পি তৃ প ক্ষ
বাবলু ভট্টাচার্য: আজ ১৪২৭ বঙ্গাব্দের ৩১ ভাদ্র, অমাবস্যা তিথি, বৃহস্পতি বার, মহালয়া৷ এই দিন পিতৃপক্ষের সমাপ্তি৷ অমাবস্যা শেষে পিতৃপক্ষের সমাপ্তিতে দেবীপক্ষের সূচনা হয়৷ এবং শুক্লপক্ষে প্রতিপদ তিথিতে দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে আবির্ভূতা হন৷ বছরের ১২মাসে ২৪টি পক্ষ রয়েছে, তার মধ্যে ২টি পক্ষ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমটি পিতৃপক্ষ ও দ্বিতীয়টি দেবীপক্ষ। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের তিথিকে বলা হয় মহালয়া। এই কৃষ্ণপক্ষকে জিতিয়া, ষোলাশ্রাদ্ধ, অপরপক্ষ কিংবা পিতৃপক্ষ বলা হয়৷ পিতৃপক্ষের শুরু ভাদ্র পূর্ণিমা তিথিতে, সমাপ্তি মহালয়া (সর্বপিতৃ অমাবস্যা তিথি )-তে৷ পিতৃপক্ষে স্বর্গত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পার্বণ শ্রাদ্ধ ও তর্পন করা হয়। যমালয় থেকে মর্ত্যলোকে এ সময় পিতৃ পুরুষেরা আসেন। তাদেরকে তৃপ্ত করার জন্য তিল, জল, দান করা হয়। এবং তাদের যাত্রাপথকে আলোকিত করার জন্য উল্কাদান করা হয়। মহাভারতে বলা হয়েছে যে, মহাবীর কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে সেখানে তাকে খেতে দেওয়া হল শুধুই সোনা আর ধনরত্ন। ‘ব্যাপার কী’ ? কর্ণ জিজ্ঞাসা করলেন ইন্দ্রকে। ইন্দ্র বললেন, ‘তুমি সারাজীবন সোনাদানাই দান করেছো, পিতৃপুরুষকে জল দাও নি।

তাই তোমার জন্যে এই ব্যবস্থা।’ কর্ণ বললেন, ‘আমার কী দোষ? আমার পিতৃপুরুষের কথা তো আমি জানতে পারলাম যুদ্ধ শুরুর আগের রাতে। মা কুন্তী আমাকে এসে বললেন, আমি নাকি তাঁর ছেলে। তারপর যুদ্ধে ভাইয়ের হাতেই মৃত্যু হলো। পিতৃতর্পণের সময়ই তো পেলাম না।’ ইন্দ্র বুঝলেন, কর্ণের দোষ নেই। তাই তিনি কর্ণকে পনেরো দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিতে অনুমতি দিলেন। ইন্দ্রের কথা মতো এক পক্ষকাল ধরে কর্ণ মর্ত্যে অবস্থান করে পিতৃপুরুষকে অন্নজল দিলেন। তাঁর পাপ স্খলন হলো এবং যে পক্ষকাল কর্ণ মর্ত্যে এসে পিতৃ- পুরুষকে জল দিলেন সেই পক্ষটি পরিচিত হল পিতৃপক্ষ নামে। পিতৃপক্ষে পুত্র কর্তৃক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হিন্দুধর্মে অবশ্য করণীয় একটি অনুষ্ঠান৷ গরুঢ় পুরাণে গৃহস্থদের দেব, ভূত ও অতিথিদের সঙ্গে পিতৃ তর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ এই অনুষ্ঠানে পূর্ববর্তী তিন পুরুষের উদ্দেশ্যে পিণ্ড ও জল প্রদান করা হয় তাঁদের নাম উচ্চারণ করে এবং গোত্রের পিতাকে স্মরণ করা হয়৷
Be First to Comment