জন্মদিনে স্মরণঃ হ রি চ র ণ ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়
বাবলু ভট্টাচার্য : একটি বাংলা অভিধান হল “বঙ্গীয় শব্দকোষ”। ১৩৪১ বঙ্গাব্দে সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত এবং অধ্যাপক শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারা এই অভিধান কলকাতায় প্রথম প্রকাশিত হয়৷ অভিধানটি বিশ্বকোষ প্রেস থেকে মুদ্রিত হয়।
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখিত বিবৃতি অনুসারে আনুমানিক ১৩১১ বঙ্গাব্দে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলা ভাষায় একটি অভিধান প্রণয়নের জন্য অনুরোধ করেন।
কবির নির্দেশে তিনি ছাত্রদের পাঠার্থে সংস্কৃতপ্রবেশ গ্রন্থের রচনায় ব্যস্ত ছিলেন। সেই কারণে ১৩১২ বঙ্গাব্দে সংস্কৃতপ্রবেশ গ্রন্থের কাজ শেষ করে রবীন্দ্রনাথের অনুমতি নিয়ে তিনি এই অভিধান রচনায় মন দেন। ফলে প্রায় ২৯ বছরের পরিশ্রমের ফসল এটি৷
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক বাড়ি ছিল বসিরহাটের জামাইকাটিতে। তাঁর বাবা শিবচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় স্থানীয় এক জমিদারের কাছারিতে চাকরি করতেন। ছাত্রজীবনেই হরিচরণ রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শে আসেন। তিনি প্রবেশিকা ও এফএ পরীক্ষা পাস করার পর বৃত্তি নিয়ে বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ইতিমধ্যে পিতার মৃত্যু হলে তিনি পড়াশোনা ছেড়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।
বাংলা ১৩০৮ সনে কলকাতা টাউন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রধান পণ্ডিত হিসেব যোগ দেন। এ স্কুলের শিক্ষকতা ত্যাগ করে ১৩০৯ সনের শ্রাবণ মাসে তিনি রবীন্দ্রনাথের জমিদারির অন্তর্গত পতিসরের কাছারিতে সুপারিনটেনডেন্ট পদে যোগদান করেন।
পতিসরে জমিদারি পরিদর্শনে এসে রবীন্দ্রনাথ হরিচরণের জ্ঞানচর্চায় আগ্রহ দেখে তাঁকে শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয়ে সংস্কৃতের শিক্ষক নিযুক্ত করেন। এই স্কুলে তিনি তিরিশ বছর (১৩০৯-১৩৩৯) শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতায় নিষ্ঠা এবং বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় দক্ষতার কারণে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে অভিধান রচনায় অনুপ্রাণিত করেন।
তবে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিধান শব্দার্থের গভীর ও ব্যাপকতর অর্থ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে অধিকতর উপযোগী। বাংলা, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি প্রভৃতি ভাষার শব্দ ছাড়াও এ অভিধানে আছে ইংরেজি, পর্তুগিজ, হিন্দি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষার শব্দ। এ অভিধান প্রথমে পাঁচ খন্ডে প্রকাশিত হয় (১৯৩২-১৯৫১), পরে দু’খন্ডে।
বঙ্গীয় শব্দকোষ ছাড়াও হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন রবীন্দ্রনাথের কথা, সংস্কৃত-প্রবেশ, ব্যাকরণ-কৌমুদী, Hints on Sanskrit Composition & Translation, পালিপ্রবেশ, শব্দানুশাসন, কবির কথা প্রভৃতি গ্রন্থ।
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরোজিনী বসু স্বর্ণপদক, ১৯৫৪ সালে শিশিরকুমার স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৫৭ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দেশিকোত্তম (ডি লিট) উপাধিতে ভূষিত করেন।
তিনি ১৯৫৯ সালের ১৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৬৭ সালের আজকের দিনে (২৩ জুন চব্বিশ পরগনা জেলার রামনারায়ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment