন। দীর্ঘ জীবনের রহস্য লুকিয়ে আছে এই মানসিক আনন্দ এবং অনিয়ন্ত্রিত ইচ্ছা গুলো কে সংযত করার মধ্যে। সুস্থভাবে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকতে হলে মনের আনন্দে থাকুন। অযথা উদ্বেগ, টেনশন কে নিয়ে চলতে থাকলে, নানা রোগ আসতে থাকবে ক্রমাগত। অতিরিক্ত ওজন, অলস জীবন, টেনশন আর নেশা বিভিন্ন রোগ ডেকে আনতে সিদ্ধহস্ত। তাই প্রথমেই যে ইচ্ছা গুলো ত্যাগ করতে হবে তা হল নানা ভাবে নেশা করার ইচ্ছা। নিয়মিত ও অপরিমিত মদ্যপান, হেরোইন, গাঁজা চরস,ইত্যাদি সব নেশা’ই শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতি করে। বলা বাহুল্য এই ইচ্ছা গুলো আমাদের মনে আসে খানিক টেনশন আর স্ট্রেস থেকে। তাই এই সব বদ অভ্যেস কে কব্জা করে দৈনন্দিন জীবন কে সমস্যা মুক্ত করতে পারলে সুস্থ থাকা যাবে।
দ্বিতীয়ত ,ভালো থাকা আর অসুখে পড়া সবটাই নির্ভর করে প্রকৃতি বনাম নিজের আচরন গত ব্যবহারের উপরে। প্রকৃতিগত ভাবে যে সমস্যা গুলো আছে তাকে যদি একটু আমল দিয়ে চলেন তাহলে ভালো থাকা কোনো কঠিন বিষয় নয়। নিজের সমস্যা কে অবহেলা করে যদি নিজের ইচ্ছামতো চলাফেরা করেন যেমন, অতিরিক্ত খাওয়া, ফাস্টফুড দেখলেই খাই খাই মন, গরমে এক বোতল ঠান্ডা পানীয় গলায় ঢালা, জমজমাট পার্টি তে দেদার মদ্যপান, ইত্যাদি আরও অনেক কিছু, তাহলে আপনি কোনোদিন ই সুস্থ ও নীরোগ থাকতে পারবেন না। তাই একটু নিয়ন্ত্রিত জীবনে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা নিজেকেই করতে হবে। সাধরন খাওয়া, কমপক্ষে রোজ আধঘণ্টা শরীর চর্চা, অথবা সকালে হাঁটা, একটু সময় ধরে চলার চেষ্টা আপনাকে দীর্ঘ দিনের জন্য সুস্থ সবল রাখবেন। তাই ভালো থাকতে কেমন জীবনে গা ভাসাবেন তা আপনার ই হাতে। অসুখ-বিসুখ বা সুস্থ দীর্ঘ জীবন সব কিছু ই নিয়ন্ত্রিত হয় জিনের দ্বারা।আকস্মিক দুর্ঘটনার কথা বাদ দিলে পৃথিবীতে থাকার মেয়াদ ও জিন ঠিক করে দেয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এখন অন্য কথা বলছে। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ওফ হেলথ এর চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জিনের চরিত্র সম্পর্কে বলেছেন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রোমোজোমের শেষ অংশ ছোট হতে শুরু করে, ফলে অসুখ-বিসুখ বাড়ার সাথে সাথে মানুষ দ্রুত বার্ধক্য র দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মত এই সময় জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে পারলে বেশ কিছু এনজাইম কে উদ্দীপ্ত করা যায়। নিয়মিত যোগাসন, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, মানসিক স্বাস্থ্য কে সুস্থ রাখার চেষ্টা করলে ব্যাক্তির ভালো থাকা কেউ আটকাতে পারবে না। তৃতীয়ত, প্রতি দিন যে খাবারের থালা টি আপনার সামনে থাকে, তা ভর্তি থাক আ্যন্টি অক্সিডেন্ট পূর্ণ খাবারে। যেমনঃ গাজর বিট, পালং বা মেথি শাক, বাধাঁ কপি, কুমড়ো, সহ নানা রঙীন সবজি আর নানা মরশুমী ফল নিয়ে। প্রতি দিন দুটো গোটা ফল অবশ্যই খাওয়া দরকার। এগুলো যেমন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে তেমন ই বার্ধক্য কে আসতে বাধা দেয় বহুদিনের জন্য। আসলে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে অনবরত ওয়্যার আ্যন্ড টিয়ার হয়, তার সাথে অক্সিডেশন ড্যামেজ। এসব ক্ষয় পূরন করতে পারে রঙীন ফল ও সবজি তে থাকা আ্যন্টি অক্সিডেন্ট। সঠিক খাওয়া, যোগ ব্যয়াম, একটু শৃঙ্খলা পূর্ণ জীবন যে কোনো ব্যাক্তির ই ছোটো বেলা থেকেই শুরু করতে হয়। সেই সুঅভ্যাস ই শরীর ও মন কে সমানভাবে সুস্থ রাখে।
শারীরিক ও মানসিক সমস্যা গুলোর ভালো বা মন্দ থাকা নির্ভর করে পিনিয়াল পিটুইটারি, থাইরয়েড, আ্যড্রিনাল ইত্যাদি গ্ৰন্থিগূলির অতিরিক্ত ক্রিয়া বা কম ক্রিয়ার উপর। আসলে এই হরমোন গুলো শরীর ও মনের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে সুন্দর স্বাস্থ্য ও সুস্থ মন গঠিত হয়। এই ভাবেই দীর্ঘ জীবন নীরোগ শরীরে চলতে থাকে।
Be First to Comment