Press "Enter" to skip to content

পুলিশের হাতে ধরা দিতে চাননি প্রফুল্ল চাকী…..। নিজের দিকে বন্দুকের নল ঘুরিয়ে, দু’বার গুলি ছোঁড়েন তিনি। একটি গুলি তাঁর বুক ভেদ করে যায়, অন্যটি মাথার খুলি।

Spread the love

শুভ জন্মদিন প্রফুল্ল চাকী

বাবলু ভট্টাচার্য : ২ মে ১৯০৮। সেদিন এক বাঙালির কারণেই আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়েছিল এক বাঙালি বিপ্লবীকে। আগেরদিন অর্থাৎ ১ মে তারিখে ধরা পড়ে গেছেন ক্ষুদিরাম বসু।

মজঃফরপুরের সর্বত্র ছড়িয়েও গেছে সেই খবর। ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে, দুই বাঙালি বোমা ছুঁড়ে হত্যা করেছেন মিস ও মিসেস কেনেডিকে। এক বাঙালি ধরাও পড়েছে। অপরজন তখনও বেপাত্তা। খোঁজ খোঁজ…

দীনেশচন্দ্র রায়ের কানেও গিয়েছিল সেই খবর। দীনেশচন্দ্র প্রফুল্ল’র ছদ্মনাম। মজঃফরপুর থেকে চারটে স্টেশন দূরে, সমস্তিপুরে গিয়ে পৌঁছলেন তিনি। হাঁটতে হাঁটতেই। সেখানে, আশ্রয় নিলেন ত্রিগুণাচরণ ঘোষের বাড়িতে। রাতে ত্রিগুণাবাবুই প্রফুল্ল’কে তুলে দিলেন মোকামাঘাট গামী ট্রেনে।

সেই ট্রেনে ছিলেন মজঃফরপুরের আরও এক প্রবাসী বাঙালি। নাম নন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর। আগেই শুনেছিলেন মজঃফরপুরে দুই বাঙালির বোমা নিয়ে হামলার কথা।

প্রফুল্ল’র সঙ্গে কথাবার্তায় তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি তাঁর মাতামহের মাধ্যমে পুলিশের কাছে আর্জি জানান, সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করার জন্য। পরের দিন অর্থাৎ ২ মে সকালে মোকামা ঘাট স্টেশনে গ্রেপ্তারের অনুমতি মেলে।

এর আগেই নন্দলালের প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে প্রফুল্ল চলে গিয়েছিলেন ট্রেনের অন্য কামরায়। মোকামাঘাট স্টেশনে নেমে, নন্দলাল প্রফুল্ল’র কাছে আগের রাতের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চান এবং তাঁর মালপত্র একটু দেখে রাখতে বলেন। প্রফুল্ল সরল মনে দাঁড়িয়ে থাকেন।

স্টেশন মাস্টারের ঘর থেকে দুজন সাক্ষী জোগাড় করে এনে, নন্দলাল প্রফুল্লকে বলেন ‘তোমার প্রতি আমার সন্দেহ হচ্ছে, তাই আমি তোমাকে গ্রেপ্তার করব।’ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান প্রফুল্ল। এক বাঙালি তাঁকে গ্রেপ্তার করবে, তা তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি। প্রশ্ন করেন – ‘তুমি বাঙালি হয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করছ!’

পুলিশের হাতে ধরা দিতে চাননি প্রফুল্ল। নিজের দিকে বন্দুকের নল ঘুরিয়ে, দু’বার গুলি ছোঁড়েন তিনি। একটি গুলি তাঁর বুক ভেদ করে যায়, অন্যটি মাথার খুলি। মোকামাঘাট স্টেশনে লুটিয়ে পড়েন প্রফুল্ল।

প্রফুল্ল’র মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় মজঃফরপুর স্টেশনে। সেখানে তাঁকে শনাক্ত করেন ক্ষুদিরাম। এরপরও থামেনি ইংরেজদের ‘ভৃত্য’ পুলিশের নির্যাতন।

শনাক্তকরণের জন্য প্রফুল্ল’র মাথা কেটে নেওয়া হয়। ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে সেই মাথা একটা কেরোসিনের টিনে ভরে, স্পিরিটে চুবিয়ে পাঠানো হয় কলকাতায়, গোয়েন্দা দপ্তরে। সেখানে শনাক্ত হওয়ার পর, মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয় তাঁর মাথাটি।

আর বাকি দেহ? ডোমের হাত দিয়ে সেই দেহ ফেলে আসা হয় শ্মশানে। বেওয়ারিশ হিসেবে। শিয়াল-কুকুরের মুখে।

এই নির্মমতার পরে, বিপ্লবীরা অবশ্য চুপ থাকেননি। কয়েকমাস পরেই, ৯ নভেম্বর রাত্রে হত্যা করা হয় নন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

প্রসঙ্গত, প্রফুল্ল’ই হলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ।

প্রফুল্ল চাকী ১৮৮৮ সালের আজকের দিনে (১০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের বগুড়া জেলার বিহার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

More from SocialMore posts in Social »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.