বিশেষ প্রতিনিধি ; হাওড়া, ৩০ অক্টোবর ২০২৪। নারায়ণা হাসপাতাল, হাওড়া আয়োজিত স্তন সারভাইভারদের সচেতনতা অনুষ্ঠানে ক্যান্সার সারভাইভার, চিকিৎসক এবং সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে ক্যান্সার যোদ্ধাদের লড়াইয়ের কাহিনী উদযাপন করতে ও স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায়। বিশ্ব স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস উপলক্ষে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য ছিল সারভাইভারদের সম্মান জানানো, সাধারণ মানুষকে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্তকরণ সম্পর্কে অবহিত করা এবং নিয়মিত পরীক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা।
*নারায়ণা হাসপাতাল, হাওড়ার ব্রেস্ট অনকোলজি এবং অনকোপ্লাস্টিক বিভাগের কনসালট্যান্ট সার্জন ডাঃ নেহা চৌধুরী বলেন,* “এই অনুষ্ঠান আমাদের সারভাইভারদের শক্তি ও মানসিক দৃঢ়তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি দৃষ্টান্ত এবং স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় আমরা কতটা অগ্রগতি করেছি, তার প্রমাণ। এটি কেবল সারভাইভারদের সমাবেশ নয়; যারা স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এবং জয়ী হয়েছেন, তাদের অভিজ্ঞতা ও সফলতার গল্প শোনার একটি উপলক্ষ। আমরা তাঁদের এখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছি যেন তারা তাঁদের গল্প নিজেদের ভাষায় বলেন। এই ধরনের অনুষ্ঠান দ্বৈত উদ্দেশ্য সাধন করে। প্রথমত, এটি তাঁদের জন্য শিক্ষণীয় যারা স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে অবগত নন; ক্যান্সারের লক্ষণ কী, যেমন স্তনের মধ্যে পিণ্ড, স্তন থেকে তরল নির্গত হওয়া, এবং স্তনবৃন্ত-এর সঙ্কোচন; কিভাবে নিজে পরীক্ষা করবেন এবং এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে কী করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এটি ক্যান্সার সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা ও ভয় দূর করতে সাহায্য করে। সারভাইভারদের গল্প সরাসরি শুনে মানুষ সাহস পায় এবং তারা বুঝতে পারে যে, চাইলে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা সম্ভব।”
অনুষ্ঠানে অনুপ্রেরণামূলক সারভাইভারদের গল্প, স্তন স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনা এবং প্রাথমিক সনাক্তকরণ, স্ব-পরীক্ষা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ প্রদান করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা অনকোলজিস্ট, কাউন্সিলর এবং অন্যান্য সারভাইভারদের সাথে কথার বলার সুযোগ পেয়েছেন, যা একটি সামাজিক বন্ধন ও সাহসের পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছে। নারায়ণা হাসপাতালের ক্যান্সার সচেতনতা ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের প্রতি সহানুভূতিশীল যত্নের প্রতি অঙ্গীকার এখানে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
*নারায়ণা হাসপাতাল, হাওড়ার মেডিক্যাল অনকোলজি এবং হেমাট অনকোলজি বিভাগের ডিরেক্টর ডাঃ বিবেক আগরওয়ালা বলেন,* “স্তন ক্যান্সার হল ভারতসহ বিশ্বজুড়ে অন্যতম সাধারণ ক্যান্সার এবং এটি সর্বাধিক মৃত্যুর হারযুক্ত ক্যান্সারের মধ্যেও অন্যতম। সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। ভারতে স্তন ক্যান্সার সনাক্তের হার প্রায়শই বিলম্বিত হয়, যেখানে প্রায় ৭০% রোগী প্রাথমিকভাবে স্থানীয়ভাবে উন্নত পর্যায়ে উপস্থিত হন। এর বিপরীতে, পশ্চিমী দেশগুলিতে প্রায় ৯০% ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত হয়, যা চিকিৎসার ফলাফল ও জীবনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করে। এখানে নিরাময়ের হার বাড়াতে, আমাদের স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে—মানুষকে প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণ, এমন জীবনযাপন পদ্ধতি যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, লক্ষণ চিনতে পারা, এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণের গুরুত্ব বোঝাতে হবে। এই পদ্ধতি জীবনের হার উন্নত করতে এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সাহসের সাথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।”
*নারায়ণা হাসপাতালের ফেসিলিটি ডিরেক্টর তপানি ঘোষ বলেন,* “”দশ বছর আগেও ক্যান্সার নিয়ে রোগী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি বড় ভীতি ছিল, কিন্তু এখন সেই ভীতি অনেকটাই দূর হয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নতির কারণে ক্যান্সার নিরাময়ে সফলতার হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।”
অনুষ্ঠানটি শেষ হয় নারায়ণা হাসপাতালের নতুন অঙ্গীকারের মাধ্যমে, যা ক্যান্সার সচেতনতা, সারভাইভারদের সমর্থন এবং সম্প্রদায়ের জন্য স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা পরিষেবা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি নিয়ে।
Be First to Comment