Press "Enter" to skip to content

পণ্ডিত রবিশঙ্করের অমর কীর্তি হচ্ছে পাশ্চাত্য ও প্রতীচ্যের সঙ্গীতের মিলন। মাত্র বার বছর বয়স থেকেই বড় ভাই উদয়শঙ্কর এর নাচের দলের একক নৃত্যশিল্পী ও সেতার বাদক…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ প ন্ডি ত র বি শ ঙ্ক র

বাবলু ভট্টাচার্য : ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মাইহার ঘরানার স্রষ্টা আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের শিষ্য রবিশঙ্কর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঐতিহ্য এবং ভারতীয় সঙ্গীতকে ১৯৬০-এর দশকে পাশ্চাত্য বিশ্বের কাছে প্রথম তুলে ধরেন।

তার পূর্ণ নাম রবীন্দ্রশঙ্কর চৌধুরী, ঘরোয়া নাম ‘রবু’। আদি পৈত্রিক বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলায় হলেও তার জন্ম ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারাণসী শহরে। সেখানেই বড় হয়েছেন তিনি। তার বাবা শ্যামশঙ্কর চৌধুরী ছিলেন একজন প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ এবং আইনজ্ঞ।

বড় ভাই উদয়শঙ্কর ছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য- শিল্পী। ঐ সময়টায় তিনি ছিলেন প্যারিসে। রবিশঙ্কর ১৯৩০-এ মায়ের সাথে প্যারিসে বড় ভাইয়ের কাছে যান এবং সেখানেই আট বছর স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করেন। বার বছর বয়স থেকেই রবিশঙ্কর বড় ভাইয়ের নাচের দলের একক নৃত্যশিল্পী ও সেতার বাদক।

একুশ বছর বয়সে রবিশঙ্কর তার গুরু (যাকে তিনি বাবা বলে ডাকতেন) আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের মেয়ে অন্নপূর্ণা দেবীকে বিয়ে করেন। কিন্তু এই বিয়ে বিচ্ছেদে শেষ হয়। পরবর্তীতে আমেরিকান কনসার্ট উদ্যোক্তা স্যু জোন্স এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন।

১৯৩৯ সালে ভারতের আহমেদাবাদ শহরে রবিশঙ্করের সর্বপ্রথম সাধারণের জন্য উন্মুক্ত একক সেতার পরিবেশন অনুষ্ঠান হয়। ১৯৪৫ সালের মধ্যে রবিশঙ্কর সেতার বাদক হিসেবে ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একজন শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যান।

তিনি সুর সৃষ্টি, ব্যালের জন্য সঙ্গীত রচনা এবং চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই সময়ের বিখ্যাত ‘ধরত্রী কি লাল’ এবং ‘নীচা নগর’ চলচ্চিত্র দুটির সঙ্গীত রচনা ও সুরারোপ করেন। তিনি কবি ইকবালের ‘সারে জাঁহাসে আচ্ছা’ কবিতাকে অমর সুরে সুরারোপিত করে ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীতের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

রবিশঙ্কর ১৯৪৯ সালে দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া রেডিও’র সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫০ হতে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সঙ্গীত সৃষ্টিতে ব্যাপৃত ছিলেন। এ সময়ে তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হলো সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু ত্রয়ী’ (পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার) চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা।

পরবর্তীতে তিনি ‘চাপাকোয়া’ (১৯৬৬) ‘চার্লি’ (১৯৬৮) ও ‘গান্ধী’ (১৯৮২) সহ আরো চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। ১৯৬২ সালে পণ্ডিত রবিশঙ্কর কিন্নর স্কুল অব মিউজিক, বম্বে এবং ১৯৬৭ সালে কিন্নর স্কুল অব মিউজিক, লস এন্জেলেস স্থাপন করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে প্রচার ও মানবিক সহায়তার জন্য জর্জ হ্যারিসনের উদ্যোগে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে আয়োজিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে সেতার বাজিয়েছিলেন। রবিশঙ্করই মূলতঃ এই অনুষ্ঠানের জন্য জর্জ হ্যারিসনকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

পণ্ডিত রবিশঙ্করের অমর কীর্তি হচ্ছে পাশ্চাত্য ও প্রতীচ্যের সঙ্গীতের মিলন। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের বিখ্যাত বেহালাবাদক ইহুদি মেনুহিনের সঙ্গে সেতার-বেহালার কম্পোজিশন তার এক অমর সৃষ্টি– যা তাকে আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের এক উচ্চ আসনে বসিয়েছে।

তিনি আরো একটি বিখ্যাত সঙ্গীত কম্পোজিশন করেছেন বিখ্যাত বাঁশীবাদক জ্যঁ পিয়েরে রামপাল, জাপানী বাঁশির সাকুহাচি গুরু হোসান ইয়ামামাটো এবং কোটো (ঐতিহ্যবাহী জাপানী তারযন্ত্র) গুরু মুসুমি মিয়াশিতার জন্য।

কিংবদন্তী রবিশঙ্কর সঙ্গীতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রভূত সম্মান আর সম্মাননা লাভ করেছেন। ১৯৬২ সালে রাষ্ট্রপতি পদক; ১৯৮১ সালে পদ্মভূষণ; ১৯৮৬ সালে ভারতের রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত হন। ১৯৯১ সালে ফুকোদা এশিয়ান কালচারাল প্রাইজেস-এর গ্র্যান্ড প্রাইজ; ১৯৯৮ সালে সুইডেনের পোলার মিউজিক প্রাইজ (রে চার্লস্ এর সাথে) ১৯৯৯ সালে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ভারতরত্ন লাভ করেন।

২০০০ সালে ফরাসি সর্বোচ্চ সিভিলিয়ান এওয়ার্ড লিজিয়ন অব অনার; ২০০১ সালে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কর্তৃক প্রদত্ত অনারারী নাইটহুড; ২০০২ সালে ভারতীয় চেম্বার অব কমার্স-এর লাইফ টাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড এর উদ্বোধনী পুরস্কার লাভ করেন।

২০০২ সালে দুটি গ্র্যামি এওয়ার্ড; ২০০৩ সালে আইএসপি এ ডিস্টিংগুইশ্‌ড আর্টিস্ট এওয়ার্ড, লন্ডন; ২০০৬ সালে ফাউন্ডিং এম্বাসেডর ফর গ্লোবাল এমিটি এওয়ার্ড, স্যান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; ১৪টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

ম্যাগাসাসে, গ্লোবাল এম্বাসেডর উপাধি, ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত পদ্মবিভূষণ, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত দেশিকোত্তম লাভ করেন। পন্ডিত রবিশঙ্কর আমেরিকান একাডেমি অব আর্টস এন্ড লেটারস-এর অনারারি মেম্বার এবং ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারন্যাশনাল রোস্ট্রাম অফ কম্পোজারস-এর সদস্য।

২০১২ সালের ১১ডিসেম্বর ৯২ বছর বয়সে রবিশঙ্কর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরলোকগমন করেন।

পণ্ডিত রবিশঙ্কর ১৯২০ সালের আজকের দিনে (৭ এপ্রিল) উত্তর প্রদেশের বেনারসে জন্মগ্রহণ করেন।

More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »
More from MusicMore posts in Music »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.