Press "Enter" to skip to content

প্রতিবাদী জীবনে এবং কবিতায় বাংলাভাষার অদ্বিতীয় কবি; শঙ্খ ঘোষ। জৌলুসহীন, শাদামাটা, নিরিবিলি জীবনের নিখাদ ভদ্রলোক ছিলেন….।

Spread the love

জন্মদিন স্মরণঃ শ ঙ্খ ঘো ষ

“আমি তো আমার শপথ রেখেছি/অক্ষরে অক্ষরে
যারা প্রতিবাদী তাদের জীবন/দিয়েছি নরক করে।”

[স-বিনয় নিবেদন / শঙ্খ ঘোষ]

বাবলু ভট্টাচার্য : পূর্ববাংলায় জন্মে, শৈশব-কৈশোর কাটিয়ে, পশ্চিম বাংলায় চলে গেছিলেন চিত্তপ্রিয় ঘোষ; অতঃপর যিনি বাঙলা ভাষায় কাব্যদেবীর বরপুত্র হবেন, হয়েছিলেন; নাম ধারণ করবেন শঙ্খ ঘোষ; ধারণ করেছিলেন। কেননা যে, শঙ্খে কান পাতলে, সমুদ্রের গর্জন শোনা যায়। শঙ্খের সেই ধর্মও রপ্ত করেছিলেন কবি।

রবীন্দ্র-জীবনানন্দ পরবর্তী বাঙলা কবিতায়, স্বয়ং কাব্যদেবীর বরপ্রাপ্ত হতে পেরেছেন মুষ্টিমেয় যে কয়জন কবি; তাদেরই অগ্রনাম এই দার্শনিক প্রজ্ঞাময় ঋষি কবি শঙ্খ ঘোষ। কবিতার করণকৌশল ও শৈলিতে অনিবার্য শব্দের নিপুণ পোচ মেরে নিজের সময়কে চিত্রায়িত করার জন্য তিনি যে ক্যানভাস বেছে নিয়েছিলেন; সেটা এতই বিশাল ও বিস্তৃত যে, সহসাই সেটাকে আমাদের বোধ ও উপলব্ধি ধারণ করতে সক্ষম ছিল না।

তার কাব্য ও জীবন একে অন্যের পরিপূরক। তার জীবন কবিতাকে যাপন করেছে; আর কবিতা ধারণ ও লালন করেছে জীবনকে। তার কবিতা ও জীবনযাপনে, কর্মে কোনো ছলনা ও ভণ্ডামি ছিল না। তিনি কথায় ও কাজে অসাংঘর্ষিক।

শঙ্খ ঘোষের কবিতায় যে প্রতিবাদ তা শিল্পময়তার শানে শানিত, কিরিচের মতো ধারালো; লক্ষ্যবস্তু কেটে চিরে দু’ফালি হয়ে দূরে ছিটকে পড়ার অনেক পরে বুঝতে পারা যায়: চিরলো।

প্রতিবাদী জীবনে এবং কবিতায় বাংলাভাষার অদ্বিতীয় কবি; শঙ্খ ঘোষ। জৌলুসহীন, শাদামাটা, নিরিবিলি জীবনের নিখাদ ভদ্রলোক ছিলেন।

মণীন্দ্রকুমার ঘোষ ও অমলা ঘোষের সন্তান শঙ্খ ঘোষ। প্রাথমিক লেখাপড়া পাবনায় ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে বাংলায় স্নাতক হন। স্নাতোকত্তর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। চার দশক সাফল্যের সঙ্গে শিক্ষকতা করেছেন তিনি।

বিধান শিশু উদ্যানের এক অনুষ্ঠানে কবি সেইসাথে ডঃ দেবীপ্রসাদ দুয়ারী, লেখক ও প্রকাশক ত্রিদিপ চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক মিহির গঙ্গোপাধ্যায় ও বিধান শিশু উদ্যানের সম্পাদক গৌতম তালুকদার।

জীবনের একটা বড় সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন শঙ্খবাবু। তৈরি করেছেন বহু যশস্বী ছাত্রছাত্রীকে। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অর্ঘ্য নিয়ে আজীবন সেই ছাত্রছাত্রী, অনুরাগীরা তাঁকে ঘিরেছিলেন।

তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি হলঃ ‘দিনগুলি রাতগুলি’, ‘নিহিত পাতাল ছায়া’, ‘এখন সময় নয়’,, ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’, ‘আদিম লতাগুল্মময়, ‘মুর্খ বড়ো সামাজিক নয়’, ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘তুমি তো তেমন গৌরী নও’, ‘পাজরে দাঁড়ের শব্দ’, ‘প্রহর জোড়া ত্রিতাল’, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘বন্ধুরা মাতি তরজায়’, ‘ধুম লেগেছে হৃৎকমলে’, ‘লাইনেই ছিলাম বাবা’, ‘গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ’, ‘শব্দের ওপরে শামিয়ানা’, ‘ছন্দের ভিতের এত অন্ধকার’ প্রভৃতি।

শঙ্খ ঘোষ গদ্যরচনাতেও সমান পারদর্শী। বাংলা কবিতার ছন্দ নিয়ে তাঁর গবেষণামূলক গ্রন্থ রয়েছে। রবীন্দ্রসাহিত্যেও রয়েছে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য।

কবি শঙ্খ ঘোষ সাথে সাহিত্যিক ও সংগীতশিল্পী বুদ্ধদেব গুহ।

তাঁর লেখা গদ্যগ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য—’নিঃশব্দের তর্জনী’, ‘ছন্দের বারান্দা’, ‘শব্দ আর সত্য’ ‘শব্দ নিয়ে খেলা’, ‘সকালবেলায় আলো’, ‘ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ’, ‘কালের মাত্রা ও রবীন্দ্র নাটক, ‘এ আমির আবরণ’, ‘নির্মাণ আর সৃষ্টি’, ‘কল্পনার হিস্টিরিয়া’, ‘জার্নাল’, ‘ঘুমিয়ে পড়া অ্যালবাম’ প্রভৃতি।

১৯৭৭ সালে ‘বাবরের প্রার্থনা’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান তিনি। কন্নড় ভাষায় লেখা গিরিশ কারনাডের ‘রক্তকল্যাণ’ নাটকটি বাংলায় অনুবাদ করে সাহিত্য অকাদেমি পান ১৯৯৯ সালে। ২০১১ সালে শঙ্খ ঘোষ পদ্মভূষণে ‌সম্মানিত করে কেন্দ্র।

বাংলা কবিতার এই মুকুটহীন সম্রাট চিরকালের জন্য চলে যান ২১ এপ্রিল ২০২১।

শঙ্খ ঘোষ ১৯৩২ সালের আজকের দিনে (৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

More from PoemMore posts in Poem »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.