——জন্মদিনে স্মরণঃ আব্বাস কিয়ারোস্তামি——
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, আব্বাস কিয়ারোস্তামি এমন একটি নাম, যিনি নান্দনিকতা ও সৃজনশীলতার প্রশ্নে বরাবরই আপসহীন। তাঁর চলচ্চিত্রে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন দর্শক। তিনি চান, ছবি দেখে দর্শক চিন্তা করবে এবং চলচ্চিত্রের ভেতরে প্রবেশ করবে। শেষমেশ নিজেরাই ব্যাখ্যা দাঁড় করাবে। মাত্র আঠারো বছর বয়সে ঘর ছেড়েছেন আব্বাস। চিত্রকলার প্রবেশিকা পরীক্ষায় ফেল করে যোগ দেন ট্রাফিক পুলিশের চাকরিতে। কিছুদিন পর আবার পরীক্ষা দিয়ে চিত্রকলায় উত্তীর্ণ হন। যোগ দেন বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। ১৯৬০-৬৯ এর মধ্যে তিনি পঞ্চাশটিরও বেশি বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করেন। বিজ্ঞাপনচিত্র বানাতে বানাতেই ক্যামেরার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে তাঁর। শেষ পর্যন্ত বানিয়ে ফেললেন জীবনের প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দ্য ব্রেড এন্ড অ্যালেই’। এরপর তাঁর ধ্যান-জ্ঞান সবকিছুই ছিল চলচ্চিত্রে। হোক তা স্বল্পদৈর্ঘ্য, পূর্ণদৈর্ঘ্য কিংবা প্রামাণ্যচিত্র।
ছবি বানানোর পাশাপাশি আব্বাস কাজ করেছেন চিত্রকর, ইলাস্ট্রেটর, আলোকচিত্রী, ভিডিও সম্পাদক হিসেবে। সাহিত্যিক আর কবি হিসেবেও নিজ দেশে তাঁর সুনাম আছে। আর চলচ্চিত্রকার হিসেবে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘প্রিক্স রবার্তো রসোলিনি’ (১৯৯২), ‘ফ্রান্সিস ত্রুফো অ্যাওয়ার্ড’ (১৯৯৩), ‘পিয়ার পাওলো প্যাসোলিনি অ্যাওয়ার্ড’ (১৯৯৫), ইউনেস্কোর ‘ফ্রেডরিকো ফেলেনি গোল্ড মেডেল’ (১৯৯৭), গ্রিসের ‘গোল্ডেন আলেকজান্ডার অ্যাওয়ার্ড’ (১৯৯৯), ‘আকিরা কুরোসাওয়া অ্যাওয়ার্ড’ (২০০০), কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম উৎসবের ‘ওয়ার্ল্ড’স গ্রেট মাস্টার্স’ (২০০৭), ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভেলের ‘গ্লোরি টু দ্য ফিল্মমেকার অ্যাওয়ার্ড’ (২০০৮) ইত্যাদি।
এছাড়া ২০০৫ সালে দ্য ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট থেকে অর্জন করেন ফেলোশিপ।
কিয়ারোস্তামি নির্মিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো— ‘ক্লোজআপ’ (১৯৯০), ‘থ্রু দ্য অলিভ ট্রিজ’ (১৯৯৫) ‘টেস্ট অব চেরি’ (১৯৯৭), ‘দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস’ (১৯৯৯), ‘এবিসি আফ্রিকা’ (২০০১), ‘টিকেটস’ (২০০৫), ‘চাকান অন সিনেমা’ (২০০৭) প্রভৃতি।
‘ফাইভ’ (২০০৩) আব্বাস নির্মিত খুবই বিখ্যাত একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।
কিয়ারোস্তামি ৪ জুলাই ২০১৬ সালে (বয়স ৭৬) প্যারিস, ফ্রান্সে মৃত্যুবরণ করেন।
আব্বাস কিয়ারোস্তামি ১৯৪০ সালের আজকের দিনে (২২ জুন) ইরানের তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment