ডঃ পি সি সরকার (জুনিয়র) বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী ও বিশিষ্ট লেখক। ১৫, জানুয়ারি, ২০২১। বহুবছর আগে যখন আমি এবং জয়শ্রী নিউ দিল্লীতে আইফ্যাক্স হলে প্রথম 'শো' করি তখন আমার বড় মেয়ে মানেকাকে কলকাতাতেই রেখে আসতে হয় আমার শ্বশুর বাড়িতে, লেখাপড়ার কারণে। তার আগে ও আমাদের সঙ্গেই ঘুড়তো, ড্রেসিং রুমেই লেখাপড়া করতো জয়শ্রীর কাছে। কিন্তু এবার স্কুল থেকে আপত্তি করায়, ছুটি পায়নি। এই প্রথম বাবা-মাকে ছাড়া থাকবে। শুনেই ও স্বাভাবিক ভাবেই কাঁদতে শুরু করে। আমি ওকে কোলে নিয়ে বলি, "কেঁদোনা প্লীজ্। তুমি কাঁদলে আমিও কাঁদবো, আর হাসবো না। গম্ভীর হয়ে ম্যাজিক করবো। মন খারাপ হয়ে কাজে ভুল হবে, সবাই আমাকে খারাপ বলবে..।" ও কাঁদা বন্ধ করে। কিন্তু ফোঁপানি বন্ধ হয় না। চোখ দিয়েও অঝোরে জল গড়িয়ে চলেছে। আমি বলি,"এ কি? চোখে জল কেন? তার মানে তো তুমি কাঁদছো!! আমার কথা শুনলে না। "ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়েই ছোট ছোট দুহাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে, কেটে কেটে জবাব দেয়, "চে--ষ--টা ক--রছি, পা--রছি না--।" আমি দুহাত দিয়ে ওর চোখ মুছিয়ে বুকে চেপে ধরে বলি, "তুমি আমারই একটা টুকরো, তোমাকে পারতেই হবে।" বলে নিজের চোখ মুছি।

মানেকা বলে, "সব জিনিষ কি পারা যায়?
যায় না। তুমি ই তো বলেছিলে পারা যায় না।”
হঠাৎ যেন ও বড় হয়ে যায়! প্রতিবাদীর মতো ফোস্ করে উঠে শাসন করে!!!! আমি অবাক হই !
“কখন বললাম আমি , সব জিনিষ করতে পারা যায় না?! আমি বলিনি তো !! “
-“এই তো সেদিন …তুমি খালি সিগারেট খাও দেখে মা তোমাকে বললো তুমি খেও না, ছেড়ে দাও…তখন তো তুমিই বললে সব জিনিষ ছাড়া যায় না। …হাত চলে যায়…”
আঃ !! আমার পিঠে মহাকাল যেন শপাং করে একটা চাবুক মারলেন। আমি সিধে হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম।
“আরও আরও সখী , আরও আরও,
এমনি করে আমায় মারো ..”
–“কী বললে তুমি ? সিগারেট খাওয়া ছাড়া যায় না ?!? হাঃ। এই মুহূর্ত থেকে আমি সিগারেট খাওয়া ছাড়লাম।
এই হলো আমার সিগারেট ছাড়ার কারণ।
আমি ছিলাম চেইন স্মোকার। ডজন দুয়েক শখের লাইটার ছিলো। সব ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি। আজ এতো বছর হলো সিগারেট খাইনা। মানেকাও ওর কথা রেখেছে। রেখেছে একটা শর্তে। গরমের ছুটীতে ওকে নিয়ে যেতে হবে।
“ব্যাস্ এই টুকু? সেটা কি আর বলে দিতে হবে? সেটা তো বটেই।… আর কিছু চাইলে বলো।”
হ্যাঁ, আর একটা শর্ত আছে। ওর সামনে দিয়ে টা টা করে যাওয়া চলবে না। ও যখন স্কুলে থাকবে, তখন চলে যেতে হবে।

অপারগ আমরা।তাই করেছি। পরে শুনি, ও বাড়ি ফিরে এসে এ -ঘর ও-ঘর দেখে, মাথা নীচু করে আমাদের খাটের ওপর চুপ করে বসেছিলো। কাঁদেনি।
প্লেনে জয়শ্রী আমায় একটা প্রশ্ন করেছিলো। “লেখাপড়ার শেষ কোথায়?” আমি বিজ্ঞের মতো জবাব দিয়ে ছিলাম “সিগারেটের ধোঁয়ায়”।
্


Be First to Comment