শতরূপা সান্যাল : বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক।
কাজের প্রচন্ড চাপ চলছিল তখন।
কী একটা কারনে মাথা গরম, ধৈর্য তলানিতে
হঠাৎ বেজে উঠলো ফোনটা।
ফোন মানে, সেল ফোন।
“খেয়েছিস?.. বেলা হয়ে গেছে অনেক!”
যত মনের ঝাল ফোনটার ওপর ঝাড়লাম
খ্যাঁক করে উঠলাম সেই স্নেহকন্ঠের ওপর।
” আমার মরার ফুরসৎ নেই ,মা! খাওয়া!
এখন ফোন রাখো!”
কাজ কাজ আর কাজের পেছনে দৌড়োচ্ছিলাম
কখনো হায়দ্রাবাদ তো কখনো দিল্লী
কখনো মুম্বাই চেন্নাই তো কখনো বা শিলিগুড়ি গোয়া ঢাকা
ফ্লাইটে ওঠার আগে ফোন , নামার পরে ফোন
শহরে পৌঁছে ফোন, বাড়িতে পৌঁছে ফোন।
রোজ একই কথা, একই খবরাখবর
তবু তাঁর ক্লান্তি নেই, রাগ বা ক্ষোভ নেই
আমার সচেতন উপেক্ষায়।
ছুটিছাটায় কাছে গিয়ে বসা হয়নি কতকাল।
যখন ছোট ছিলাম, চাইতাম মা সর্বদা সাথে থাকুক।
মা কাজে বেরিয়ে গেলে খালি খালি লাগতো
ফিরে এলে মোটেই মা‘র গা ঘেঁষে বসে থাকতাম না
সারা বাড়িতে নেচে বেড়াতাম।
মা যে আছে, সেটাই ছিল সব চে‘ বড় স্বস্তি!
আজ আর ফোন আসেনা।
ফ্লাইটে ওঠার আগে কাউকে বলার নেই, মা, আসি!
শহরে ফিরেও কাউকে জানাতে হয়না,
মা, আমি এসে গেছি!
কাজের মাঝে কখনো ভুল করেও ফোনের ওপারে
কেউ বলেনা, খেয়েছিস, বাবু?
আশ্চর্য এক সময়ের নাগরদোলায় আমরা ঘুরছি।
মায়ের ভূমিকায় এখন আমি।
সেল ফোন তুলে মেয়েকে হয়তো অসময়ে কল করে বসি।
আমার কল নিরুত্তর থাকে।
আমি আমার নিজের সেই দিনগুলোর কথা ভেবে
ফোন রেখে দিই।
অপেক্ষা করি আমার আত্মজার গলা শোনার জন্যে।
হয়তো, এমনি অপেক্ষাতেই বসে থাকতেন আমার মা!
Be First to Comment