Press "Enter" to skip to content

বর্তমান অতিমারির পরিস্থিতিতে এ বারের দুর্গোৎসবে বড় পুজো কমিটিগুলোর পরিকল্পনা, প্রয়োজনে ঘট পুজো করে নিয়ম রক্ষা করা হতে পারে……..

Spread the love

সংগীতা চৌধুরী : কলকাতা, ৩১ জুলাই, ২০২০।দুর্গোৎসব বাঙালির একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। সারা বছর ধরে হিন্দু তথা বাঙালিরা এই সময়টার জন্য সুদীর্ঘ অপেক্ষারত থাকে, কিন্তু এবার করোনা সংক্রমনের কারনে আমরা এক অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এই সংক্রমন প্রথম শুরু হওয়ার সময় ও আমরা আন্দাজ করতে পারিনি যে, এত দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে যাবে, কিন্তু সময় বলছে ক্রমশই তা লম্বা হচ্ছে। এখনও সেই রকম কোন আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন গৃহবন্দী থাকার পর বেশ কিছুদিন হল মানবকুল নিউ নর্ম‍্যাল-এর স্রোতে গা ভাসিয়েছে। প্রথমে আমরা আশা করেছিলাম যে দুর্গাপুজোর সময় অন্তত এই দু্ঃসময়ের কালো মেঘের ছায়া কেটে গিয়ে এক নিশ্চিন্ত জীবনে উৎসবে মেতে ওঠা যাবে। কিন্তু এখন সবই অনিশ্চিয়তার দোলাচলে। তাই এই অনিশ্চিয়তাকে সঙ্গী করেই বর্তমান করোনা আবহে বড় বড় পুজো কমিটিগুলো এ বছরের দুর্গাপুজোর পরিকল্পনা শুরু করেছেন। কেউ আবার আরও কিছুদিন অপেক্ষার পর পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও পক্ষপাতী বলে জানা গেছে। এখন দেখা যাক পুজো কমিটির কর্মকর্তারা কি বলছেন-

এই শারদীয়া দুর্গাপুজোর ব‍্যাপারে ‘সিংহী পার্ক সার্বজনীন দুর্গোৎসব’ কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি অভিজিৎ মজুমদার জানালেন যে,”
এবারের দুর্গোৎসব ফোরামের গাইড লাইন মেনেই অনুষ্ঠিত হবে। কোলকাতার ছোট বড় প্রায় সাড়ে তিনশো পুজো কমিটি এই ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’ -এর অধীনে রয়েছে। আমরা যে গাইড লাইনটা মানছি সেটা আমাদের রাজ‍্য সরকারের অনুমোদিত। এতে নির্দেশিত আছে, যেমন স‍্যানিটাইজার কিভাবে ব‍্যবহার করতে হবে। দর্শক সমাগম হলে, স্বাস্থ্য বিধি মেনে কিভাবে প্রতিমা দর্শন করা যাবে। তবে সোশ‍্যাল ডিস্টেনসিং অবশ্যই মেনে চলতে হবে। পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার সময়ও যাতে লোকের বেশি জমায়েত না হয় সেরকম ব‍্যবস্হা করতে হবে। তাছাড়া নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে মাস্ক ব‍্যবহার করেই অঞ্জলি দিতে হবে। এবং যে ফুল ব‍্যবহার হবে সেই ফুলগুলো ও আগে স্প্রে করে স‍্যানিটাইজ করে দিতে হবে। আলোর ব‍্যবহারের ওপর ও অনেক বিধি নিষেধ আছে। কারন আলোর চাকচিক্য কম হলে এ বছর দর্শকরা ওই আলোর চমক দেখার জন্য শুধুমাত্র রাতেই ভীড় না বাড়িয়ে যাতে সারাদিন ধরে ঠাকুর দর্শন করে। এছাড়া এবারে প‍্যান্ডেলের পাশে যে স্টল দেওয়া হবে সেখানে দুটো স্টলের মধ্যে তিন থেকে চার ফুট গ‍্যাপ থাকবে। তবে আমরা আগেই চিন্তা-ভাবনা করে এবারের বাজেট সত্তর শতাংশ কমিয়ে ফেলেছি। সেখানে অনেক কিছুই কাট ছাট করতে হচ্ছে। এবারে আমাদের তিন দিনের যে কমিউনিটি ভোগ হয় সেটাকে কমিয়ে আনা হবে। তবে কমিউনিটি ভোগ শেষ পর্যন্ত হবে কিনা তা এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নি, কারন এই পুরো ব‍্যাপারটির মধ্যে একটা সংক্রমনের ভয় থেকেই যাচ্ছে। এছাড়াও বেশ কয়েক বছর ধরে বানিজ্যিক ভাবে আমাদের প‍্যান্ডেলে কিছু টানেল ব‍্যবহার করা হচ্ছে, এবারে সেই ব্র্যান্ডেড টানেল থাকছে কিন্তু তার সঙ্গে স‍্যানিটাইজারের ব‍্যবস্হা থাকবে। তাতে দর্শকরা যখন ভেতরে ঢুকবে তাদের ওপর স্প্রে ছড়ানো হবে। আর থাকছে বিশেষ থার্মাল স্ক্রিনিং -এর ব‍্যবস্হা।” সংক্রমণ রোধের সব রকম ব‍্যবস্হা নিয়েই এবারের পুজোর ময়দানে নামতে চলেছে এই পুজো কমিটি। এখানকারই আরেক সদস্য অভিজিৎ সাহার মতে ,” ফোরামের নির্দেশগুলো যাতে সঠিকভাবে পালন করা যায় সে ব‍্যাপারে আমাদের যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।”

