হায়দার আলী খান: ৩ জুলাই, ২০২০। হিন্দু ভক্তদের অন্যতম গন্তব্য স্থান উড়িষ্যার পুরী জেলার জগন্নাথ দেবের বিগ্রহ দর্শন এবং সেই সাথে বলরাম দেব, সুভদ্রা দেবী সহ মন্দির দর্শন। প্রতি বছর রথ যাত্রার সময় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। এই বছরের পরিস্থিতি একদম ই আলাদা, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর জন্য সাধারণ ভক্তদের পুরী জেলায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। খুব ই অল্প সংখ্যক মানুষ এই বছরের রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। পুরী তে “জগন্নাথ দেব”, উল্টো রথের পরের দিন সোনা বেশে তার ভক্তদের দর্শন দেন। মন্দিরের রত্ন ভান্ডার থেকে সোনার বিভিন্ন ধরনের গহনা দিয়ে সু সজ্জিত করা হয় জগন্নাথ দেব, বলরাম দেব এবং সুভদ্রা দেবী কে। এই বেশ কে রাজরাজেশ্বর বেশ ও বলা হয়।
উল্টো রথের দিন নিজের গুণ্ডিচা মন্দির থেকে বিদায় নিয়ে রথে করে শ্রীমন্দিরে ফেরেন, বলরাম এবং সুভদ্রার রথ সিংহদ্বার এ পৌঁছালেও , জগন্নাথ দেবের রথ, রাজবাড়ী শ্রী নাহার এর ওখানে দাঁড়ায়, মা লক্ষ্মী, জগন্নাথ দেবের স্ত্রী মন্দিরের ছাদ থেকে রথ কে দেখবেন যে তার প্রভু ঠিক ভাবে ফিরলেন কিনা, যেহেতু ওনাকে সাথে করে নিয়ে যাননি, তার জন্য মা লক্ষ্মী অভিমান করেন, এবং হেরা পঞ্চমীর দিনে রথের অংশ ভেঙে দেন, সেই কারণে যে সময় জগন্নাথ দেব ফেরেন ওনার ও ভয় থাকে যদি ঢুকতে না দেন তার অর্ধাঙ্গিনী! বউকে কে না ভয় পায়, সাধারন মানুষ হোক বা ভগবান হোক। এবার মা লক্ষ্মী মন্দির থেকে পালকিতে করে রথের কাছে যাবে স্বামী জগন্নাথ দেবের সাথে দেখা করতে।
জগন্নাথ দেব তার গলার হার খুলে লক্ষ্মী দেবী কে দেবেন উপহার হিসেবে, ভেবে নিন এটা এক প্রকার মাখন লাগানো, এর পর মন্দিরের ঢোকার পথ কিছু টা হলেও খুলে যাবে। মন্দিরে প্রবেশের পর জগন্নাথ দেব ভোগ পাবেন তা না হলে খিদে পেট নিয়ে থাকতে হবে, কারণ রান্নাঘর তো মা লক্ষ্মী সামলান। মালা টা নিয়ে মা লক্ষ্মী আবার চলে যান মন্দিরে, কিন্তু জগন্নাথ দেব এবং বাকি দুজন রথেই বসে থাকেন, আগামী তিন দিন, রথে থেকে তার ভক্তদের দর্শন দেন। প্রথম দিন সোনা বেশ, দ্বিতীয় দিন অধর পান, তার পরের দিন হয় নীলাদ্রি বীজে, সেইদিন জগন্নাথ দেব শ্রী লক্ষ্মীকে রসগোল্লা দেন, যাতে মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়, ওটা গ্রহন করলে, মন্দিরের সিংহদ্বার খোলা হয়, তিন দেব দেবী মন্দিরে আবার প্রবেশ করে এবং রথ যাত্রার পুরো অনুষ্ঠান এখানেই সমাপ্ত হয়।
শেষে এটাই বোঝা গেলো , যেখানে ঘুরতে যাবেন বউ কে নিয়ে যাবেন, না হলে মা লক্ষ্মী তো রসগোল্লা তে সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন, আপনার স্ত্রী কিসে খুশি হবে বুঝতে পারবেন না, এটাই এক সুন্দর মেলবন্ধন, ভারতীয় পুরাণ ও সংস্কৃতির যেখানে দেবতা এবং মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক কিছু মিলে যায়।
ছবি – সংগৃহিত। এই বছরের নয়।
Be First to Comment