Press "Enter" to skip to content

{প্রদীপের সঙ্গে আলাপ = প্রলাপ}(পর্ব-০২৭) “ম্যাজিকের লীলা” বোঝা দায়………..।

Spread the love

ডঃ পি সি সরকার (জুনিয়র) বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী ও বিশিষ্ট লেখক। ১২, জানুয়ারি, ২০২১। পৃথিবী য্যামন সেই কবে থেকে, নাকে দড়ি বেঁধে চাঁদকে বাইঁ-বাইঁ করে....ঘোরাচ্ছে তো ঘোরাচ্ছেই...কি যেন একটা শোধ করার কথা দিয়েও কথা রাখছে না বলে! ঠিক তেমনি, কি যেন একটা কাজের বদলা নিতেই যেন সূয্যিমামা আমাদের পৃথিবীটাকে লেত্তি টেনে লাট্টুর মতো বন্-বন্ করে ঘুরিয়ে নিজের চার দিক নাচাচ্ছে ।

পৃথিবীও যেন মুখে বলতে চাইছে, ওরে বাবারে সারা দিন রাত ঘুরে ঘুরে পাক খেয়ে হাপিয়ে গেছি।

ও সবে কান দিতে নেই। গোরুর গাড়ির ক্যাচর- ম্যাচরের মতো বা ‘কুজি-বুড়ি’র প্যাচালের মতো অর্থহীন আক্ষেপ কথা। সেই ছোট্ট বেলার থেকে শুনে আসছি । শীতের সকালে হি-হি করে হাড় কাঁপানি ঠাণ্ডাতে, বা বর্ষার ঝম্-ঝমানি বা সস্তায় সেরে ফেলা , প্যাচ-প্যচানি, রাস্তায় মাত্র এক কোমর জল-জমানি খুচরো বৃষ্টিই হোক, সূয্যিমামা কিন্তু কুয়াশার আলোয়ান জড়িয়ে, মাঙ্কি ক্যাপ পরে, অথবা না হয়, বর্ষাতি গায়ে, মেঘের ছাতা মাথায়, হাওয়ার ছাঁট -জলে ভিজতে ভিজতে, ঠিক ডিউটি মাফিক কাজ করতে উঠে পরেন । আগে আমার ভয় লাগতো, ইশ্ যদি একদিন ভুল করে ভার্তীয়া কোম্পানির কারখানার 'ভোঁ'-টা দেরী করে বাজে, দেরীতে সৃয্যিমামার ঘুম ভাঙ্গায়, তা হলে কি কষ্টই না হতো !!?? সূয্যিমামা ধর -ফর করে উঠবেন। তারপর ছুটতে ছুটতে এসে দেখবেন,সব্বাই ক্ষীর ঘুম-ঘমুচ্ছে, চোররা চুরি করে সবাই দেরী করে বাড়ি ফিরছে! পুলিশ দাঁত মাজছে। কলকাতার সেই সকাল!

রাস্তায় লোকজন, গাড়ি-টারি নেই। ট্রাফিক সিগন্যাল ফালতু ডিউটি দিচ্ছে! প্রথম ট্রামটা বাড়ি সামনের বাঁকটায় ঢিল খাওয়া রাস্তার কুকুরের মতো কেঁকিয়ে কেঁদে কোনো প্যাসেঞ্জার ছাড়াই জোরে এসে মোড়টা অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। পাড়ার ঠাকুর মশাই ফুল তুলতে বের হয়ে কিছু পান নি।…এমন সব হালকা হাই তোলার সঙ্গে চিন্তার অভাবনীয় দৃশ্য। তারপর না হয় যখন সন্ধে বেলায় এদিক ওদিক দু-একটা বাড়িতে শাঁখ বাজবে, তখন সেটা শুনে উনি পাটে ডুব-সাতার দিতে ধীরে সুস্থে যেতে পারেন। ওটা ঠিক সময় মতোই বাজে। নইলে সন্ধেই হবে না। মা ওই ডিউটিটা প্রায়ই আমাকে দিতেন। বিকেল না ফুরোলেও আগে আগেই বাড়ি ফিরতাম। দেরি করবো কেন? একা একা কি দেরি করা যায়? কোনোও বন্ধুই ছিলো না আমার। বন্ধু টন্ধু হলো কলেজে ওঠার পর। হ্যাঁ, তাইতো! সেই তখন থেকেই আমি আর সন্ধেবেলায় শাঁখ বাজাই নি ।!!! হ্যাঁ, পূজোর সময় বাজাতাম। লক্ষ্মীপূজো আর সরস্বতী পূজোয়। তবে সত্যি কথা, পরীক্ষায় পাশ করার পর আর সরস্বতী পূজোয় বাজাই নি। এখনও ঠাকুরের দিকে তাকাতে কেমন লজ্জা লজ্জা করে। তবে হ্যাঁ, লক্ষ্মীপূজোতে...এই তো সেদিন পর্য্যন্ত বাজিয়েছি। আমার খুব দম ছিলো। মিনিট খানেকের মতো টানতে পারতাম। সবাই খুব অবাক হতেন। তারপর, ওই যেদিন আমি নিজেই অবাক হয়ে দেখলাম, আমার মেয়েরা, আমার বৌ আর ডাক্তার বাবু সবাই আমার দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হাসতে শুরু করলেন...আমি বিছানায় শুয়ে আছি, সে দিন পর্যন্ত। তারপর আর বাজাই নি। এখন আমার ছোট মেয়ে মুমতাজ বাজায়। আমি সাবধান করে দিয়েছি, অতো লম্বা সময় ধরে নয়। মাথা ঘুরে যেতে পারে। একটু একটু করে তিনবার বাজাও।

এ ব্যাপারে আমি কড়া নজর রাখি। সূয্যিমামার ওই জাদু লেত্তিটা, যেটা টেনে তিনি পৃথিবীটাকে পাক খাইয়েছেন, সেটাকেই বাবা চির জীবন তাঁর 'ইণ্ডিয়ান রোপ ট্রিক'-এর ম্যাজিক দড়ি হিসেবে ব্যবহার করে আমাকে দিয়ে গেছেন। সেই দড়িটাকেই আমি এই দিগন্ত থেকে ওই দিগন্ত পর্য্যন্ত টানটান করে বেঁধে তার ওপর ব্যালেন্স করে হেঁটে দেখাচ্ছি। দড়ির একপ্রান্ত বেঁধেছি পশ্চিমের শেষ প্রান্তে, পূর্ব দিকে শুরুর ঠিক মুখ। পূর্ব দিক শুরু কি জাপান থেকে? মোটেই না। ফিজিদ্বীপুঞ্জের অক্ষাংশ শূণ্য ডিগ্রী থেকে। ওখানে

পূবের শুরু । আবার তিনশো ষাট ডিগ্রী ঘুরে পশ্চিম ওখানেই শেষ।সেখানেও বেঁধেছি দড়ির ওই প্রান্ত। ওই দুই-এর মাঝখান দিয়েই গেছে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা। কোনোও দাগ দেওয়া নেই। অঙ্কের হিসেব আর বাস্তবের জমি ওখানে মিশে ম্যাজিক জগতের চৌহদ্দির কথা ঘোষণা করছে। ওই দেশে গিয়েও আমরা সদলবলে ইন্দ্রজাল দেখিয়েছি। একটানা দু-মাস।
নীচের ছবিটা আমি তুলেছি , আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার ওপাশে পূব দিকে আমাদের তিন উত্তরসূরী, নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি, আমার তিন কণ্যে, মানেকা, মৌবনি আর মুমতাজ- কে রেখে । আর বর্তমান এবং গত প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে জয়শ্রী এবং ফটোগ্রাফার আমি রয়েছি পশ্চিম পাশে, এপাশে। এদিকটা হচ্ছে আজ, গতকাল, গত পরশু ইত্যাদি। আর ওপাশে দেখতে পাচ্ছি আগামীকাল, আগামী পরশু ইত্যাদি। মাঝখান দিয়ে অদৃশ্যভাবে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ইণ্ডিয়ান রোপ ট্রিকের মতো রূপকথা হয়ে বিরাজ করছে।
“অবাস্তবের বাস্তব রূপ আমি দেখিয়াছি।”…”জন্ম
জন্মান্তরেও ভুলিব না..।” আপনাদের দেখালাম।

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.