——–শুভ জন্মদিন নিকোল (ম্যারি) কিডম্যান—- বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, কাগজে কলমে নিকোল ম্যারি কিডম্যান হলেও, সারা বিশ্বে ‘নিকোল কিডম্যান’ নামেই তিনি পরিচিত। মজার বিষয় হচ্ছে, জনপ্রিয় এ অভিনত্রেী অভিনয়ের পাশাপাশি গানও গেয়ে থাকেন। রয়েছে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। কিডম্যানের প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল ১৯৮৯ সালের থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্র ‘ডেড কাম’ এবং থ্রিলার মিনি ধারাবাহিক ‘ব্যাংকক হিল্টন’। ১৯৯০ এর দশকের প্রথম দিকে ‘ডেজ অব থান্ডার’ (১৯৯০), রোমান্স-নাট্যধর্মী ‘ফার অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ (১৯৯২) ও সুপারহিরো চলচ্চিত্র ‘ব্যাটম্যান ফরেভার’ (১৯৯৫) এ অভিনয় দিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। ২০০১ সালের সঙ্গীতধর্মী ‘মুলা রুশ!’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার এবং প্রথমবারের মতো একাডেমি পুরস্কার এর মনোনয়ন লাভ করেন। ২০০২ সালে ‘দ্য আওয়ার্স’ চলচ্চিত্রে ভার্জিনিয়া উলফ এর ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য একাডেমি পুরস্কার, গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার, বাফটা পুরস্কার এবং বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-এ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে রৌপ্য ভল্লুক অর্জন করেন। তার বাবা অ্যান্টনি কিডম্যান (১৯৩৮-২০১৪) ছিলেন একজন প্রাণরসায়নবিদ ও মনোবিদ এবং লেখক। তার মা জ্যানেল অ্যান একজন নার্সিং প্রশিক্ষক। কিডম্যানের পূর্বপুরুষগণ স্কটিশ, আইরিশ ও ইংরেজ বংশোদ্ভূত।
১৯৮৩ সালে ১৬ বছর বয়সে অস্ট্রেলীয় চলচ্চিত্র ‘বুশ ক্রিসমাস’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে তিনি টেলিভিশন ধারাবাহিক ‘ফাইভ মাইল ক্রীক’- এ পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝিতে তিনি ‘বিএমএক্স ব্যান্ডিটস্’ (১৯৮৩), ‘ওয়াচ দ্য শ্যাডোস ড্যান্স’ (১৯৮৭), ও প্রণয়ধর্মী হাস্যরসাত্মক ‘উইন্ডরাইডার’ (১৯৮৬) এ অভিনয় করে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি অস্ট্রেলীয় স্বাধীন চলচ্চিত্র ‘ফ্লার্টিং’-এ অভিনয় করেন। কিডম্যান ও ওয়াটস এই ছবিতে দুজন স্কুল ছাত্রী চরিত্রে অভিনয় করেন, ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ম ইনস্টিটিউট পুরস্কার লাভ করে। একই বছর বিলি বাথগেট চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথমবারের মতো সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। পরের বছর টম ক্রুজের বিপরীতে রন হাওয়ার্ড পরিচালিত আইরিশ মহাকাব্যিক চলচ্চিত্র ‘ফার অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ (১৯৯২) এ অভিনয় করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি আলেক বল্ডউইনের বিপরীতে ম্যালিস ও মাইকেল কিটনের বিপরীতে ‘মাই লাইফ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৯৫ সালে কিডম্যান তার অভিনীত সর্বোচ্চ আয়ের চলচ্চিত্র ‘ব্যাটম্যান ফরেভার’-এ ডঃ চেজ মেরিডিয়ান চরিত্রে অভিনয় করেন। এই সুপারহিরো চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে নাম চরিত্রে অভিনয় করেন ভাল কিলমার। একই বছর কিডম্যান গুস ভ্যান স্যান্ট পরিচালিত ‘টু ডাই ফর’ চলচ্চিত্রে সুজান স্টোন মারেত্তো চরিত্রে তার অভিনয় প্রশংসিত হয় এবং তিনি তার প্রথম গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর তিনি ‘দ্য পোট্রেট অব আ লেডি’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত একই নামের চলচ্চিত্রে বারবারা হার্শি, জন মালকোভিচ ও ম্যারি-লুইস পার্কারদের সাথে অভিনয় করেন।
