——–শুভ জন্মদিন অজয় কর——-
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, তিনি হলেন সেই বরেণ্য পরিচালক যিনি মূলধারার ছবি করেই শিল্প নৈপুণ্যতার ছাপ রেখেছেন। মূলধারার রোম্যান্টিক ছবি কতটা শৈল্পিক হতে পারে তারচেয়ে ভালো কেউ দেখাতে পারেননি। আর্ট ফর্ম রেখেও বক্স অফিস হিট দিতেন। আজও দর্শক যার ছবির গানের দৃশ্যে মুগ্ধ। তিনি একজন আইকনিক ছবি নির্মাতা। যার ক্যামেরায় আলোর কাজ হলিউডেও প্রশংসা কুড়িয়েছে। তিনি অজয় কর। বাবা ডা. প্রমোদচন্দ্র ছিলেন রেলের ডাক্তার, মা সুহাসিনী। বাবার কাজের সুবাদে অজয় করের বাল্য ও কৈশোর কেটেছে নানা জায়গায় ঘুরে-ঘুরে। শেষ পর্যন্ত লেখাপড়ার কারণে তাঁকে ও অন্য ভাইদের কলকাতায় মামাবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১৯২৭ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য ভর্তি হন। কিন্তু মাঝপথেই থেমে যায় সব।
কয়েক বছরের মধ্যেই ১৯৩২ সালে মামা ডা. সতীশচন্দ্র ঘোষের যোগাযোগে ম্যাডান থিয়েটারের পরিচালক প্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় হয় অজয়ের। ছেলেবেলা থেকেই ফোটোগ্রাফির প্রতি ছিল তাঁর অদম্য আকর্ষণ। সতীশচন্দ্র সেটা বুঝেছিলেন, তাই বাধা দেননি। ম্যাডান থিয়েটারে সেই সময় অন্যতম ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করতেন যতীন দাশ। অজয় নাড়া বাঁধলেন তাঁর কাছে। যতীন দাশের সুপারিশে পরের বছর ১৯৩৩ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া ফিল্ম কোম্পানির প্রসেসিং ল্যাবরেটরিতে কাজ পেলেন তিনি। চিত্রগ্রহণ ও তার পরিস্ফুটন যেহেতু অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত, তাই এই কাজের সুযোগ যে বাড়তি সুবিধে করে দিয়েছিল অজয়কে, তা বোঝা যায় পরবর্তী সময়ে তাঁর চিত্রগ্রহণের মুনশিয়ানার দিকে নজর করলে। ফিল্ম নেগেটিভ বস্তুটিকে তিনি হাড়ে হাড়ে চিনেছিলেন বলেই তাঁর তোলা সিনেমার দৃশ্য অত বাঙ্ময় হয়ে উঠত। ১৯৩৫ সাল থেকে অজয় কর সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন।
এর ঠিক দু’বছরের মাথায় তিনি হয়ে যান ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োর প্রধান চিত্রগ্রাহক। ১৯৩৯ সালে নির্মিত চারু রায়ের ‘পথিক’ ছবিটিই হচ্ছে অজয় করের স্বাধীন চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজের শুরু। তখন তাঁর বয়স মাত্র পঁচিশ। এর পর প্রায় ৫০টিরও বেশি ছবিতে তিনি কাজ করেছেন। নীরেন লাহিড়ী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, হেমেন গুপ্ত, দেবকী বসু, সত্যেন বসু… কে নন! অজয় করের নামটা বলতেই মনে পড়ে যায় ‘জিঘাংসা’, ‘গৃহ প্রবেশ’, ‘সাজঘর’, ‘বড়দিদি’, ‘হারানো সুর’, ‘সপ্তপদী’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘দত্তা’, ‘অতল জলের আহবান’, ‘বিষবৃক্ষ’-সহ অজস্র ছবি। তাঁর দক্ষতায় কানন দেবী মুগ্ধ হয়ে তাঁর শ্রীমতী পিকচার্সে অজয় করকে সহকারী পরিচালক রূপে আনেন। তবে, এই শ্রীমতী পিকচার্স প্রোডাকশান হাউসের কোনো পরিচালকের নাম থাকতো না। ‘সব্যসাচী’ ছদ্মনামে সব পরিচালকরা একসঙ্গে ছবি করতেন। সব্যসাচী গোষ্ঠীর ছবি যেমন ‘মেজদিদি’, ‘বামুণের মেয়ে’, ‘অনন্যা’ প্রভৃতি। এরপর একক পরিচালক রূপে অজয় করের সাফল্য প্রথম থ্রিলার রহস্যের বিখ্যাত ছবি ‘জিঘাংসা’। এরপর চলল উত্তম-সুচিত্রা-অজয় কর যুগ। পাশাপাশি সৌমিত্র, সুপ্রিয়া, শর্মিলা, তনুজা, তন্দ্রা বর্মণ যার ছবিতে কাজ করেন। তবে তথাকথিত বক্স অফিসের ছক ভেঙেই তিনি সাহসী ছবি ‘সাত পাকে বাঁধা’ বানান। যার জন্য সুচিত্রা সেন সেরা নায়িকা হন। এই ছবিটি দিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পান সুচিত্রা সেন। অজয় কর জাতীয় পুরস্কার পান ‘হারানো সুর’, ‘সপ্তপদী’, ‘সাত পাকে বাঁধা’ ও সৌমিত্র-নন্দিনী মালিয়া-সাবিত্রী অভিনীত ‘মাল্যদান’ ছবিতে। অজয় করের শেষ ছবি ‘মধুবন’। ভিক্টর-তনুজা অভিনীত।
১৯৮৫ সালের ২৮ জানুয়ারি অজয় কর প্রয়াত হন।
অজয় কর ১৯১৪ সালের আজকের দিনে (২৭ মার্চ) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment