Press "Enter" to skip to content

পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানে হাইকোর্টের  নির্দেশ……    

Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন : কলকাতা, ৯, সেপ্টেম্বর, ২০২০। লকডাউনের প্রথম পর্বে সারাদেশ জুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের অসহায়তা ফুটে উঠেছিল বারবার। কখনো রেললাইনে ঘুমন্ত অবস্থায় চলে গেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রাণ। আবার কখনো বা গ্রীষ্মের প্রখর তেজে হাজার হাজার মাইল পথ হেটে মাঝপথে ঘটেছে মৃত্যু। এইরূপ নানান অমানবিক ঘটনায় গোটা দেশ কাটিয়েছিল উৎকন্ঠায়। বহরমপুরের কংগ্রেস  সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর উদ্যোগে যেমন ভিন রাজ্য থেকে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরতে পেরেছিল নিজের বাড়িতে। ঠিক তেমনি পুরুলিয়ার বাগমুন্ডির কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতোর দায়ের করা মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশে লক্ষাধিক পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ঘটতে চলেছে। একটু পেছন ফেরা যাক, গত ২০ জুন কেন্দ্রীয় সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘গরীব কল্যাণ রোজগার যোজনা’ প্রকল্প চালু করে ছিল। ৫০ হাজার কোটি টাকার অনুদানে ৩০০ টাকা মজুরি ভিক্তিতে ১২৫ দিনের কাজ পাবেন পরিযায়ী শ্রমিকরা৷ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের অধীনে ২৫ রকম কাজ দেওয়া হবে পরিযায়ী শ্রমিকদের। যেসব জেলায় নথিভুক্ত ২৫ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। সেইসব জেলা গুলি কেন্দ্রীয় সরকারের এহেন প্রকল্পের আওতায় পড়বে৷ এই হচ্ছে এই প্রকল্পের মূল বৈশিষ্ট্য। ইতিমধ্যেই বিহার উত্তরপ্রদেশ মধ্যপ্রদেশ ঝাড়খন্ড ওড়িশা রাজস্থানের ১১৬ টি জেলা কেন্দ্রীয় সরকারের ‘গরীব কল্যাণ রোজগার যোজনা’য় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পশ্চিমবাংলার কোন জেলা নেই। অথচ ভিন রাজ্যে কাজ করা বাংলার নথিভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন ১১ লক্ষের মত। গত ২০ জুন কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি  বিধানসভার বিধায়ক নেপাল মাহাতো গত ৩০ জুন পুরুলিয়া ডিএম অফিসে তথ্য জানার আইনে জানতে পারেন পুরুলিয়ায় পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা ৩৯ হাজার মত। যেখানে ২৫ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক হলেই সেই জেলা কেন্দ্রীয় সরকারের গরীব কল্যাণ রোজগার যোজনার আওতাভুক্ত হবে। তাহলে পুরুলিয়া জেলা বাদ গেল কেন?  শুধু তাই নয় পশ্চিমবাংলার কোন জেলা কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পের আওতাধীন নয়। যেখানে পুরুলিয়ার সাংসদ বিজেপি, সেখানে কেন এই বঞ্চনা?  এই প্রশ্ন ঘিরে জেলা রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। রাজ্যে শাসক দলের অবস্থান নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন দেখা যায়। তর্কবিতর্কর মাঝেই পুরুলিয়া ডিএম অফিসে দুবার লিখিত জানিয়েও কোন সুরাহা পাননি বাঘমুন্ডি বিধায়কের দাবি। এরপর গত ৪ জুলাই এই কং বিধায়ক কেন্দ্রীয় অর্থসচিব কে পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গরীব কল্যাণ রোজগার যোজনার অন্তর্ভুক্তি চেয়ে চিঠি দেন৷ সেই চিঠির প্রতিলিপি ও কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দপ্তরকেও পাঠানো হয়৷ দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী কেও এই বিষয়ে লিখিত জানান পুরুলিয়ার বিধায়ক নেপাল মাহাতো। কোথাও কোন সক্রিয় পদক্ষেপ দেখতে না পেয়ে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সৌগত মিত্রের হাত ধরে রিট পিটিশন দাখিল করেন নেপাল মাহাতো। গত ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণন ও বিচারপতি শুভাশিস দাশগুপ্তের এজলাসে এই মামলার শুনানি চলে। যেখানে রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল সহ কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত সলিসিটর ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মামলাকারী অর্থাৎ কং বিধায়ক নেপাল মাহাতো কে এক সপ্তাহের মধ্যে পুরুলিয়ার ডিএম কে যাবতীয় তথ্য পেশ করার নির্দেশ দেয়। যেখানে আরটিআই এর উত্তর, ডিএম অফিসে দুবার লিখিত আবেদন, কেন্দ্রীয় অর্থসচিব কে পাঠানো কপি, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দপ্তর কে পাঠানো কপি সর্বপরি কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশনের কপি থেকে ডিভিশন বেঞ্চের আদেশনামা গুলি রয়েছে। পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের তরফে পুরুলিয়ার ডিএম সাহেব কে মামলাকারীর সমস্ত কাগজপত্র এক সপ্তাহের মধ্যে পাবার পর আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের যথাযথ জায়গায় তা পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে – পুরুলিয়ার কং বিধায়কের দায়ের করা এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশ শুধু পুরুলিয়া জেলা নয় রাজ্যের আরও বেশকিছু জেলা কেন্দ্রীয় সরকারের গরীব কল্যাণ রোজগার যোজনায় আওতায় চলে আসতে পারে। তাতে লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকরা ১২৫ দিনের কর্মসংস্থানে রোজ ৩০০ টাকা করে মজুরি পাবেন। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ১১ লক্ষের মত পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। করোনা আবহে প্রথম পর্যায়ে ভিন রাজ্য থেকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরলেও টানা কয়েকমাস কোন কাজ সেভাবে না পাওয়ায় পুনরায় তারা ভিন রাজ্যে ফের পাড়ি দিচ্ছে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে কেন্দ্রীয় সরকারের গরীব কল্যাণ রোজগার যোজনায় তারা আবার নিজভূমে থাকবার কথা ভাবছে।                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                     

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.