স্মরণঃ ব লা ই চাঁ দ মু খো পা ধ্যা য় (বনফুল)
বাবলু ভট্টাচার্য : ‘বনফুল’ ছদ্মনামের আড়ালে এক সৃষ্টিশীল মানুষ। কবি, নাট্যকার, কথাসাহিত্যিক বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়। কৈশোর থেকেই তাঁর লেখালেখির শুরু। শিক্ষকদের কাছ থেকে নিজের নাম লুকোতে ছদ্মনামের আশ্রয় নেন।
বলাইচাঁদ বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মনিহারীতে জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৯ সালের ১৯ জুলাই। তাঁর ভাই খ্যাতনামা চিত্র পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়। পিতা সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায়, মা মৃণালিনী দেবী। তাদের আদি নিবাস হুগলি জেলার শিয়াখালা।
বলাইচাঁদের প্রাথমিক শিক্ষা মনিহারী স্কুলে। সাহেবগঞ্জ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন ১৯১৮ সালে। হাজারিবাগ সেন্ট কলম্বাস কলেজ থেকে আই. এস. সি পাশ করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। ১৯২৮ সালে পাটনা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম. বি. বি.এস ডিগ্রী লাভ করেন। প্যাথলজিস্ট হিসাবে চল্লিশ বছর কাজ করেছেন।
ভাগলপুরে ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করে ডাক্তার হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৬৮ সাল থেকে কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
‘মালঞ্চ’ পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে ১৯১৫ সালে তাঁর সাহিত্যিক জীবনের শুরু হয়। শনিবারের চিঠিতে ব্যঙ্গকবিতা ও প্যারডি লিখে সাহিত্য জগতে নিজের আসন স্থায়ী করেন। এছাড়াও প্রবাসী, ভারতী ও অন্যান্য পত্রিকায় ছোটগল্প প্রকাশ করেন। তিনি ৬০টি উপন্যাস, ৫৮৬ টি ছোটগল্প, হাজারের বেশি কবিতা ছাড়াও অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তাঁর কয়েকটি উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে– ‘অগ্নীশ্বর’, ‘ভুবনসোম’, ‘হাটেবাজারে’ প্রভৃতি ।
তাঁর গল্পের বিশেষত্ব ও অভিনবত্ব হচ্ছে স্বল্প অবয়ব। যা অণু গল্প নামে পরিচিত। নতুন ধারা ও বিচিত্র ধরণের কাহিনি নির্মাণে তিনি অভিনবত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মজীবনী : পশ্চাৎপট।
সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য পেয়েছেন শরৎ স্মৃতি পুরস্কার , রবীন্দ্র পুরস্কার, জগত্তারিণী পদক। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি. লিট উপাধি প্রদান করে। ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করে।
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ১৯৭৯ সালের আজকের দিনে (৯ ফেব্রুয়ারি) কলকাতায় পরলোকগমন করেন।
Be First to Comment