সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : কলকাতা, ৪ জানুয়ারি, ২০২২। পাঁচালি আর যাত্রাপালার হাত ধরে বাঙালি নাটককে ভালোবেসেছিল সেই ঔপনিবেশিক আমলের থেকে।bকেন্দ্রবিন্দু ছিল অবশ্যই জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। যোগ্য সহযোগী ছিল কোলকাতার নব্য বুদ্ধিজীবী বাবু সম্প্রদায় ও ডিরজিওর ছাত্র সম্প্রদায় ইয়ং বেঙ্গল । ১৮৫৪ সালের কুলীন সর্বস্ব নাটক দিয়ে যার পথচলা শুরু, তার রেশ আজও টেনে নিয়ে চলেছেন নাটকপ্রিয় বাঙালি। পাশাপাশি রুশ নাগরিক গেরাসিম স্তেপানভিচ লেভেদভ বাংলায় এসেছিলেন নেহাতই ভ্রমণবিদ হিসেবে। জনৈক গোকুল নাথ দাসের কাছে বাংলা শিখে বাংলা ভাষার প্রেমে পড়ে গেলেন। বাংলা ভাষায় দুটি বিদেশি নাটকের অনুবাদ করে মঞ্চস্থ করলেন। ২৫, ডোম পাড়া লেনের বেঙ্গলি থিয়েটার শুরু হলো।
এরপর স্টার,মিনার্ভা, শ্রীরঙ্গম পেরিয়ে কত থিয়েটার হল। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক নাটক এলো নবান্নের হাত ধরে।
এরপর শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্ত, অজিতেশ, রুদ্রপ্রসাদ , বিভাস প্রতিভায় বাংলা নাটক পরিণত হয়েছে স্বকীয়তায়। ডিজিট্যাল দুনিয়ার আগ্রাসনে বাংলা নাটক কিছুটা পিছিয়ে গেলেও আম বাঙালির মনে নাটকের এক স্থান আছে। তাই বুঝি গ্রামের নাটক প্রিয় বেকার ছেলেমেয়ে হাত খরচের পয়সা বাঁচিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করার খরচ মেটায়।
আর্থিক দুর্বল নাট্যপ্রেমীদের প্রয়োজন মেটাতে কলকাতার কাছেই দমদম নাগেরবাজার এলাকায় একটি বাড়ির ছাদে ৫০ দর্শক আসনের নাট্যমঞ্চ থিয়ে এপেক্স গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি নহলী নাট্য দলের উদ্যোগে এই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হলো সপ্তম অন্তরঙ্গ নাট্যোৎসব। দুদিনব্যাপী উৎসবে নহলী, নাট্য প্রহরী, অন্তর্মুখ, মেঘমুলুকে, কথক পারফর্মিং রেপার্টয়ার ও ক্যান্ডিড থিয়েটার এই ছ’টি দলের ছ’টি প্রযোজনা পরিবেশিত হয়। নাটকগুলি হলো অন্ধ কারায়, শুভদৃষ্টি ফুলসজ্জা, হালুম, মধুবংশীর গলি, খুড়ি মা ও চিৎ।
উৎসবের শুভ সূচনা করেন বিশিষ্ট নাট্য পরিচালক, অভিনেতা সৌমিত্র বসু, নাট্য সমালোচক তমাল মুখার্জি, থিয়ে এপেক্স এর কর্ণধার দেবাশিস দত্ত প্রমুখ। উৎসবের দ্বিতীয়দিনে হাজির ছিলেন নাট্য সমালোচক অভীক ভট্টাচার্য। উৎসবে নাটক শুরুর আগে করোনা পরিস্থিতিতে, নাটকের আঙ্গিক , দর্শকদের চাহিদা ও নাট্য প্রযোজনার ক্ষেত্রে আর্থিক অনটন নিয়ে আড্ডা হয়। সীমিত আঙ্গিকে হলেও আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার আরকে জারিত বাঙালির নাট্যপ্রেম দেখে বলাই যায় ‘আছে আছে প্রাণ আছে।’
Be First to Comment