শুভ জন্মদিন তনুজাএ
বাবলু ভট্টাচার্য : এক নম্বর নায়িকা হয়ে থাকার ইচ্ছে ছিল না। বরাবর চেয়েছেন সুঅভিনেত্রী হতে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যক্তিত্ব আর প্রতিভার জোরে নিজের জায়গা পাকা করেছেন। তিনি বাঙালির চিরকালীন নন্দিনী— তনুজা।
তনুজা মুখার্জির বাবা কুমারসেন সমর্থ ছিলেন কবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক। মা শোভনা সমর্থ চল্লিশের দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। এই দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় তিন মেয়ে আর এক ছেলে। তনুজা ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান।
তনুজা মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ভারতীয় চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন; সক্রিয় ছিলেন ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। অনেক বিরতির পর ২০০২ সালে তিনি আবার কাজ শুরু করেন।
ভিলা থেরেসারে একটি কিন্ডারগার্টেন থেকে পড়াশোনা শুরু করলেও পড়াশোনা প্রতি আগ্রহ ছিল কম। তাই অভিনয় জগতে মনোনিবেশ করেন। তার সুন্দরী মায়ের সাজসজ্জা খুব ভালো লাগত।
বড় বোন নূতনের সঙ্গে ‘হামারি বেটিৎ’ (১৯৫০) ছবিতে ‘বেবি তনুজা’ নামে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। ‘ছাবিলি’ (১৯৬০) চলচ্চিত্রের তিনি মূল নায়িকা হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। ছবিটির পরিচালক ছিলেন তার মা শোভনা। তিনি কিদার শর্মার ‘হামারি ইয়াদ আয়েগি’ (১৯৬১) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে খ্যাতির শিখরে পৌঁছান।
পরিচালক শহীদ লতিফের ‘বাহারেঁ ফির ভি আয়েঙ্গি’ ছবিতে ‘ওহ্হাসকে মিলে হামসে’ গানের মাধ্যমে তিনি সবার নজর কাড়েন। জিতেন্দ্রর সঙ্গে ‘জিনে কি রাহে’ (১৯৬৯) ছবিতে অভিনয় করে ব্যাপক ব্যবসাসফল হন। ওই বছর তনুজা ‘পয়সা ইয়ে পেয়ার’ ছবির মাধ্যমে ফিল্ম ফেয়ারে সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার পান।
‘হাতি মেরে সাথি’ চলচ্চিত্রটি সফলতা লাভ করে। পরবর্তী সময়ে ‘মেরে জীবন সাথি’, ‘দো চোর’, ‘একবার মুসকরা দো’ (১৯৭২), ‘পবিত্র পাপী’ (১৯৭০), ‘ভূত বাংলা’, ‘অনুভব’ ইত্যাদি ছবিতেও তিনি অভিনয় করেন।
ষাট দশকের সময়ে তনুজা কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রেও সমানতালে অভিনয় শুরু করেন। তিনি মনে করেন, বাংলা চলচ্চিত্র তাকে অন্য একটা মাত্রা দিয়েছে এবং সেটাতে তিনি আত্মতৃপ্তি পেতেন।
বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি উত্তমকুমারের বিপরীতে অভিনয় করেন ‘দেয়া নেয়া’ (১৯৬৩), ‘অ্যান্টনি-ফিরিঙ্গি’ (১৯৬৭), ‘রাজকুমারী’ (১৯৭০) অন্যতম। উত্তমকুমার ছাড়াও তিনি সৌমিত্র চ্যাটার্জির বিপরীতে কয়েকটি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ‘তিন ভুবনের পাড়ে’ (১৯৬৯) ও ‘প্রথম কদম ফুল’ অন্যতম।
অনেক দিন বিরতির পর তিনি ‘সাথিয়া’ (২০০২), ‘রুলস’, ‘খাকি’ ও ‘সন অব সরদার’সহ আরও কিছু চলচ্চিত্র অভিনয় করেন।
ছোট পর্দাও বেশ কিছু অভিনয় করেছেন। ‘বাব্বান ভাই ভার্সেস বিমলা তাই’ ও ‘আরম্ভ’ উল্লেখ্য করা যেতে পারে।
জীবনে অনেক সংগ্রাম ও সাধনা করে তনুজা ভারতীয় চলচ্চিত্রের নিজের একটা জায়গা করে নিয়েছেন। হিন্দি, বাংলা, মারাঠি আর গুজরাতি ছবিতে কাজ করে এই অভিনেত্রী পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা।
সত্তরে ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২০ লাখ মানুষ মারা যায় এই ঝড়ে। সেই জলোচ্ছ্বাসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবির নির্মাণ করেন ‘সীমানা পেরিয়ে’ চলচ্চিত্রটি। এটি মুক্তি পায় ১৯৭৭ সালে। সেই ছবিতে অন্যান্যদের সাথে অভিনয় করেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তনুজা।
তনুজা মুখার্জি ১৯৪৩ সালের আজকের দিনে (২৩ সেপ্টে) মুম্বাইয়ের এক মারাঠি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment