মোল্লা জসিমউদ্দিন: মঙ্গলকোট, ২২ জুন, ২০২০।বিগত বাম জমানায় মঙ্গলকোটে জনপ্রিয় সিপিএম নেতা ছিলেন ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়। নিখিলানন্দ সর পরবর্তী মঙ্গলকোটে তাঁর জনপ্রিয়তার ধারে কাছে কেউ ছিলেন না। একাধারে দলীয় পদে লোকাল কমিটির সম্পাদক থেকে জেলা কমিটির প্রভাবশালী সদস্য। আবার প্রশাসনিক ক্ষেত্রে টানা দুবার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে জেলাপরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ। রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে একজন কবাডি খেলোয়াড় হিসাবে খ্যাতি ছিল জেলাজুড়ে। বাম আমলে মঙ্গলকোটের ‘মুখ্যমন্ত্রী’ হিসাবে তাঁকে জানতো এলাকাবাসী। ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে জেলাপরিষদ আসনে বিপুল ভোটে জিতেছিলেন ফাল্গুনী মুখার্জি। ব্লকের বিডিও থেকে থানার ওসি এহেন নেতার আগমনে তটস্থ থাকতো সে সময়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য মদন ঘোষের অনুগামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন দলীয় অন্দরমহলে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর যা ট্রাক রেকর্ড ছিল তাতে ২০১১ সালে মঙ্গলকোট বিধানসভার সিপিএম প্রার্থীর অন্যতম দাবিদার ছিলেন তিনি। উল্লেখ্য, কাটোয়া নিবাসী জেলা সিপিএমের সম্পাদক মন্ডলীর অন্যতম সদস্য অচিন্ত্য মল্লিকের সহধর্মিণী সাধনা মল্লিক সেই সময় মঙ্গলকোটের বিধায়িকা। ২০০৯ সালে ১৫ জুন সকালের দিকে বাড়ি (ধান্যরুখি) থেকে খেরুয়া যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হলেন ফাল্গুনী মুখার্জি। স্থানীয়দের একাংশর দাবি ছিল – ২০১১ সালে বিধানসভার অঙ্ক কষে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিল দলেরই একাংশ’। আবার অন্যপক্ষের দাবি ছিল – ‘ নিগনে বিদ্যুৎ চুরি রুখতে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়ায় এই খুন’। সেই সময় সিপিএমের দাবি ছিল – ‘২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য ভিত্তিক কিছুটা অক্সিজেন পেয়ে তৃনমূল ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে এই খুন ঘটায়’। তবে যাইহোক এই খুনে নাম জড়ায় পূর্বস্থলীর হামিদপুরের ভাড়াটে খুনিদের। এখন যেমন শিমুলিয়া ১ নং অঞ্চল সভাপতি ডালিম সেখ খুনে সেই হামিদপুরের ভাড়াটে খুনিদের নাম জড়িয়েছে! এই খুন পরবর্তী মঙ্গলকোটের ভাল্ল্যগ্রাম – মাঝীগ্রাম অঞ্চল গুলিতে ব্যাপক লুটপাট চলে। শয়ে শয়ে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠে। সে বছর ১৫ জুলাই কংগ্রেসের বিধায়কদের এক প্রতিনিধি দল মঙ্গলকোটে এসে লাল সন্ত্রাসের শিকার হয়। জমির আলপথ বেয়ে ধুতিপড়া কং বিধায়ক মানস ভুইয়ার সেই দৌড় কেউ ভোলেন নি। হার্মাদ হানায় কাটোয়ার কং বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায়ের মাথায় সেলাই পড়ে কয়েকটি। তৃণমূলের সব নেতা- নেত্রী সেই সময় ফাল্গুনী খুন পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে ঘনঘন মঙ্গলকোটে এসেছিলেন। সেই সময় তৃনমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাথরুণ সংলগ্ন এক রাজনৈতিক সভায় প্রকাশ্যে মঞ্চে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন – ‘ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে ফাল্গুনী মুখার্জি খুনে প্রকৃত খুনিদের ধরতে সিবিআই তদন্ত করাবেন’। সেই সময় মঙ্গলকোট ব্লক তৃনমূল সভাপতি প্রণব মন্ডল একাধারে সিপিএম অপরদিকে পুলিশের সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন দলনেত্রীর সিবিআই তদন্ত দাবিতে সরব হওয়ার জন্য। নিহত সিপিএম নেতা ফাল্গুনী খুনে মামলা হয়েছিলো তৃনমূল নেতা বিকাশ চৌধুরী সহ দশজনের বিরুদ্ধে। মামলাকারী লিখিত অভিযোগে জানিয়েছিলেন – ‘ মাঠে চাষাবাদ করার সময় খুনের ঘটনাটি ঘটে ‘। অভিযোগকারী পেশায় রেশন ডিলার ছিলেন। সেই সময় বিকাশ চৌধুরীর নেতৃত্বে মঙ্গলকোট জুড়ে রেশন আন্দোলন চলছিল। তাই রাজনৈতিক শত্রুতা থেকে এহেন খুনের মামলায় নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি উঠে তৃণমূলের পক্ষে। কাটোয়া মহকুমা আদালতে বিচার চলাকালীন স্থানীয় ভূমি সংস্কার দপ্তরের রিপোর্টে দেখা যায় – ওই অভিযোগকারীর কোন জমি খুনের ঘটনাস্থলে নেই। যখন জমি নেই তখন কিভাবে নিজ জমিতে চাষাবাদ করছিলেন অভিযোগকারী? মামলাটি তথ্য ও প্রমাণের অভাবে খারিজ হয়ে যায়। তাহলে প্রশ্ন ওঠে সিপিএম নেতা ফাল্গুনী মুখার্জি কে খুন করলো কে বা কারা? মঙ্গলকোটের বাম জমানায় বসন্ত দত্ত, হরপ্রসাদ গোস্বামী, গোপেশ্বর পাল, শিশির চ্যাটার্জির মত হেভিওয়েট নেতারাও খুন হয়েছিলেন। তাঁদের খুনের মামলায় এখনও প্রকৃত খুনি কে বা কারা তা জানা যায়নি। ফাল্গুনী খুনে ১১ টা বছর কেটে গেছে। অজয় নদীতে বয়ে গেছে বিরামহীন জলের স্রোত। সেই সময়ের স্রোতে আজও অধরা ফাল্গুনী মুখার্জির খুনি কারা??
ফাল্গুনীর খুনি কে? তা জানতে পারলো না মঙ্গলকোট……
More from GeneralMore posts in General »
- ইউসিএমএএস আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ২০২৪: বিশ্ব মানসিক গণিত প্রতিভার এক অসাধারণ প্রদর্শনী….।
- Restaurateurs Serve Up Festive Cheer This Christmas: NRAI Santa’s Cause….
- Princeton Club Becomes the Heart of Festive Cheer this Christmas….
- তুমি বহুরূপে সেজে এসো হাসি মজা দিয়ে শুধু ভালোবেসো…।
- Sau Saal Pehle: Sonu Nigam’s Homage to Mohammed Rafi on His 100th Birth Anniversary….
- দীর্ঘ প্রতিক্ষিত “রোগ পরিচয় ” বইটি প্রকাশিত হল !….
Be First to Comment