১৯৯৯ সালে কিডম্যান তার স্বামী টম ক্রুজের সাথে স্ট্যানলি কুব্রিক পরিচালিত শেষ চলচ্চিত্র ‘আইজ ওয়াইড শাট’-এ বিবাহিত দম্পতি চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি অত্যধিক যৌনতার কারণে সেন্সর বিতর্কে পড়ে। তবে চলচ্চিত্রটি মুক্তির কিছুদিন পূর্বে কুব্রিক মারা গেলে তা সকলের মনোযোগ কাড়ে। ২০০১ সালে ইউয়ান মাকগ্রেগারের বিপরীতে ব্যাজ লুরমান পরিচালিত সঙ্গীতধর্মী চলচ্চিত্র ‘মুলাঁ রুজ!’-এ অভিনয় করেন। তিনি এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথমবারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
২০০২ সালে তিনি স্টিভেন ডাল্ড্রি পরিচালিত ‘দ্য আওয়ার্স’ চলচ্চিত্রে ভার্জিনিয়া উলফ চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে আরো অভিনয় করেন মেরিল স্ট্রিপ ও জুলিঅ্যান মুর। ছবিটিতে তার অভিনয় প্রশংসিত হয় এবং তিনি বেশ কয়েকটি সমালোচনা পুরস্কার লাভ করেন। তিনি তার প্রথম বাফটা পুরস্কার, তৃতীয় গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার এবং প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রথম অস্ট্রেলীয় অভিনেত্রী হিসেবে একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।অস্কার বিজয়ের পর নিকোল ২০০৩ সালে তিনটি ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি প্রথমে ডেনিশ পরিচালক লার্স ফন ত্রিয়ের পরিচালিত ‘ডগভিলা’, পরে ফিলিপ রথ-এর উপন্যাস অবলম্বনে রবার্ট বেন্টন পরিচালিত ‘দ্য হিউম্যান স্টেইন’, এবং অ্যান্থনি মিঙ্গেলা পরিচালিত ‘কোল্ড মাউন্টেন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। কোল্ড মাউন্টেন চলচ্চিত্রে তার অভিনয় প্রশংসিত হয় এবং তিনি তার ৬ষ্ঠ বারের মত সেরা অভিনেত্রী হিসেবে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ২০১১ সালের জুনে পিট ডেক্সটারের উপন্যাস অবলম্বনে লি ড্যানিয়েলসের ‘দ্য পেপারবয়’ ছবিতে তাকে অভিনেত্রী হিসেবে নেওয়া হয়। ছবিটি ২০১২ সালে মুক্তি পায়। ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগে অংশগ্রহণ করে এবং কিডম্যান শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড ও স্যাটার্ন পুরস্কারের পাশাপাশি তার দ্বিতীয় গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
২০১৩ সালে তিনি পার্ক চ্যান-উকের ‘স্টকার’ ছবিতে অভিনয় করে ইতিবাচক সমালোচনা লাভ করেন এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে স্যাটার্ন পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এই বছর এপ্রিলে তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান প্রতিযোগিতার জুরি হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে লায়ন চলচ্চিত্রে তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এক ভারতীয় কিশোর সারু ব্রায়ার্লির দত্তক নেওয়া মাতা সু ব্রায়ার্লি চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিতে তার অভিনয় ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় এবং তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য একাডেমি পুরস্কার ও গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
কিডম্যান ১৯৯৪ সাল থেকে ইউনিসেফ এবং ২০০৬ সাল থেকে ইউনিফেম-এর শুভেচ্ছা দূত। ২০০৬ সালে তিনি অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং এই বছরের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত অভিনেত্রী হন।
নিকোল ম্যারি কিডম্যান ১৯৬৭ সালের আজকের দিনে (২০ জুন) হাওয়াইয়ের হনুলুলুতে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment