——–জন্মদিনে স্মরণঃ প্রবোধকুমার সান্যাল——
বাবলু ভট্টাচার্য : হিমালয় ভ্রমণ কথার প্রবাদপুরুষ তিনি। দীর্ঘ ভ্রমণ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি খ্যাতনামা সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও পরিব্রাজক। তিনি কল্লোল গোষ্ঠীর অন্যতম জনপ্রিয় লেখক প্রবোধকুমার সান্যাল। বাবা রাজেন্দ্রলাল, মা বিশ্বেশ্বরী দেবী। আদি নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুরে। চার বছর বয়সে পিতৃহীন হয়ে মামা বাড়িতে বাল্য ও কৈশোর কাটে। স্কটিশচার্চ কলেজিয়েট স্কুল ও সিটি কলেজে পড়াশোনা করেন। জীবিকার জন্য নানা পেশা অবলম্বন করেছেন। সেনাবাহিনী, ডাকবিভাগ, ছাপাখানা ও মাছের ভেড়িতে কাজ করেছেন। যুগান্তর পত্রিকায় রবিবাসরীয় সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক ছিলেন (১৯৩৭-৪১) প্রবোধকুমার। তাঁর সাহিত্যিক ছদ্মনাম ‘কীর্তনিয়া’। মহাত্মা গান্ধীর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেছিলেন।
তাঁর প্রথম গল্প ‘মার্জনা’ কল্লোল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রথম উপন্যাস ‘যাযাবর’ প্রকাশিত হয় ১৯২৮ সালে। সমসাময়িক সমস্ত পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। প্রায় দেড়শো বই লিখেছেন। উল্লেখযোগ্য বই : নদ ও নদী, উত্তর হিমালয় চরিত, শ্যামলীর স্বপ্ন, উত্তরকাল, দেবত্মা হিমালয়, রাশিয়ার ডায়েরি, হাসুবানু, জলকল্লোল, পরিব্রাজকের ডায়েরি, পর্যটকের পত্র, বনস্পতির বৈঠক ইত্যাদি। শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ‘মহাপ্রস্থানের পথে’। তার কাহিনি অবলম্বনে বহু সফল চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদক, শিশিরকুমার পুরস্কার, মতিলাল পুরস্কার, শরৎ পুরস্কার এবং আনন্দ পুরস্কার পান। ১৯২৩ সালে মায়ের সঙ্গে হরিদ্বার-হৃষিকেশ ভ্রমণ করেন। মায়ের হাত ধরেই হিমালয়কে চেনা। সেই শুরু। তারপর হিমালয়ের অমোঘ টানে ছুটে গেছেন বারবার।
১৯৩২ সালে হিমালয়ের চারশো মাইল পথ পায়ে হেঁটে পরিক্রমা করেন। সেই অভিজ্ঞতার কাহিনি নিয়েই লিখেছিলেন ‘মহাপ্রস্থানের পথে’– যা বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যে বিশেষ স্থান অধিকার করেছে। টানা চার বছর হিমালয় সন্নিহিত নানা স্থান ভ্রমণ করেন, সেই অভিজ্ঞতা এবং হিমালয়ের নানা প্রদেশের মানুষের জীবন, সংস্কৃতি, সমাজ আর নানা মানুষের সংস্পর্শে আসার অভিজ্ঞতা নিয়ে তার রচিত ‘দেবতাত্মা হিমালয়’ প্রকাশিত হয়। দেশ-বিদেশের বহু স্থানে ভ্রমণ করেছেন। ১৯৭৮ সালে উত্তর মেরু ভ্রমণ করেছেন ৭৩ বছর বয়সে। কলকাতা হিমালয়ান এসোসিয়েশন ও হিমালয়ান ফেডারেশন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৭ সালে ভারতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের হয়ে পাকিস্তান সফরে যান। আফ্রো-এশীয় সাহিত্য সম্মেলনে তাসখন্দে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৫৬-৫৭ বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
১৯৮৩ সালের ১৭ এপ্রিল এই ভ্রমণপ্রিয় মানুষটির জীবনের পথ চলা চিরদিনের মতো থেমে যায়।
প্রবোধকুমার সান্যাল ১৯০৫ সালের আজকের দিনে (৭ জুলাই) উত্তর কলকাতার চোরবাগানে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment