Press "Enter" to skip to content

বলিউডে সুন্দরী অভিনেত্রীর অভাব কখনও ছিল না, এখনও নেই। এত সুন্দরীর ভিড়েও শাবানা আজমি বরাবরই নিজস্ব দীপ্তিতে উজ্জ্বল…….।

Spread the love

শুভ জন্মদিন শাবানা আজমি

বাবলু ভট্টাচার্য  : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘শেষের কবিতা’য় লাবণ্যর সৌন্দর্য বর্ণনায় লিখেছিলেন তা জ্যোৎস্না রাত্রির মতো অস্পষ্ট নয়, বরং ভোরবেলাকার মতো উজ্জ্বল। লাবণ্যর সৌন্দর্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল তার বুদ্ধির দীপ্তি। এই বিশেষণ প্রয়োগ করা যায় শাবানা আজমির ক্ষেত্রে।

বলিউডে সুন্দরী অভিনেত্রীর অভাব কখনও ছিল না, এখনও নেই। এত সুন্দরীর ভিড়েও শাবানা আজমি বরাবরই নিজস্ব দীপ্তিতে উজ্জ্বল। ‘আর্থ’ ছবির পূজা ইন্দর কিংবা ‘পার’ এর রামা – কোনো চরিত্রেই শাবানা আজমির বিকল্প কাউকে ভাবা যায় না। বাণিজ্যিক ও শিল্প- দুই ধারার ছবিতেই তিনি সফল। চির সবুজ এই অভিনেত্রী শতবর্ষের বলিউডের আকাশে অরুন্ধতীর মতোই স্থির।

শাবানা আজমির বাবা কাইফি আজমি ছিলেন বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক। মা শওকত আজমি ছিলেন ভারতীয় গণনাট্য সংগঠন আইপিটিএ’র সদস্য এবং প্রখ্যাত মঞ্চ অভিনেত্রী। বাবা-মা দু’জনেই ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। বামপন্থী, সাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে ওঠা শাবানা আজমির মনে সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার বোধগুলো গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে যায়।

মুম্বাইয়ে কুইন মেরি স্কুলে পড়ালেখা শুরু হয় তার। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞানে অনার্স করেন। এরপর পুনেতে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মেধাবী শিক্ষার্থী।

১৯৭৩ সালে পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউট থেকে পাস করার পর তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। খাজা আহমদ আব্বাসের ‘ফাসলা’ এবং কান্তিলাল রাঠোরের ‘পরিণয়’ ছবিতে সুযোগ পান তিনি। তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘অংকুর’ (১৯৭৪)। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত। জিতে নেন সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

সত্যজিৎ রায় তার ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ (১৯৭৭) ছবিতে খুরশিদ বেগমের ভূমিকায় বেছে নেন শাবানাকেই। মহেশ ভাটের ‘আর্থ’। শ্যাম বেনেগালের ‘নিশান্ত’, ‘জুনুন’, ‘সুসমান’, অন্তরনাদ’, ‘মান্ডি’। মৃণাল সেনের ‘খন্ডহর’, ‘জেনেসিস’, ‘একদিন আচানক’। সাইদ মির্জার ‘অ্যালবার্ট পিন্টো কো গুস্যা কিউ আতা হ্যায়’, সাই পারাঞ্জপায়ির ‘স্পর্শ’, ‘দিশা’। গৌতম ঘোষের ‘পার’, ‘পাতাং’। অপর্ণা সেনের ‘পিকনিক’ ‘সতী’। কল্পনা লাজমীর ‘এক পল’। দীপা মেহতার ‘ফায়ার’। শেখর কাপুরের ‘মাসুম’। খালিদ মোহাম্মদের ‘তেহজিব’ প্রভৃতি ছবিতে শাবানা আজমি দুর্দান্ত অভিনয় করে বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অভিনেত্রী হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছেন।

‘অমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘পারভারিশ’, ‘জোয়ালামুখি’ ‘আপনে পারায়ে’, ‘গডমাদার’ ,‘মাকড়ি’ ‘অবতার’, ‘থোড়িসি বেওয়াফাই, ‘স্বামী’, ‘ভাবনা’ ইত্যাদি বাণিজ্যিক ধারার ছবিতেও তিনি ছিলেন সফল।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত ‘স্বামী’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেন শাবানা আজমি। অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে ‘ম্যায় আজাদ হু’-তে সাংবাদিক চরিত্রে তিনি ছিলেন অনবদ্য। তেমনি ‘তেহজিব’ ছবিতে তারকা কণ্ঠশিল্পীর ভূমিকাতেও তিনি অসাধারণ।

শাবানা আজমি হলিউডের ছবি ‘সিটি অব জয়’ এবং ‘মাদাম সাওসাটজকা’তে অভিনয় করেছেন। মঞ্চ নাটকেও তিনি সফল। ‘তুমহারি অমৃতা’ শ্রুতি নাটকে ঢাকার মঞ্চে অভিনয় করে বাংলাদেশের দর্শকদের কাছ থেকে অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছিলেন নব্বই দশকে।

তিনি পাঁচবার জয় করেছেন সেরা অভিনেত্রীর ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চারবার সেরা অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার। ২০০৬ সালে ফিল্মফেয়ার আসরে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রী বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছেন আট বার। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছেন অনেকবার।

১৯৮৮ সালে পেয়েছেন পদ্মশ্রী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন মহাত্মা গান্ধী পুরস্কার ও রাজীব গান্ধী পুরস্কার।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কবি জাভেদ আখতারের স্ত্রী। এই বিয়েতে তার পরিবারের সদস্যরা রাজি ছিলেন না। কারণ জাভেদ আখতার ছিলেন বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। কিন্তু শাবানা আজমি তার ভালোবাসার মানুষকে আপন করে নিতে সমাজের কোনো বাধাই মানেননি।

শাবানা আজমি ৭০ বছর বয়সেও তার অভিনয় ক্যারিয়ারে যেমন ব্যস্ত তেমনি সমাজসেবামূলক কাজেও নিবেদিত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার কাজে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে প্রচার কাজের সঙ্গে যুক্ত। শিশু অধিকার রক্ষারও একজন কর্মী তিনি। এইচআইভি এইডস বিষয়ে সচেতনতামূলক কাজে তিনি যুক্ত।

১৯৯৭ সালে কংগ্রেস তাকে রাজ্যসভার সদস্য পদ দেয়। তিনি জাতিসংঘের পপুলেশন ফান্ডের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর। সমাজসেবামূলক কাজে বলিউডের আইকন হলেন শাবানা আজমি।

শাবানা আজমি ১৯৫০ সালের আজকের দিনে (১৮ সেপ্টে) হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণ করেন।

More from CinemaMore posts in Cinema »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.