‘বোস পুকুর সার্বজনীন দুর্গোৎসব’ কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি কাজল সরকার ,যিনি ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’ -এর সভাপতি ও তাঁঁর মতে,” বর্তমান অতিমারির এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’ -কমিটি গত ১০ই জুলাই এক সভায় মিলিত হয়ে সুষ্ঠুভাবে পুজো করার জন্য কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। আমরা সকলে সেগুলো মানার চেষ্টা করবো। এবছর প‍্যান্ডেল ও প্রতিমার উচ্চতা খুব বেশি করা হবে না। কারন সরকারের সাহায্য নিয়ে চেষ্টা করা হবে যে প্রতিদিন অন্তত একবার পুরো প‍্যান্ডেল ও প্রতিমা যাতে স‍্যানিটাইজ করা যায়। এবারে ঠাকুরের ভোগ নিবেদনের জন্য গোটা ফল দেওয়া হবে। প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে পাশের ব‍্যবস্হা করা হবে, যাতে দর্শকদের ঠাকুর দর্শনের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া থাকবে। এতে ভিড় এড়ানো সম্ভব হবে। একবারে ২৫ জনের বেশি লোক প‍্যান্ডেলে প্রবেশ করানো যাবে না। প‍্যান্ডেলে প্রবেশ পথে থার্মাল স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক। স্ক্রিনিং-এর সময় কারো জ্বর ধরা পড়লে প‍্যান্ডেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ। আমাদের পুজোর প্রস্তুতি এখনো সে ভাবে শুরু হয় নি। খুঁঁটি পুজোও হয় নি। পরিস্হিতির দিকে নজর রেখে এগোচ্ছি। পুজো তো অবশ্যই হবে কারন আমরা পুজো প্রেমী মানুষ, তবে এবারের পুজোয় বৈভব প্রদর্শন একদমই হবে না।”

‘বাদাম তলা আষাঢ় সঙ্ঘ’-এর জেনারেল সেক্রেটারি সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন,” আমরা ‘বাদাম তলা আষাঢ় সঙ্ঘ’ , ‘৬৬ পল্লী’ এবং’ নেপাল ভট্টাচার্য্য লেন’ -এই তিনটি ক্লাব একত্রিত হয়ে একটাই পুজো করছি। তবে সবার পুজোই নিজের নিজের মত থাকবে, শুধু থিমের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে তা এক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।আরেকটি ব‍্যাপার হল এই প‍্যান্ডামিক সিচুয়েশনে সবাই যখন ভয়ে কাঁপছে তখন ফোরাম একটা গাইড লাইন দিয়েছে। মাননীয়া মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো আরও কিছু গাইড লাইন দেবেন। এক্ষেত্রে পুজোয় আমাদের যে বিশেষ চমক থাকছে সেটা হল ড্রাইভিং দর্শন। দর্শকরা গাড়ি করেই আমাদের এই তিনটি প‍্যান্ডেলের প্রতিমা দেখতে পারবেন। তাতে সংক্রমনের কোন ভয় থাকছে না। তাছাড়া অন‍্যান‍্য ব‍্যাপারেও আমরা সব রকম স্বাস্থ্য বিধি মেনেই পুজোটা করবো।”

‘দমদম পার্ক ভারতচক্র’- পুজো কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি প্রতীক চৌধুরী জানালেন,” আমরা প্রতি বছরই নিঃসন্দেহে বড় পুজো করি। কিন্তু এবারের প‍্যান্ডামিক সিচুয়েশনটাকে আমাদের সকলকে মাথায় রাখতে হবে। আমরা সবাই ‘ফোরাম ফর দু্র্গোৎসব’ কমিটির নিয়ন্ত্রনে একই ছাদের তলায় আছি। এখানে আমাদের যে গাইড লাইন দেওয়া হয়েছে আমরা সেটা ধরেই এবারের পুজোর পরিকল্পনা শুরু করেছি। এবছর পুজোর মন্ডপ এমন ভাবে তৈরি হবে যাতে দর্শক বাইরে থেকেই ভালোভাবে প্রতিমা দর্শন করতে পারেন, মন্ডপে না ঢুকেই। এতে কিছুটা ভিড় এড়ানো সম্ভব। তাছাড়া এবার যদি প্রতিযোগিতা হয়, সে ক্ষেত্রে ও আমরা চাইবো ১৫ জনের বেশি বিচারক যেন প‍্যান্ডেলে না প্রবেশ করেন। তাদের ও থার্মাল স্ক্রিনিং করেই ঢুকতে হবে। আমরা এ বছর পুজোর বাজেট সত্তর শতাংশ কমিয়ে ফেলেছি। পুজোর জাঁকজমক কমিয়ে আমরা সেটা অন‍্য খাতে খরচা করবো, এই যেমন ট‍্যাংকার এনে মন্ডপ ও তার সামনের রাস্তাঘাট স‍্যানিটাইজ করার চেষ্টা করবো। বাঙ্গালীর দুর্গাপুজো কখনোই বন্ধ হতে পারে না। তাই আমরা সমস্ত রকম প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে ও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।”

ত্রিধারা সম্মিলনীর জেনারেল সেক্রেটারি দেবাশিস কুমার স্পষ্টতই জানান যে,”আমরা এখনও পুজোর কোন রকম পরিকল্পনাই শুরু করিনি। সংক্রমন যে ভাবে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে এখনও কিছুদিন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা ছাড়া কিছু করার নেই। তাছাড়া আমি জানি না যে ফোরামের গাইড লাইন মানা কতটা সম্ভব। সে যাইহোক আমরা সেপ্টেম্বরের আগে কোন সিদ্ধান্ত নেব না। আর সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি যদি অনুকূল না হয়, তাহলে এবছর আমরা ঘট পুজো করেই নিয়ম রক্ষা করবো।”
দুর্গাপুজোর এখনও আড়াই মাস বাকি, তাই বর্তমান করোনা আবহে হতাশ না হয়ে নিউ নর্ম‍্যালের সঙ্গে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এরপর! কৈলাশ থেকে মা দুর্গা যা চাইবেন সেটাই আমরা মাথা পেতে নেব।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.