মধুমিতা শাস্ত্রী, ২০ আগস্ট, ২০২০ঃ ফলের বাজারে আমরা নানারকমের ফল দেখতে পাই। এইসব ফলের মধ্যে অনেক ফল আমাদের অজানা অচেনা। এমনই একটি ফল হল ড্রাগন ফল। যদিও বর্তমনে এই ফলটির সাথে অনেকই পরিচিত। এখন ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গেও এই ফলের চাষ হচ্ছে। আগে ড্রাগন ফল থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা হতো। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এর ফুল ও ফল হয়। শীতের সময় সাধারণত এই ফল হয় না। জমিতে জল দাঁড়ায় না, প্রচুর আলো আছে এমন জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ ভালো হয়। সাদা, হলুদ, লাল বিভিন্ন রঙের ড্রাগন ফল দেখতে পাওয়া যায়। তবে লাল রঙের ড্রাগন ফলের টেস্ট ভালো বলে বাজারে এর চাহিদা বেশি।
ড্রাগন নামটি শুনে যেটি প্রথমেই আমাদের মনে আসে, ভয়ংকর একটি প্রাণীর কথা। যার মুখ দিয়ে আগুন বের হয়। কিন্তু এই ভয়ংকর প্রাণীটির নাম অনুযায়ী ফলটির নাম হয়েছে কারণ এটি দেখতে রূপকথার ড্রাগনের পিঠের মতো। নামটি ভয়ংকর হলেও ফলটি কিন্তু দারুণ লোভনীয় ও মনোমুগ্ধকর। এর পুষ্টিগুণের জন্য অনেকে একে ফলের রাজাও বলে থাকে। বিশ্ব বাজারে এই ফলের খুব চাহিদা। পাকা ফল না ধুয়ে অনেকদিন পর্যন্ত ফ্রিজে রাখা যায়। এর শাসাঁলো ফলের মধ্যে অসংখ্য কালোজিরের মতো দেখতে নরম দানা থাকে। ড্রাগন ফুল শুধু রাতে ফোটে। এই ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙের হয়। এই ফুলকে ‘মুন ফ্লাওয়ার’ অথবা ‘রাতের রাণী’ বলা হয়।
এবার আসা যাক এর উপকারী গুণগুলিতে। ড্রাগন ফলের একাধিক উপকারীতার জন্য বিশ্ব বাজারে এটি সমাদৃত। লোভনীয় এই ফলটি নানা পুষ্টি গুণে ভরপুর।
(১) কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া হৃদযন্ত্র ভালো রাখে।
(২) এই ফলের বীজে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যা দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
(৩) ওজন কমাতে সাহায্য করে।
(৪) বহুমূত্র রোগ সারায়।
(৫) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
(৬) ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করে।
(৭) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
(৮) ত্বক ভালো রাখে।
(৯) ড্রাগন ফলে প্রচুর ফাইকো নিউট্রিয়েন্ট থাকে, যা শরীরের প্রয়োজনীয় অ্যান্টি এক্সিডেন্ট যোগাতে সাহায্য করে।
(১০) মানসিক অবসাদ দূর করে।
(১১) অ্যাজমা ও অ্যালার্জিজনিত রোগ সারায়।
এছাড়া ড্রাগন ফলের খোসা খুবই পাতলা তাই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, খনিজ লবণ ও আঁশ থাকে। উজ্জ্বল লাল রঙের এই ফল থেকে চমৎকার রঙ পাওয়া যায়, যা সরবত তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ড্রাগন ফলে প্রচুর ফাইবার থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ফাইবার যুক্ত খাবার বেশি খেলে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা করোনারি হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। ড্রাগন ফল ডায়েটারি ফাইবারের ভালো উৎস। এই ফলের আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান থাকে। বিশেষ করে হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ও পটাসিয়ামের খুব ভালো উৎস। স্নায়ুতন্ত্র ঠিক রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রকৃতির দেওয়া এই ফলটির নাম ভয়ংকর হলেও গুণে কিন্তু অসাধারণ। তাই নামে না গিয়ে এর গুণ ও লোভনীয় স্বাদের জন্য খান।
Be First to Comment