মৃদুলা ঘোষ: কলকাতা, ২৩মে, ২০২০। এটা চাই, ওটা চাই অর্থাৎ চাওয়া-এই চাওয়া সম্পূর্ণ না হলে কার্যসিদ্ধি হবে না, মান-সম্মান ক্ষুন্ন হবে। লজ্জা য় মুখ দেখাতে না পারা, ইত্যাদি বহুরূপে কল্পনা মনে র মধ্যে চিন্তার উদ্ভব ঘটায়। নানা প্রকার চিন্তা ই দেহ ও মনে উত্তেজনা পূর্ণ কঠিন টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। একেই বলে টেনশন। বার বার এই টেনশন বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন কারণে আমাদের মনে চাপ সৃষ্টি করে, একেই বলে স্ট্রেস। তখন মনের রোগ দেহের রোগে পরিনত হয়।
নানা প্রকার রোগ দেহের উপর প্রভাব বিস্তার করে, একে বলে সাইকো সোমাটিক ডিজিজ। সাইকো হলো মন আর সোমাটিক হলো দেহ, অধিকাংশ রোগের উৎস স্থল মন। যেমন মাথা ধরা, হজমের গন্ডগোল, অন্ত্রে র অসুখ, ডায়ারিয়া, পেপটিক আলসার, চুলকানি- এলার্জি। এছাড়াও, রেসপিরেটরি ডিজঅর্ডার যেমন-শ্বাসকষ্ট, হাপাঁনি ইত্যাদি। টেনশনের জন্য রক্ত সংবহন তন্ত্রের জটিলতায় রক্তচাপ বৃদ্ধি, এন্ডোক্রাইন সিস্টেম এ তারতম্য, হরমোনাল তারতম্য শুরু হয়। অনিয়ন্ত্রিত নার্ভাস সিস্টেম এর জন্য আ্যংজাইটি অফ নিউরোসিস, ফিয়ার সাইকোসিস প্রভৃতি অসুখে ঘুম না হওয়া, হঠাৎ রাগ হওয়া, খিটখিটে মনোভাব ইত্যাদি এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক রোগ হিসাবেই আসে। বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন ব্যক্তির নানা প্রকার স্ট্রেস বা অস্থিরতা দেখা যায়।
যেমন চাইল্ড স্ট্রেস, আ্যডোলেসেন্স স্ট্রেস, হাউস ওয়াইফ স্ট্রেস, ফ্যামিলি স্ট্রেস, অফিস এক্সিকিউটিভ স্ট্রেস, বিজনেস স্ট্রেস, ফিনান্সিয়াল স্ট্রেস, ইমোশনাল স্ট্রেস। শিশুদের যেমন চাহিদার শেষ নেই, তেমন সকাল থেকে রাত্রি নানা বিষয়ে বাচ্চাদের অভিভাবকদের চাপ, বাচ্চার নিজের ভয়ভীতি র চাপ, শিশু মনে স্বাভাবিক ভাব নষ্ট করে পরবর্তী কালে রোগ সৃষ্টি করে। বয়ঃসন্ধিকালে সেকেন্ডারী ক্যারেক্টার এর পরিবর্তন ঘটে। সেই সময় যৌন গ্ৰন্থিগুলির রস ক্ষরন ও হরমোনের তারতম্যর ফলে মন ও দেহ র পরিবর্তন হয়। কামনা বাসনার অনূভূতি সৃস্টি হয়। এই সময় থেকে টেনশন তৈরী হয়, তার থেকেই উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা শুরু হয়।
বাড়ির মহিলাদের সংসার নিয়ে মনপ্রাণ নিবেদিত হওয়ার জন্য যেকোন সাংসারিক সমস্যায় অত্যন্ত টেন্সড হয়ে পড়েন, এর থেকে হরমোনাল ইমব্যালান্সড নানা প্রকার সমস্যা সৃষ্টি করে।
অফিস এক্সিকিউটিভদের অফিস সংক্রান্ত মানসিক চাপ অনেক বেশি।
বিশেষত, চাকরি টিকিয়ে রাখার প্রতিযোগিতা, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করার মানসিক যন্ত্রনা দিন দিন সুস্থ মানুষ কে অসুস্থ করে তোলে। বিজনেস পার্টনার দের সমস্যা থাকে অন্য কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতায় সামিল হওয়ার চাপ, তাকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। এই চাপ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয় না, ফলে হাই প্রেসার, পেটের অসুখ সহ নানা বিরক্তি তাকে ঘিরে ধরে। যারা একটু বেশি ভাবপ্রবণ, আবেগপূর্ণ, সামান্য মানসিক চঞ্চলতায় কাতর হয়, সাধারণ ব্যাপার কে অনেক বড়ো করে দেখতে অভ্যস্ত তাদের মনের উপর স্ট্রেস বেশী পড়ে। এইসব ব্যাক্তি দের ইচ্ছা র বিরুদ্ধে কিছু করা মানে অন্যায় ভাবে জোর করা বা বাধ্য করা তাতে মনের রোগ সৃষ্টি হয়। এইজন্য বলে “stress and strain is the basic cause of all diseases. এই ভাবে টেনশন, স্ট্রেস, পরিস্থিতির অত্যাচার, মনকে ধীরে ধীরে নিষ্পেষিত করে দেয়, তাতে বহু অসুখের আতুরঘর হয়ে দাঁড়ায় এই মন।
ফলে, স্বাভাবিক জীবনযাপন বেদনা দায়ক হয়ে ওঠে। ক্রমশ মেটাবলিক ডিসর্ডার তৈরি হয়। ইন্টিরিয়র পিটুইটারি মাধ্যমে এন্ডোক্রাইন তন্ত্র সমূহ সুনিয়ন্ত্রিত কার্যের তারতম্য ঘটে। ফলে আভ্যন্তরীণ অনিচ্ছাধীন নার্ভের অন্তর্গত সিমপ্যাথিটিক ও বায়ো সিমপ্যাথিটিক নার্ভের কাজের ব্যাঘাত ঘটে। ফলে দেহ ক্রমশই অবসন্ন হয়ে পরে। মানব শরীর জুড়ে নানা রোগের সৃষ্টি। টেনশনে র জন্য কি হতে পারে, শরীর জুড়ে অসুখ আর মনের অসুখের কি সংঙ্গা সব ই নির্ধারিত হয় টেনশনের তারতম্য অনুযায়ী। তাই আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনে “নো টেনশন” বোর্ড কি ভাবে ঝোলাবেন তা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। সকল গ্ৰন্থির রাজা পিটুইটারি ও স্পাইনাল নার্ভ কে ঠিক রাখতে আপনি মনকে সমস্যা মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। এর জন্য ২৪ঘন্টাকে টাইম ম্যানেজমেন্টর মাধ্যমে ভাগ করুন আপনার বিভিন্ন কাজের গতি প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। জীবনে সবকিছু যে সঠিক ভাবে ডিসিপ্লিন ভাবে হয় না, তা আপনাকে বুঝতে হবে এবং বিশ্বাস ও করতে হবে। দৈনন্দিন কাজের অবসর সময় রাখুন যেখানে আপনি নিজের সঙ্গে কাটাতে পারেন।
টেনশন সহ্য করতে না পারলে তাকে বন্ধু করে নিন। আপনার বয়স যেমনই হোক না কেন নিয়মিত শরীর চর্চা, যোগাসন, সাঁতার কাটা, ইত্যাদি কাজ গুলি কে গুরুত্ব দিয়ে অভ্যাস করুন। আপনি অবশ্যই ভালো থাকবেন। আপনার পরিবারের কোনও সদস্য যদি টেনশন আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পরেন, তাহলে তাকে আরও ব্যতিব্যস্ত না করে, তাঁর অস্থিরতা কাটানোর চেষ্টা করুন। সংসারে, কর্মস্থলে, মানসিক চাপ থাকবেই। তাকে জয় করে সুস্থ, সুন্দর জীবন কাটানো আপনার ই দায়িত্ব।
মনে রাখবেন, আপনি সুস্থ, সতেজ থাকলে পরিবারের সদস্যরাও ভালো থাকবেন। অতিরিক্ত টেনশনে অসুস্থ বোধ করলে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তার বাবুর পরামর্শ গ্রহণ করবেন। তাই “নো টেনশন”।
Be First to Comment