Press "Enter" to skip to content

প্রাচীনকাল থেকেই বাঁ-হাতিরা বিশ্বব্যাপী নানা সামাজিক অপবাদ ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন……।

Spread the love

আজ আন্তর্জাতিক বাঁ-হাতি দিবস

বাবলু ভট্টাচার্য : বাম হাত ব্যবহারকে প্রাধান্য দিয়ে যারা কাজ করেন তাদের অধিকার রক্ষা ও সচেতনতার জন্য বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে ৯-২০ শতাংশ মানুষ বাঁ-হাতি। ইউরোপের ১৭টি দেশের মানুষের লেখার অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে এক গবেষণায় বলা হয়, ২.৫ থেকে ১২.৮ শতাংশের মতো মানুষ বাঁ-হাতে লেখেন।

প্রাচীনকাল থেকেই বাঁ-হাতিরা বিশ্বব্যাপী নানা সামাজিক অপবাদ ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। একসময় সারা পৃথিবীতেই বাঁ-হাতিদের দুর্ভাগা ও বিদ্বেষপরায়ণ ভাবা হতো। ইউরোপিয়ান ভাষাও এ জন্য অনেকটা দায়ী। যেমন রাইট (Right) শব্দের অর্থ ঠিক এবং ডান। শুধু এই যুক্তিতে প্রাচীন ইউরোপে বাঁ-হাতিদের অবহেলার করা হতো। ল্যাটিন রাজদরবারে ব্যবহৃত শব্দ ‘sinister’-এর অর্থ হলো বাম। আর এটিকে বিবেচনা করা হতো দুর্ভাগ্য আনার প্রতীক হিসেবে।

আধুনিক সময়ে এসেও বাঁ-হাতিদের নিয়মিতই পড়তে হয় বিভিন্ন সমস্যায়। নিত্যদিনের ব্যবহারের প্রায় সব সরঞ্জামই তৈরি করা হয় ডানহাতিদের ব্যবহার উপযোগী করে। এজন্য গাড়ি চালানো, দরজার লক খোলাসহ বিভিন্ন কাজে ঝামেলা পোহাতে হয় বৈকি। যারা বাঁ-হাতি হয়ে জন্মগ্রহণ করেন তাদের কাজ করার সময় ডান হাত ব্যবহারে উৎসাহ দেন মা-বাবারা।

বাঁ-হাতি হওয়ার কারণঃ

পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষ ডানহাতি। কিন্তু অল্প কিছু মানুষ কেন বাঁ-হাতি হন? মনে প্রশ্ন জাগতে পারে বৈকি। গবেষকরা বাঁ-হাতি হওয়ার কারণ হিসেবে ৪০টির মতো জীন শনাক্ত করেছেন।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবৃত্তীয় বিভাগের প্রধান ড. টিম ক্রোর মতে, সম্ভবত মানবদেহের পিসিডিএইচ-১১এক্স জিন হাতের ব্যবহারের এ বিষয়টি নির্ধারণ করে দেয়। এ ছাড়া মাতৃগর্ভে থাকা ডাই ইথাইল স্টিলবোস্টেরলের সংস্পর্শ বাঁ-হাতি হতে সহায়ক।

কেবল মানুষই নয়, অনেক পশু-পাখিও বাঁ-হাতি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়। এক গবেষণায় বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ান ক্যাঙ্গারুরা সব বাঁ-হাতি। সেখানে বলা হয়, দ্বি-পদী প্রাণীর ক্ষেত্রে হয়তো এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু চতুষ্পদ প্রাণীরা এ ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে না।

আরো কিছু তথ্য, যা হয়তো আপনি জানেন নাঃ

১. গবেষণায় দেখা গেছে, বাঁ-হাতিদের ডান পাশের মস্তিস্ক বেশি ব্যবহৃত হয়। এ জন্যই সাধারণত বাঁ-হাতিরা বেশি উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে, তাদের আইকিউ বেশি এবং সংগীত ও গণিতে তাদের পারদর্শিতা ডানহাতিদের চেয়ে ভালো।

২. ক্রীড়াজগতে ক্রিকেট, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, টেনিস, বেসবল খেলায় বাঁ-হাতিরা বেশ সুবিধা আদায় করে নিতে পারে।

৩. ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের সফল রাজনীতিবিদদের অনেকেই বাঁ-হাতি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে চারজন বাঁহাতি ছিলেন।

৪. নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মগ্রহণকারী বেশির ভাগ শিশুই বাঁ-হাতি হয়। গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের সময় সন্তানের অবস্থান এবং প্রিম্যাচিউর (অর্থাৎ ২৪ সপ্তাহের আগে এবং জন্মগত ওজন ১.৫ কেজির কম) হলে বামহাতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৫. বিশ্বে বেশির ভাগ যন্ত্র এবং সরঞ্জাম ডান হাতিদের উপযোগী করে বানানো। এ জন্য প্রতিবছর বিশ্বে দুই হাজারের বেশি বাঁ-হাতি বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হন।

৬. মা-বাবা দু’জন বাঁ-হাতি হলে সন্তানদের শুধু শতকরা ২৬ জন বাঁ-হাতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৭. ডান হাতিদের তুলনায় বাঁ-হাতিদের এলার্জি এবং মাথাব্যথার (মাইগ্রেন) সমস্যা বেশি হয়। এ ছাড়া বাঁ-হাতিরা অনিদ্রা ও তোতলামির সমস্যায়ও ভোগেন।

More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.