Press "Enter" to skip to content

নবারুণ ভট্টাচার্য যাকে বলা যায় আগাগোড়া বিপ্লবী কবি। যার কবিতায় উঠে এসেছে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকাঠামোর সমালোচনা….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ ন বা রু ণ ভ ট্টা চা র্য

“যে পিতা সন্তানের লাশ শনাক্ত করতে ভয় পায়
আমি তাকে ঘৃণা করি-
যে ভাই এখনও নির্লজ্জ স্বাভাবিক হয়ে আছে
আমি তাকে ঘৃণা করি-
যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী
প্রকাশ্য পথে এই হত্যার প্রতিশোধ চায় না
আমি তাকে ঘৃণা করি-”

[ নবারুণ ভট্টাচার্য ]

বাবলু ভট্টাচার্য : নবারুণ ভট্টাচার্য। যাকে বলা যায় আগাগোড়া বিপ্লবী কবি। যার কবিতায় উঠে এসেছে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকাঠামোর সমালোচনা। তিনি লিখেছেন রাষ্ট্রের আসল সত্তা মানে, সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, কারাগার এবং বলপূর্বক অন্যের ইচ্ছেকে আয়ত্তে আনার অন্যান্য উপায়।

‘যে পিতা তার সন্তানের লাশকে শনাক্ত করতে ভয় পায়, আমি তাকে ঘৃণা করি’— বলার মধ্য দিয়ে কবি আসলে আমাদের সামনে খুলে দিয়েছিলেন ঘৃণার চেয়েও অবর্ণনীয় দুঃসহ একসময়ের দরজা— যে সময় এত অবরুদ্ধ, এত দুঃশাসনীয় যে পিতা পর্যন্ত ভীত হয়ে পড়েন তার সন্তানকে শনাক্ত করতে।

নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা সে কবিতা আমাদের বাংলাদেশে হয়ে উঠেছিল সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে পঠিত অন্যতম প্রতিবাদী কবিতা।

সেটা আশির দশক। আমাদের তখন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের দশক। কবিতা পড়ার দশক। কবিতা শোনার দশক। তখন তিনি, অর্থাৎ নবারুণ ভট্টাচার্য, কী ভীষণ আবেগ ও প্রতিজ্ঞার জন্ম দিয়েছিলেন ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’— লেখার মধ্য দিয়ে। নবারুণ আমাদের মনে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন তাঁর সশব্দ পঙ্‌ক্তিমালার মধ্য দিয়ে।

বিজন ভট্টাচার্য ও মহাশ্বেতা দেবীর একমাত্র সন্তান নবারুণ ভট্টাচার্য। পড়াশোনা করেছেন কলকাতার বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল এবং আশুতোষ কলেজে প্রথমে ভূতত্ত্ব নিয়ে। পরে সিটি কলেজে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে।

১৯৭৩ সালে একটি বিদেশি সংস্থায় যোগদান করে ১৯৯১ পর্যন্ত সেখানে চাকরি করেন। কিছুদিন বিষ্ণু দে-র ‘সাহিত্যপত্র’ সম্পাদনা করেন এবং ২০০৩ থেকে চালাচ্ছেন ‘ভাষাবন্ধন’ পত্রিকাটি। এর আগে দীর্ঘদিন ‘নবান্ন’ নাট্যগোষ্ঠী পরিচালনা করেছেন।

কথাসাহিত্যে নবারুণ আলোচনার পাদপ্রদীপে চলে আসেন ১৯৯৩ সালের প্রথমদিকে ‘হারবার্ট’ উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রকাশের পর। ১৯৯৬ সালের দিকে নবারুণের উপন্যাস ‘হারবার্ট’ সম্পর্কে কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর এক লেখায় মন্তব্য করেছিলেন, গত পাঁচ বছরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপন্যাস।

লেখক হিসেবে তিনি আসলে রেসপন্স করেছেন সত্তর দশকের, তাঁর চোখের সামনে দেখা নকশাল আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের। তাঁর সেই রেসপন্স আবার প্রভাবিত করেছে আশি ও নব্বইয়ের দশকের পাঠক ও সংস্কৃতিকর্মীদের।

প্রথম উপন্যাস ‘হারবার্ট’ এর জন্য নবারুণ নরসিংহ দাস (৯৪), বঙ্কিম (৯৬) ও সাহিত্য আকাদেমি (৯৭) পুরস্কার লাভ করেছেন। এই উপন্যাসকে ভিত্তি করে পরে নাটক ও সিনেমাও তৈরি হয়েছে।

নবারুণ ভট্টাচার্যের অন্যান্য রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য : ‘কাঙাল মালসাট’, ‘লুব্ধক’, ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’, ‘হালালঝান্ডা ও অন্যান্য’, ‘মহাজনের আয়না’, ‘ফ্যাতাড়ু’, ‘রাতের সার্কাস’ এবং ‘আনাড়ির নারীজ্ঞান’।

জুলাই ৩১, ২০১৪ সালে আন্ত্রিক ক্যান্সারের কারণে তিনি কলকাতায় ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, ৬৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

নবারুণ ভট্টাচার্য ১৯৪৮ সালের আজকের দিনে (২৩ জুন) মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *