——————শুভ জন্মদিন ববিতা—————
বাবলু ভট্টাচার্য : বাংলা চলচ্চিত্রের জীবন্ত এক কিংবদন্তি অভিনেত্রী হলেন ববিতা। যিনি সাদাকালো থেকে রঙিন সেলুলয়েড, বাংলা চলচ্চিত্রের উঠোন জুড়ে যেন অরুনোদয়ের অগ্নিস্বাক্ষী। ববিতার অনবদ্য অভিনয়ের আলোয় উদ্ভাসিত ঢাকাই সিনেমা সৌন্দর্যের মুগ্ধতায় সিক্ত সাদাকালো থেকে রঙিন সেলুলয়েড। যতবারই পর্দায় এসেছেন ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে, ছুঁয়েছেন দর্শক হৃদয়। তাইতো সিনেমার পিচঢালা পথে যে আলোর মিছিল ববিতা সেই সংসারের নয়নমনি বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম বিজ্ঞাপন।
প্রকৃত নাম ফরিদা আক্তার পপি। চলচ্চিত্র জগতে ‘সুবর্ণা’ নামে প্রথমে এলেও পরবর্তীতে ‘ববিতা’ নামেই পরিচিতি পান। তার পৈতৃক ভিটা যশোর জেলায়। শৈশব এবং কৈশোরের অনেকটা সময়কাটে যশোরে। কৈশোরে মা হারানো ববিতার পড়াশুনার প্রতি আগ্রহটা ছিল শৈশব থেকে। ববিতার শিক্ষাজীবন শুরু হয় যশোরের দাউদ পাবলিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু কিছুদিন পর বড় বোন কোহিনুর আক্তার চাটনি (সুচন্দা) চলচ্চিত্রে প্রবেশের সূত্রে পরিবারসহ ঢাকায় স্থায়ী হন। তারপর তিনি গেণ্ডারিয়ার গ্লোরিয়া স্কুলে পড়াশুনা করেন। পরিবারের বিশেষত বড় বোন সুচন্দা ও তার স্বামী প্রয়াত জহির রায়হান এবং তার মায়ের অনুপ্রেরণায় চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন ববিতা। ১৯৬৮ সালে জহির রায়হানের ‘সংসার’ চলচ্চিত্রে শিশু শিল্পী হিসেবে ববিতার আত্মপ্রকাশ ঘটে। ঐ চলচ্চিত্রে তিনি রাজ্জাক ও সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। প্রথম নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন ১৯৬৯ সালে ‘শেষ পর্যন্ত’ চলচ্চিত্রে।
পরিচালক জহির রায়হান তার কর্মজীবনের শুরুতে পথ প্রদর্শন করলেও পরের পথটা তিনি একাই চলেছেন। শুধুমাত্র অভিনয়ের মাধ্যমে ৭০ দশকে তিনি নিজেকে অন্যতম সেরা অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। একে একে দর্শকদের উপহার দিতে থাকেন ‘টাকা আনা পাই’, ‘স্বরলিপি’, ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘আলোর মিছিল’, ‘মিস লংকা’র মতো অসংখ্য ব্যবসা সফল ও পুরস্কার প্রাপ্ত চলচ্চিত্র। তার অভিনীত মোট ছবির সংখ্যা ২৭৫টি। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘অশনি সংকেত’ (১৯৭৩) ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি লাভ করেন আন্তর্জাতিক শিল্পীর মর্যদা। ববিতা পরপর তিন বছর একটানা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রে “অনঙ্গ বউ” চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পান। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারী অসংখ্য পুরস্কার তিনি লাভ করেছেন। এজন্য তাঁকে ‘পুরস্কার কন্যা’ বলা হতো। তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশিবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ফরিদা আক্তার পপি ওরফে ‘ববিতা’ ১৯৫৩ সালের আজকের দিনে (৩০ জুলাই) বাগেরহাটে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment