স্মরণঃ ফি রো জা বে গ ম
বাবলু ভট্টাচার্য : তাঁর ‘ভীরু এ মনের কলি’ যেন ফুটেছিল কবির সান্নিধ্যের ছোঁয়ায়। কবি অসুস্থ হবার পর থেকে তাঁর গানের সংগ্রামের ভার অনেকটাই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি।
সুরের সকল শুদ্ধতা বজায় রেখে নজরুলসঙ্গীতকে তিনি পৌঁছে দিতে চেয়েছেন শ্রোতাসমাজের কাছে। সে সঙ্গীতের কোনো প্রকার বিকৃতি তিনি মেনে নিতে পারতেন না কখনই, তাই কবির পর তিনিই নজরুলগীতির প্রথম স্বরলিপিকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
ফরিদপুরের এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন ফিরোজা বেগম। বাবা খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল ছিলেন বৃটিশ সরকারের প্রথম মুসলমান সরকারি কৌঁসুলি। মা বেগম কওকাবুন্নেসা।
উপমহাদেশীয় সংগীতের অন্যতম পুরোধা ছিলেন ফিরোজা বেগম। সংগীতের সব শাখাতেই ছিল তাঁর দৃপ্ত পদচারণা। তবে নজরুলসংগীতে নিজেকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
ফিরোজা বেগম ১৯৪২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কলকাতায় নিয়মিত গান করেছেন। এইচএমভি থেকে তার প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয় ১৯৪২ সালের ডিসেম্বর মাসে। আধুনিক গান, রবীন্দ্রসংগীত, গজল, ভজন সব গানই তখন করেছেন।
১৯৫১ সালে কলকাতায় কমল দাশগুপ্তের সুরে বেশকিছু গান করেন। এভাবেই তাঁর সংগীত গুরু হয়ে ওঠেন কমল দাশগুপ্ত। তিনি নজরুলের কথার সুর দিতেন, আর ফিরোজা বেগম সেগুলো কণ্ঠে তুলে নিতেন।
১৯৫৬ সালে কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ফিরোজা বেগম। তবে ১৯৭৪ সালে স্বামীর মৃত্যু ও দেশভাগের সময় অনেক ঘাত-প্রতিঘাত আর সংগ্রামের ভেতর দিয়ে ফিরোজা বেগম হয়ে যান নজরুলসংগীত সম্রাজ্ঞী।
ফিরোজা বেগম স্বাধীনতা পুরস্কার, শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, স্যার সলিমুল্লাহ স্বর্ণপদক, দীননাথ সেন স্বর্ণপদক, সত্যজিৎ রায় স্বর্ণপদকসহ আরও অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১২ সালে তাঁকে বিশেষ নজরুল সম্মাননা দেয়।
ফিরোজা বেগম ২০১৪ সালের আজকের দিনে (৯ সেপ্টেম্বর) ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment