ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় : ৮ অক্টোবর ২০২১।
এই প্রথম এমন এক সাহিত্যিককে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাচ্ছি যাঁর কোন লেখা আজও আমি পড়ি নি ! যদিও তিনি নিজের মাতৃভাষা সোয়াহিলি ভাষায় নয়, লিখেছেন ইংরেজি ভাষায় ৷ খুব শীঘ্রই হয়তো তাঁর লেখা পড়ে ভালো করে তাঁকে জানবার চেষ্টা করবো। আপাততঃ আমরা খুবই খুশি দীর্ঘ ৩৫ বছর পরে কোন আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ বংশদ্ভূত কথা সাহিত্যিক সাহিত্যে নোবেল পেলেন ৷ শেষবার ১৯৮৬ সালে পেয়েছিলেন ওলে সোইনকো ৷ আর এর মধ্যে স্বীকৃতি পেল শুধু তৃতীয় দুনিয়া নয় সব চেয়ে নিপীড়িত, নির্যাতিত কোটি কোটি ভিটে হারা উদ্বাস্তু মানুষ ৷ সন্ত্রাস কবলিত বহু দেশ থেকে আজও মানুষ প্রাণ ও মান বাঁচাতে নিঃসম্বল অবস্থায় অচেনা অজানা দেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছে৷ আসলে তিনি নিজেই তো মাত্র ১৬ বছর বয়সে নিজ দেশ তানজানিয়ার জাঞ্জিবার দ্বীপ থেকে তিনি স্বজন হারা উদ্বাস্তু হয়েছিলেন ৷ জাঞ্জিবার সুলতানির বিরুদ্ধে বিপ্লবের সময় অনেকের মতো তিনি ও যুক্তরাজ্যে শরণার্থী হয়ে যান ৷ তাঁর সেই আত্ম যন্ত্রণাই হয়ে উঠেছে জন্মভূমি ত্যাগি কোটি কোটি শরনার্থী মানুষের রক্ত ঝরা হৃদয়ের মর্মন্তুদ কাহিনি ৷ বুকার পুরস্কার পাওয়ার পরই এই লেখকের শুনেছিলাম। ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করা এই লেখকের ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত চতুর্থ উপন্যাস “প্যারাডাইস” বইটি তাঁকে বুকার দিয়েছিল৷ এবারে ঐ বইটিই দিল নোবেল ৷ ব্রিটিশ -তানজানিয়ান ঔপনাসিক রাজাক এখানে পূর্ব আফ্রিকান সমাজের ভালোবাসা ও দুঃখের ছবি , শরণার্থীদের দুর্দশা , নিয়তি এবং আফ্রিকার রাজনীতি তুলে ধরেছেন ৷ তাঁর সাহিত্য সত্যের প্রতি উৎসর্গীকৃত ৷
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের পূর্ব আফ্রিকার চালচিত্র তাঁর প্যারাডাইস উপন্যাস ৷ আফ্রিকীয় বংশদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক গুরনাহ একসময় ছিলেন ক্যান্টারবেরির ক্যান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য ও কলোনিয়াল স্টাডিজের অধ্যাপক ৷ কম লেখেন ৷ এ পর্যন্ত প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা মাত্র দশ ৷ এছাড়া তাঁর রয়েছে একটি ছোট গল্প সংকলন ৷ ২১ বছর বয়সে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম উপন্যাস “ডেসারশন” ৷ যা ছিল আফ্রিকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কথা ৷ ঔপনিবেশিকতার প্রভাব ছাড়াও ৭৩ বছরের মানুষটি আপোষহীন ও সহানুভূতিশীল ৷ যদিও ভেবেছিলাম এবারে আফ্রিকার ভাগ্যেই নোবেল জুটবে ৷ ৮৩ বছর বয়সী কেনীয় ঔপনাসিক এনগুগি ওয়া থিয়াঙ্গোও ছিলেন অন্যতম দাবীদার ৷ জাপানী ঔপনাসিক হারুকি মুরাকামির নামও উঠেছিল ৷ তবে , শিকে ছিঁড়লো শরণার্থীর গল্প বলা রাজাক গুরনাহের কপালে ৷ নোবেল কমিটির এই স্বীকৃতি শরণার্থীদের জ্বলন্ত সমস্যা সম্পর্কে যদি শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের চেতনা জাগায় তবেই তাঁর প্রতি জানানো হবে প্রকৃত সম্মান ৷
Be First to Comment