রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ::–
ডাঃ দীপালোক বন্দোপাধ্যায় : ৯ মে ২০২২। প্রতিটি শিক্ষিত বাঙালির দুটি জন্মদিন ৷ একটা নিজের ৷ অন্যটি আজ বিশ্বকবির জন্মদিনে৷ যেদিন কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ী আলো করে এসেছিলেন বিশিষ্ট ব্রাহ্ম চিন্তাবিদ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫) ও সারদা দেবীর (১৮৩০-১৮৭৫) অষ্টম পুত্র (কনিষ্ঠ) বাংলার উজ্বলতম রত্ন “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন” সেইদিন ছিল (২৫ বৈশাখ, ১২৬৮, ইং- ৭ মে, ১৮৬১)৷ এই দিনেআমরা সবাই ষোলআনা বাঙালি ৷ কারন , তিনি বিশ্বের সবচেয়ে মধুর (ইউনেস্কোর মতে) ভাষাকে করে তুলেছিলেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষা ৷
সাহিত্য ও সংস্কৃতির সবক্ষেত্রে তাঁর অবাধ বিচরন৷
অথচ বাল্যকালে প্রথাগত শিক্ষা গ্রহনে অসম্মত হয়েছিলেন। তিনি একাধারে কবি , সংগীতস্রষ্টা ,
ছোটগল্পকার , ঔপনাসিক , প্রাবন্ধিক , নাট্যকার ,
কথাসাহিত্যিক , কন্ঠশিল্পী , চিত্রকর , দার্শনিক ,
শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক। রবি ঠাকুর একমাত্র ব্যক্তি যাঁর লেখা দুটি গান ভারতের “জনগণমন” ও বাংলাদেশের – “আমার সোনার বাংলা ” জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পেয়েছে ৷
এমনকি শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতেও রয়েছে তাঁর অবদান ৷ প্রথম অইউরোপীয় হিসাবে তিনি ১৯১৩ সালে “গীতাঞ্জলী” কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ ” Song offering” এর জন্য নোবেল পুরস্কার পান। পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম সেরা এই সাহিত্যিকের লেখা পড়তে অনেক বিদেশী বাংলাভাষা শিখেছেন ৷ যিনি শিক্ষাদানের নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ করে সারা পৃথিবীকে একত্রিত করেন নিজের প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে ৷ সেই যুগে তিনি বুঝেছিলেন চাষবাসের জন্য বৈজ্ঞানিক শিক্ষার উপযোগিতা ৷ তিনি বহু বিপ্লবীকে গোপনে সহায়তা করেছেন ৷ স্যার বা নাইট উপাধি ত্যাগ করেছেন জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে। তাঁর গান ও কবিতা ভারত ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসাধারন ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। উনি গান্ধীজীকে ” মহাত্মা ” এবং গান্ধীজী তাঁকে “গুরুদেব” উপাধিতে ভূষিত করেন ৷
সে সময়ের বাংলা সাহিত্যের উদীয়মান তারকা নজরুলকে তিনি নিজের “বসন্ত” গীতিনাট্যটি উৎসর্গ করেন ৷
আর বিদ্রোহী কবি তাঁকে উৎসর্গ করেছিলেন নিজের “সঞ্চিতা ” কাব্যগ্রন্থ ৷ ভানুসিংহ ছদ্মনামে
কিছু লেখাও লিখেছিলেন ৷ এমনকি ব্রজবুলির মত মিশ্র ভাষায় ৷ মাত্র ১৪ বছর বয়সে কবি মা হারা হন ৷ ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর ২২ বছর ৭ মাস বয়সে বিয়ে করেন ১০ বছরের ভবতারিণী দেবীকে ৷ বড়দা দ্বিজেন্দ্রনাথ ছোট বৌমার নাম পাল্টিয়ে রাখেন
“মৃণালিনী দেবী”৷ তাঁদের ৫ টি সন্তান হয় ৷ তিন মেয়ে ও দুই ছেলে ৷ মেয়েদের নাম মাধুরীলতা (বেলা) , রেণুকা (রানি) ও মীরা ( অতসীলতা) ৷ রবিঠাকুরদের
বহু আগে বাড়ী ছিল বর্ধমান জেলায় ৷ দীন কুশারীর পর তাঁরা চলে যান খুলনার “দক্ষিণডিহি ” ৷ জগন্নাথ কুশারী ৷ মুসলমান সংস্পর্শের জন্য এঁদের বলা হত পিরালী ব্রাহ্মণ ৷ পরে এই বংশ কলকাতার জোড়াসাঁকোর মেছোবাজারে চলে আসে ৷ তাঁর কবিতা , ছোটগল্প , উপন্যাস , নাটক , প্রবন্ধ , সমালোচনা , পত্রসাহিত্য , রম্যরচনা , ভ্রমণকাহিনী ও সঙ্গীত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ৩২ খন্ড রবীন্দ্র রচনাবলীতে ৷ তিনি লিখেছেন ৫২ টি কাব্যগ্রন্থ , ৩৮ টি নাটক , ৩৯ টি প্রবন্ধ , ৯৫ টি গল্প ও ১৯১৫ টি গান ৷ যা একজীবনে সাধারন মানুষের উপলব্ধিতো দূর অস্ত পড়াও প্রায় অসম্ভব ৷ রবীন্দ্র নৃত্য , বাংলার একমাত্র নাচ হিসাবে বিশ্বে পরিচিত ৷ এই প্রতিবেদক গিয়েছিলেন তাঁর স্মৃতি বিজড়িত দুই বাংলার জায়গাগুলিতে ৷ যাকে এক কথায় বলে যায় রবীন্দ্রতীর্থ ৷ এই প্রতিবেদক জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ী একসময় প্রায়ই যেতেন যেটা ছিল কবির জন্মস্থান৷ শান্তিনিকেতনও নিয়মিত যেতেন ৷ সেটা পৌষমেলা , বসন্তোৎসব বা অন্য কোন সময় ৷
গিয়েছেন কুষ্টিয়া শহর থেকে গড়াই নদী পেরিয়ে তাঁর কুঠিবাড়ী “শিলাইদহে “৷ যাকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী ৷ শাহ্ জাদপুরে যেখানে সাত বছর (১৮৯০-৯৭) কবি ছিলেন ৷ যেখানকার যমুনা তাঁর লেখায় উঠে এসেছে ৷ এই প্রতিবেদক গিয়েছেন নাগর নদী পার হয়ে নওগাঁর পতিসরে ৷ কবি র শ্বশুর বাড়ীর গ্রামে খুলনায় বিশ্বকবিকে প্রণাম জানাতে ৷ বিশ্বকবির ১৬১ তম জন্মদিনে তাঁকে প্রণাম জানায় নিউজ স্টারডম পরিবার৷
*কভার ছবি – সৌজন্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চিত্রশিল্পী সনাতন দিন্দা।*
Be First to Comment