*এবার লক্ষ্য গত বছরের মতন একাধিক শৃঙ্গ। এভারেস্ট এর আশেপাশে সাত সাতটা শৃঙ্গ অভিযানের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন দেবাশিস বিশ্বাস। তাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য কলকাতা প্রেসক্লাবে উপস্থিত ইনকাম ট্যাক্স এর চীফ কমিশনার মহসিন আলম, বিশিষ্ট পর্বতারোহী বসন্ত সিংহ রায় ও আরো অনেকে।*
গোপাল দেবনাথ : কলকাতা, ৩ এপ্রিল ২০২২। দেবাশিস বিশ্বাস এই নামটি এই মুহূর্তে আমাদের রাজ্য ছাড়াও এই দেশের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ বিশেষ করে যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড় পর্বতে আরোহণ করেন তারা একমুহূর্তে চিনে নেন এই এভারেস্ট শৃঙ্গ জয়ী মানুষ টিকে। দেবাশিস বাবু পেশাগত ভাবে ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট-এর ডেপুটি কমিশনার হিসাবে কর্মরত হলেও পাহাড় তাঁকে এক আলাদা পরিচিতি দিয়েছে।
১৯৯১ সাল থেকে পাহাড়ের ভালবাসায় জড়িয়ে পড়েছেন। তারপর একে একে অসংখ্য ট্রেকিং, পর্বত অভিযান করেছেন। পাহাড় অনেক সম্মান দিয়েছে। পেয়েছেন পর্বতারোহণের জন্য অর্জুন পুরস্কার – তেনজিং নরগে ন্যাশনাল এডভেঞ্চার আওয়ার্ড। আইএমএফ গোল্ড মেডেল ও আরো অসংখ্য শিরোপা।
অর্জন করেছেন ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট-এ সাম্মানিক ডক্টরেট। ইতিমধ্যে তার অভিযান নিয়ে বানিয়েছে দশটি ডকুমেন্টারি ছবি, লিখেছে দশটি বই। পাহাড়ের প্রতি এই টান যাবার নয়। আমৃত্যু রয়ে যাবে পাহাড়ের প্রতি এই ভালবাসা।
গত ২৬ বছর ধরে অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে দেবাশিস পর্বত অভিযান করে চলেছেন। প্রথম অভিযান ১৯৯৭ সালে কামেট, ভারতবর্ষের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ। তারপর একের পর এক অভিযানে সামিল হয়েছেন চৌখাম্বা, শিবা, শিবলিঙ, পানওয়ালি দুয়ার এর মতন বিখ্যাত শৃঙ্গে। বাংলাদেশের সাথে প্রথম ইন্দো-বাংলাদেশ জয়েন্ট এক্সপিডিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল দেবাশিসের। বহু বছর পর্বত আরোহণের পর ২০০৯ সালে এসেছিল এভারেস্ট অভিযানের ভাবনা।
সেই প্ল্যান মাফিক ২০১০ সালের পয়লা এপ্রিল বেরিয়েছিল মাউন্ট এভারেস্টের লক্ষ্যে। আরোহন করে হয়েছিল প্রথম অসামরিক বাঙালি এভারেস্ট আরোহী। তারপর থেকে প্রতিবছর পা বাড়িয়েছেন একের পর এক আটহাজারী শৃঙ্গে, উচ্চতায় যারা ৮০০০ মিটারের বেশি উঁচু। ২০১১ সালে আরোহণ করেছেন কাঞ্চনজঙ্ঘা, ২০১২ সালে অন্নপূর্ণা, ইত্যাদি।
ইতিমধ্যে সাতটি আটহাজারী শৃঙ্গ আরোহণ হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট ২৩টি অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন তার মধ্যে দু-একটি বাদ দিয়ে বেশিরভাগ শৃঙ্গে আরোহণ করতে সমর্থ হয়েছেন। এমনকি গত দু’বছরের করোনা অতিমারীর প্রকোপ তাঁকে ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। দু’বছরই নেপালে অভিযানে গিয়েছেন। সফলও হয়েছেন। গত বছর একের পর এক অভিযানে, মেরা, আইল্যান্ড, লবুচে আর আমাদাবলাম – চারটি শৃঙ্গের শীর্ষে উঠতে পেরেছেন।
এই বছরও মাথায় রয়েছে বেশকিছু পরিকল্পনা। এভারেস্টের পাশেই রয়েছে পুমোরি (৭১৬১ মি) ও নুপৎসে (৭৮৬১ মি)। দেবাশিস চেষ্টা করবে সে দুটো শৃঙ্গ আরোহণের। এছাড়াও ভাবনায় রয়েছে নেপালের আরও কিছু শৃঙ্গ – বরুণৎসে (৭১৬২ মি), নিরেখা (৬০৬৯ মি), আবি (৬০৯৭ মি), চোলাতসে (৬৪৪০ মি)। এই শৃঙগুলোর ভিতর যতগুলো সম্ভব আরোহণের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন দেবাশিস।
গত বছর যে ধরনের পরিকল্পনা করে পরপর শৃঙ্গ আরোহণ হয়েছিল, এ বছরও সেরকমই ইচ্ছা রয়েছে তার। গতবারের মতন এবারেও দেবাশিস এর সঙ্গী হাওড়ার কিরণ পাত্র। সেই উদ্দেশ্যে আগামী ৫ই এপ্রিল মঙ্গলবার কাঠমান্ডুর বিমানে উঠছেন ওরা।
অভিযানের দায়িত্বে রয়েছে আরোহন ওয়ান্ডারলাস্ট, আরোহন ট্রাস্টের এক ইউনিট। সেই এভারেস্ট থেকে দেবাশিসের সমস্ত অভিযানের কান্ডারী এই সংস্থা। এটা একটা ওপেন অ্যাডভেঞ্চার ফোরাম, সারা বছর ধরে অসংখ্য কর্মকাণ্ড করে চলেছে এই সংস্থা। ইচ্ছে থাকলে যে কোনো উৎসাহী সদস্য-সদস্যা এখানে যোগ দিতে পারেন।
অনলাইন নিউজপোর্টাল নিউজ স্টারডম এর পক্ষ থেকে দেবাশিস বিশ্বাস এবং কিরণ পাত্র’র জন্য রইল অনন্ত শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
Be First to Comment