মধুমিতা শাস্ত্রী: ২৬ জুন, ২০২০। মিষ্টি পাকা আম পছন্দ করেন না, এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। পাকা আম খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। অনেকে একে ফলের রাজাও বলেন। এটি গ্রীষ্মকালীন ফল। তবে এখন প্রায় সারা বছরই আম পাওয়া যায়। এটি আমাদের জাতীয় ফল। আম পাকা ও কাঁচা দুটোই খাওয়া যেতে পারে। তবে পাকা আমের স্বাদ ও গন্ধ আমাদের বেশি আকর্ষন করে।
ভারতে অনেক জাতের আম পাওয়া যায়। বিভিন্ন জাতের আমের শ্বাদ যেমন ভিন্ন তেমনি তাদের পাকার সময়ও এক নয়। ভারতের বিখ্যাত ও সুস্বাদু কয়েকটি আমের নাম হল- গোপালভোগ, হিমসাগর, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, লখনাভোগ, ফজলি, আম্রপালি, আশ্বিনা, চৌসা ইত্যাদি।
আমের উপকারীতা একাধিক। আমে আছে ভিটামিন A, C, ফলিক অ্যাসিড। এটি আঁশযুক্ত ও পটাসিয়াম সমৃদ্ধ একটি ফল। এছাড়া আছে কপার ও ক্যালশিয়াম। আমের মধ্যে আছে এমন কিছু উপাদান যেটা আমাদের স্তন ক্যান্সার, লিউকোমিয়া, কোলোন ক্যানসার,প্রোস্টেট ক্যানসার প্রভৃতিকে প্রতিহত করতে পারে। এর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। ত্বকের ক্ষেত্রেও ভালো। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। আমের মধ্যে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকার ফলে আমাদের হার্টকে ভালো রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে আছে টার্টারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড ফলে আমাদের দেহে ক্ষারের সমতা বজায় রাখে। এটা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণ সমৃদ্ধ ফল। এতে ভিটামিন A ও C থাকার ফলে আমাদের দেহের ইমিউনিটি সিস্টেমকে ভালো রাখে। আম আঁশযুক্ত খাবার বলে এটি হজম ক্রিয়াতে সাহায্য করে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এটি ক্ষুধা কমায় ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি পুরুষের পৌরুষত্ব বাড়ায় তাই একে লাভ ফ্লুটও বলা হয়ে থাকে। আমে থাকা উচ্চ মাত্রায় বিটাকেরোটিন অ্যাজমা প্রতিরোধ করে।
আমরা আম খেয়ে আঁটি ফেলে দিই, কিন্তু এই আঁটিতেও একাধিক ভালো গুণ আছে। যাদের খুসকির সমস্যা আছে, কিছুতেই খুসকি যাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে ২-৩ চামচ সরষের তেলের সঙ্গে এক চিমটে আমের আঁটির গুড়ো মিশিয়ে চুলের গোড়ায় হালকা মাসাজ করলে খুসকি একেবারে চলে যাবে আবার চুলও উজ্জ্বল হবে।
সুস্থ্ মারি ও ঝকঝকে দাঁত পেতে চান? তাহলে আমের আঁটির গুড়োকে মাজনের মতো ব্যবহার করুন। ত্বকের রুক্ষতাও দূর করে আমের আঁটি। সরষের তেলের সঙ্গে আমের আঁটির গুড়ো মিশিয়ে ভালো করে মাসাজ করুন। দিনে অন্তত একবার করতে হবে। এক্ষেত্রে হাতে বা অন্য কোথাও মিশ্রণটি লাগিয়ে দেখে নিতে হবে কোনো অসুবিধে হচ্ছে কি না। এছাড়া আমের আঁটির গুড়ো সেবন করলে উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল, ও মাত্রাতিরিক্ত সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এখন অনেকেরই প্রশ্ন হতে পারে, আমের আঁটি গুঁড়ো করবো কীভাবে? এটি শুকনো করে হাতে বা মিক্সিতে গুঁড়ো করতে পারেন।
উপকারীতায় আম পাতাও কম যায় না। যাদের সুগার আছে ৫-৬ টা আমপাতা সারা রাত ভিজিয়ে সকালে সেদ্ধ করে এর ক্বাথ খেলে ইনসুলিনের ব্যবহার কমাতে সাহায্য করে।
এতদিন সুস্বাদু আমেরই কদর ছিল আমাদের কাছে। কিন্তু আমপাতা ও আঁটিব এতো গুণ জানার পর মনে হয় না আর কেউ আম খেয়ে আঁটি ফেলে দেবেন। যাই হোক নারী-পুরুষ,শিশু -বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাই আম খান, ভালোবেসে খান।
Be First to Comment