Press "Enter" to skip to content

পার্ল এস বাক লেখালেখির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে লিখেছেন, আন্দোলন করেছেন সমানতালে। নারী অধিকার, শিশু অধিকার, দারিদ্র দুরীকরণ, পরিচয়হীন সন্তানদের নানা বিষয়ে…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ পার্ল এস বাক

বাবলু ভট্টাচার্য : তাঁর মিশনারী পিতা-মাতা দুইজনই বিয়ের পর চীনে স্থায়ী হন। ফলে তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে চীনে। নিজের ভাষা শোখার আগেই তিনি শিখেছিলেন চীনা ভাষা। তাই তাঁর লেখায় চীন জীবন্ত ও জ্বলন্ত।

তিনি ছিলেন মানবতাবাদী উপন্যাসিক পার্ল এস বাক। পুরো নাম— পার্ল সিডনেসস্টিকার বাক।

১৯১৪ সালে তিনি জন লসিং বাক নামক একজন মিশনারীকে বিয়ে করেন। নিজেও মিশনারী হয়ে চীনের সজোতে বসবাস শুরু করেন। পরে তিনি মিশনারীর কাজ ছেড়ে দেন। সেখানকার পটভূমিতে লেখেন ‘গুড আর্থ’।

১৯২০ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত বাক দম্পতি চীনের নানকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য পড়াতে শুরু করেন। সেখানে একটি বাড়িও তৈরি করেন। মায়ের মৃত্যুর পর পার্ল এস বাক আমেরিকায় ফিরে যান। এবং সেখানে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষায় এমএ করেন।

নানজিং প্রদেশে থাকাকালে চীনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নানা আন্দোলনে ঝুঁকির মধ্যে পড়েন পার্ল এস বাক দম্পতি। চিয়াং কাইশেকের দল, কমুনিস্ট পার্টি এবং কিছু যুদ্ধবাদী মানুষের সংঘর্ষে তাঁদের থাকা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে চীনে বিদেশী কিছু ব্যক্তিকে হত্যা করা হলে পার্ল বিপন্নবোধ করেন। তাঁরা পালিয়ে জাপানে চলে যান। এরই মধ্যে পার্ল বাকের প্রথম বিয়ে ভেঙে যায়। এরপর তিনি প্রকাশক রিচার্ড ওয়ালশকে বিয়ে করেন।

পার্ল এস বাক লেখালেখির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে লিখেছেন, আন্দোলন করেছেন সমানতালে। নারী অধিকার, শিশু অধিকার, দারিদ্র দুরীকরণ, পরিচয়হীন সন্তানদের নানা বিষয়ে।

এতিম শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৪৯ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক সন্তান পালক সংস্থা বা আন্তর্জাতিক এ্যাডোপশন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা হন পার্ল এস বাক। একইভাবে প্রতিষ্ঠা করেন ওয়েলকাম হাউজ— যেখানে পাঁচ হাজার নিঃস্ব, অভিভাবকহীন সন্তান স্থান পায়।

এশিয়ান দেশগুলোর অভাব ও সন্তান প্রতিপালনে বাধা দূরীকরণে প্রতিষ্ঠা করেন— এ্যাডড্রেস পর্ভাটি এ্যান্ড ডিসক্রিমিনেশন ফেসড বাই চিলড্রেন ইন এশিয়ান কমুনিটি। বিশেষ করে যেখানে আমেরিকান সৈন্য গিয়ে অবাঞ্ছিত সন্তান জন্ম দিয়েছেন সেখানেই তাদের অধিকার আদায়ে চেষ্টা করেছেন পার্ল এস বাক।

দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনে এসব শিশুর জন্য এতিমখানা স্থাপন করেন। শিশুদের প্রতি অবিচারের প্রতিবাদ ও অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন তিনি। তিনি আমেরিকায় বর্ণবাদ প্রথা নিয়েও সোচ্চার ছিলেন।

পার্ল এস বাক লিখেছেন ৪০টি উপন্যাস, ২১টি গল্প, ১২টি ননফিকশন, রান্নার বই ও ৪টি আত্মজীবনীমুলক গ্রন্থ। বিখ্যাত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে— ‘দ্য গুড আর্থ’, ‘দ্য সান’, ‘দ্য মাদার’, ‘কাম মাই বিলাভেড’, ‘সাটান নেভার স্লিপস’, ‘ইমপেরিয়াল ওম্যান’, ‘প্যাভেলিয়ন অফ ওম্যান’, ‘গডসমেন’, ‘লেটার ফ্রম পিকিং’, ‘দ্য চিলড্রেন হু নেভার গ্রো’, ‘মাই সেভারেল ওয়ার্লড’, ‘এ ব্রিজ ফর পাসিং’, ‘দ্য এক্সআইল’ ও ‘ফাইটিং এ্যাঞ্জেল’।

সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৩৮ সালে নোবেল পুরস্কার ছাড়াও ১৯৩২ সালে পুলিৎজার, ১৯৩৫ সালে উইলিয়াম ডিন হাওয়েলস মেডেল পান। তিনি শুধু লেখকই ছিলেন না, ছিলেন সম্পাদক, লেখক, প্রতিষ্ঠাতা এবং রাজনৈতিক সক্রিয় কর্মী।

পার্ল (সিডনেসস্টিকার) বাক ১৮৯২ সালের আজকের দিনে (২৬ জুন) আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার হিলসবরোতে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.